সকল মেনু

লাইফ সাপোর্টে দেশের অর্থনীতি উদ্যোক্তাদের বুকে রক্তক্ষরণ

ঢাকা, ২৫ ডিসেম্বর: চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় ভেঙে পড়েছে অর্থনীতির সব স্তর। গত কয়েক মাসের অস্থিরতা অর্থনীতির বুকে পেরেক ঠুকে দিয়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে কাঁচামাল সরবরাহ ও উৎপাদন কার্যক্রম।

পরিস্থিতির উন্নতির আভাস না পাওয়ায় বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক কার্যক্রমে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। ফলে উদ্যোক্তাদের বুকে রক্তক্ষরণ চলছে বলে দাবি করছেন ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের তথ্যমতে, চলতি বছরে (২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত) হরতাল ও অবরোধ হয়েছে ৬৫ দিন। তাতে সব খাত মিলিয়ে এক লাখ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে। অন্যদিকে দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতির পরিমাণ এর চেয়ে কম হবে না বলে মনে করছেন সংগঠনটির গবেষণা বিভাগের কর্মকর্তারা।

বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলমান অস্থিরতায় অর্থনীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত সবাই ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়ছে রফতানিমুখী শিল্প। চলমান অস্থিতিশীলতায় ব্যাহত হচ্ছে এর উৎপাদন। আর যেটুকু উৎপাদন হচ্ছে, পরিবহন সংকটে তাও সময়মতো পৌঁছানো যাচ্ছে না বন্দরে । ফলে আকাশপথে পরিবহনের জন্য অতিরিক্ত খরচ করতে হচ্ছে পোশাকশিল্প মালিকদের।

পোশাকশিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর তথ্যমতে, চলতি বছরের ১ থেকে ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩০টি গার্মেন্টসে বাতিল হয়েছে ৩৫ লাখ ২৫ হাজার ৫১৭ মার্কিন ডলারের অর্ডার। এতে ডিসকাউন্টজনিত ক্ষতি ১৬ লাখ ২৮ হাজার ৪২৪ মার্কিন ডলার।

এ ছাড়া এয়ার ফ্রেইটে ১১ লাখ ৪৮ হাজার, শিপমেন্ট ডিলেতে প্রায় ৭৬ লাখ ৮৫ হাজার এবং সহিংসতায় প্রায় ২২ লাখ ৮৩ হাজার মার্কিন ডলার ক্ষতি হয়েছে। আর অতিরিক্ত পরিবহন ব্যয় হয়েছে ৮৭ হাজার ৪৬০ মার্কিন ডলার।

বিদেশি ক্রেতাদের অর্ডার কমে যাচ্ছে দাবি করে বিজিএমইএর সভাপতি মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, শুধু গার্মেন্টস নয়, সংশ্লিষ্ট সব খাতেই পড়েছে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার প্রভাব। রফতানিমুখী বস্ত্র ও তৈরি পোশাকশিল্প কোনো কারণে অস্তিত্ব হারালে দেশের বিশাল জনগোষ্ঠী কর্মহীন হয়ে পড়বে, যার ভার গ্রহণের সামর্থ্য এই অর্থনীতির নেই। যে সরকারই ক্ষমতায় থাকুক না কেন, তাদের পক্ষে এ সংকট কাটিয়ে ওঠা কঠিন হবে।

দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, চলমান পরিস্থিতিতে সামগ্রিক অর্থনীতি লাইফ সাপোর্টে বেঁচে আছে। অর্থনীতি যদি না বাঁচে দেশে আবারও দুর্ভিক্ষ দেখা দেবে। আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান থেকে সরে আসবে। একই সঙ্গে ব্যাপক ইমেজ সংকটে পড়বে বাংলাদেশ বলে মনে করেন তারা।

এ প্রসঙ্গে কথা হয় এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্যের চাকা যদি না-ই ঘোরে তাহলে প্রধানমন্ত্রী বা বিরোধীদলীয় নেতা হয়ে কোনো লাভ নেই। কারণ, ব্যবসা-বাণিজ্য ছাড়া দেশ চালানো সম্ভব না।

এদিকে ব্যবসায়ীদের লাইফ সাপোর্টের মেডিসিন হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক নানা সুবিধা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। সোমবার জরুরি ব্যাংকার্স সভায় চলমান অস্থিরতায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের বিশেষ সুবিধা দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানায় বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যবসায়ীদের ঋণ পুনঃ তফসিলীকরণ, শ্রেণীকরণের সময়সীমা বাড়ানো এবং সুদের হার কমানো হবে, যাতে তারা চলমান সংকট কাটিয়ে উঠতে পারেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top