সকল মেনু

ইমাম মাহাদীর সৈনিক এই সেই ফারুক

 নিজস্ব প্রতিবেদক,ঢাকা, ২১ ডিসেম্বর:  শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর গোপীবাগের রামকৃষ্ণ মিশন রোডের একটি বাড়িতে আততায়ীদের হাতে নৃশংসভাবে খুন হওয়া লুৎফর রহমান ফারুক (৬০) কে নিয়ে ডিবি পুলিশ চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে। পাওয়া গেছে তার পরিচয়।

টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থেকে চুরির দায়ে এলাকাছাড়া হওয়া ফারুক ঢাকায় এসে নিজেকে ইমাম মাহাদীর সৈনিক দাবি করে আধ্যাত্মিক গুরু হিসেবে প্রতিষ্টার চেষ্টা চালায়। তার সে চেষ্টা যে কিছুটা সফল হয়েছিল তা বুঝা যায় তার বাড়িতে নিত্য আসা দর্শনার্থীদের পরিমাণ। গোপীবাগে ফারুকের প্রতিবেশীরা জানান, প্রায় প্রতিদিনই সন্ধ্যার পর নানা রকম মানুষ আসত ফারুকের কাছে। এই আসা যাওয়া চলত মধ্যরাত অবধি।

যেভাবে পীর হলেন চোর ফারুক

লুৎফর রহমান ফারুকের জন্ম টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলায়। ১৯৯৯ সালে চুরির দায়ে গ্রাম্য সালিশের বিচারের রায়ে তাকে এলাকা থেকে বিতাড়িত করা হয়। চোর ফারুক এবার পাড়ি জমায় রাজধানী ঢাকাতে। সে তার আবাস গড়ে সূত্রাপুর থানাধীন ওয়ারি এলাকায় (ওয়ারি তখনও থানা ঘোষিত হয়নি)। সেখানে ফারুক নিজেকে একজন পীর আলেম বুজুর্গ হিসেবে পরিচিত করে তোলে। ধর্ম-কর্মের নামে ভন্ডামীর আড়ালেই বাড়তে থাকে ফারুকের মুরিদ। ধর্মান্ধ মানুষের বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে রাতারাতি তার আর্থিক অবস্থাও বদলে যায়। এক পর্যায়ে সে নিজেকে হজরত ইমাম মাহাদীর সৈনিক বলে দাবি করে। আর তখনই আলোচনার পাশাপাশি এলাকায় তাকে নিয়ে শুরু হয় সমালোচনাও।

তবে পরিস্থিতি তখন পর্যন্ত ফারুকের নিয়ন্ত্রণেই ছিল। কিন্তু মুসলমানদের কাছে সর্বোচ্চ সম্মানীত মহানবী হজরত মুহাম্মদ (স.)কে নিয়ে কটুক্তি করার জন্য ২০০৪ সালে গণপিটুনির শিকার হয় সে। এসময় ক্ষিপ্ত জনতা ফারুককে সূত্রাপুর থানায় সোপর্দ করে। এই ঘটনাটি তখন বেশ কিছু জাতীয় গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রকাশ হয়েছিল।
কোন এক মুরিদের চেষ্টায় জেল থেকে জামিন পান ফারুক। শোধনাগারের স্পর্শ পেলেও নিজেকে শোধরানোর কোন ইচ্ছেই ছিল না তার মধ্যে। তাই ওয়ান ইলেভেনের সময়ে আবারও একই এলাকায় একই কারণে (মহানবীকে কটুক্তি) গণপিটুনির শিকার হন। জেলেও গিয়েছেন দ্বিতীয়বারের মত। এই ঘটনাটিও আলোচিত হয়েছিল গণমাধ্যমে।

এলাকায় তার সমালোচনা বেড়ে যাওয়ায় এবং তার মতাদর্শীদের ঘোর বিরোধীতার মুখে পরিবারসহ গত তিন মাস আগে বাসা বদল করে গোপীবাগের ৬৪/৬ নম্বর বাসার দুই তলায় উঠেন।

প্রতিবেশিরা জানিয়েছেন, এলাকায় এসেই নিজেকে পীর হিসেবে সবার কাছে পরিচয় দিয়েছেন ফারুক। এলাকাবাসীরা তার কাছে খুব একটা না ঘেঁষলেও প্রায় প্রতিদিনই অসংখ্য মানুষ ফারুকের বাসায় আসা যাওয়া করত।

ভন্ডামীই কি খুনের কারণ?

অস্ত্রধারী আততায়ীদের হাতে খুন হওয়া কথিত পীর ফারুককে নিয়ে এই তথ্যের সাথে একমত প্রকাশ করেছেন র‍্যাবের অতিঃ মহাপরিচালক লেঃ কর্ণেল জিয়াউল হাসান।

ফারুকের এই ভন্ডামীর জন্য তাকে খুন করা হয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে জিয়াউল আহাসান সাংবাদিকদের বলেন, নিশ্চিত করে এখনই এ ব্যাপারে কিছু বলা সম্ভব নয়। আসল ঘটনা জানতে তদন্ত রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। তবে ফারুকের এইসব কাজকর্ম থেকে ধারণা করা যেতেই পারে, ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি আর ভন্ডামীর কারণেও খুন হতে পারে সে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top