সকল মেনু

গোপীবাগের আয়না কাহিনী; গোপীবাগের আয়না নামের বাড়ির নেমপ্লেট

 নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা, ২২ ডিসেম্বর:  সিমসাম একটি পুরনো লাল বাড়ি। ভিতরের রুমগুলো অনেক বড়-সড়। চারতলা সম্বলিত বাড়ি।

তারই দুই তলার ফ্ল্যাট। যেখানে রয়েছে ছোট-বড় প্রায় ১১ টি রুম। ফার্নিচারে ভরপুর প্রতিটি রুম। খাট পালঙ্ক, টিভি, সোফা, কম্পিউটারসহ রয়েছে অনেক দামি দামি আসবাপত্র। আরো রয়েছে ল্যাপটপ ও এলসিডি টিভি। সব মিলে মনে হয়েছে পুরো বাসাটি একটি স্বপ্নময় স্বর্গরাজ্য। প্রায় আড়াই হাজার বর্গফুট আয়তনের এই বাসাতে শুধু ২টি ফ্রিজ, ২টি এলসিডি ও ১টি সিআরটি টেলিভিশন রয়েছে।

পাঠক হয়তো ভাবছেন এতসব বর্ণনা কিসের? হ্যাঁ, এই স্বর্গরাজ্যই গড়ে তুলেছিলেন তিনি গত তিন মাস পূর্বে আসা রামকৃঞ্চ মিশন রোডের ৬৪/৪ নম্বর ‘আয়না’ নামের বাড়িটিতে। মানুষটির নাম লুৎফর রহমান ফারুক। বয়স আনুমানিক ৬০ বছর। দুই ছেলে, দুই মেয়ে ও স্ত্রী নিয়ে তার সংসার। সাথে যোগ হয়েছে বড় ছেলের বউ বিথী (২৫)।

বড় ছেলে সারোয়ারুল ইসলাম ফারুক সিটি ব্যাংকে চাকরি আর ছোট ছেলে আব্দুল্লাহ আল ফারুক মার্কেটিং অফিসার হিসেবে কাজ করেন আবুল খায়ের সিরামিকে। স্ত্রী সালমা বেগম হজ্জ করার পর এখন বাসাতে থাকলেও এর আগে কেয়ার বাংলাদেশ এ চাকরি করেছেন।

জানা যায়, ১৯৯৯ সালের দিকে লুৎফর রহমান ফারুক প্রথম গ্রাম ছাড়া হয়ে ঢাকা এসে নিজেকে আধ্যাতিক জগতের পীর হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। তার স্ত্রীসহ হ্জ্জ করে আসার পর শোনা যায় ফারুক সাহেব নাকি স্বপ্নে ইমাম মাহাদীর সেনাপতি হয়েছিলেন। সেই থেকে তিনি নিজেকে ইমাম মাহাদীর প্রধান সেনাপতি হিসেবে পরিচয় দিতেন।

সুত্রমতে, ২০০৪ সালে সুত্রাপুর থানাধীন ওয়ারী এলাকায় ভন্ডামি করার জন্য এলাকাবাসি তাকে গণপিটুনি দিয়ে থানায় সোপর্দ করেন। প্রায় এক বছর হাজত খাটার পর জামিনে বেরিয়ে আসেন। আবার শুরু হয় সেই পুরনো ব্যবসা। নিজেকে আরো বড় পীর হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। হাতিয়ে নিতে থাকে মানুষের টাকা-পয়সা সোনা-দানাসহ আরো অনেক কিছু। আস্তানা সরিয়ে ফেলে অন্যত্র।

সুত্র জানায়, ২০০৭ সালে ১/১১ পর তার কু-কর্মের জন্য এলাকাবাসি তাকে পুনরায় গণপিটুনি দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। জানা যায়, তার এক মুরিদের সুন্দরী বউকে নানা ছলে ধর্ষণ করে সে। পরে সেই মহিলা আত্তহত্যা করেছিলেন।

এই ঘটনায় ২০১২ সালের ৯ নভেম্বর  যাত্রাবাড়ি এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কিছুদিন জেল খাটার পর তিনি জামিনে বের হন। এরপর একের পর এক আস্তানা পরিবর্তন করতে থাকেন ছদ্মবেশি এই ভন্ড পীর।

জানা যায়, এই পীর নারীদের যৌন হয়রানিসহ আরো অনেক বাজে কাজ করে বেড়াতো। ডিবি পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, উদ্ধার করা তার কম্পিউটার থেকে অনেক খারাপ ছবি পাওয়া গেছে।

২০১৩ সাল ২১ ডিসেম্বর হলো তার কাল। নিজে মরলো, সাথে নিল নিজের ছেলেসহ আরো অনেককে। হাত-পা বাঁধা, মুখে কসটেপ মারা অবস্থায় একেবারে জবাই করে নিশংসভাবে তাদের হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। পড়ে থাকলো সবার নিথর দেহ। রক্তে ভেসে গেল শরীর, বিছানা আর রুমের মেঝে।

পুলিশ বলছে এটা একটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। মাঠে কাজ করছে র্যাব, পুলিশ ও একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। পরিবারের তথ্যমতে প্রায় দুই ভরি স্বর্ণ ও পীরের ব্রিফকেস ভেঙ্গে নগদ টাকা নিয়ে গেছে মাতালাবস্থায় খুন করা পেশাদার খুনীরা।

ওয়ারী জোন পুলিশের এডিসি সবশেষ রাত পৌনে তিনটার দিকে সাংবাদিকদের জানান, সবধরণের আলামত নিয়ে তদন্ত কাজ শুরু হয়েছে। যেহেতু খুনিরা ঠান্ডা মাথায় খুন করে পালিয়ে গেছে তাই খুবই গুরুত্ব দিয়ে এ মামলার তদন্ত কাজ সামনের দিকে এগিয়ে যাবে।

কালের সাক্ষী হয়ে থাকলো এই লাল বাড়িটি। বাড়ির নাম আয়না বলেই ভন্ড পীর ফারুকের গল্পের নামকরণ ‘আয়না কাহিনী’ করাই যেতে পারে। আর ‘আয়না কাহিনী’র জন্যই বাড়িটিকে নতুন করে চিনবে এলাকার লোক। যে বাড়ির দ্বিতীয় তলায় দরজা দিয়ে ঢুকেই বায়ে একটি রুমে পাওয়া গিয়েছে ২ জন ও পাশের রুমে ৪জনের জবাই করা লাশ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top