সকল মেনু

জামায়াত রগ কাটা ছেড়ে হত্যাকান্ডে নেমেছে : ইকোনমিস্ট

 ডেস্ক রিপোর্ট, ঢাকা, ২০ ডিসেম্বর:  টিকে থাকার লড়াইয়ে হাত-পায়ের রগ কাটা ছেড়ে এখন সরাসরি হত্যাকান্ডে নেমেছে জামায়াতে ইসলাম, বাংলাদেশ। আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও সরাসরি গুলি চালিয়ে এর জবাব দিচ্ছে।

প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক ম্যাগাজিন ‘ইকোনমিস্ট’ বৃহস্পতিবার ‘দ্য রুলিং পার্টি উইল উইন বাংলাদেদেশ ইলেকশন, দ্য কান্ট্রি উইল লুজ (ক্ষমতাসীন দল জয়ী হলেও হেরে যাবে বাংলাদেশ)’- শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এই তথ্য প্রকাশ করেছে।

‘ইকোনমিস্ট’ পত্রিকার ২১ ডিসেম্বর প্রকাশিতব্য সংখ্যার এই প্রতিবেদনটি এরই মধ্যে অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, “প্রধান বিরোধী দল ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন করছে। সুতরাং এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয় নিশ্চিত। তবে বৈধতার প্রশ্ন থেকে যাবে। তাই ক্ষমতাসীন দল জয়ী হলেও মূলত হেরে যাবে বাংলাদেশ”

জামায়াত নেতাদের ফাঁসির প্রসঙ্গ টেনে পত্রিকাটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “জামায়াতের সব নেতার ফাঁসি কার্যকর করতে শেখ হাসিনা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন ও আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি শেখ হাসিনাকে ফাঁসি কার্যকর না করতে অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু শেখ হাসিনা তাদের অনুরোধ রাখেননি।”

রিপোর্টে সেনা-অভ্যুত্থানের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অধিকাংশ জনগণ এখনো আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিকল্প হিসেবে কাউকে খুঁজে পাচ্ছে না।

বাংলাদেশের অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক সহিংসতায় এ পর্যন্ত শতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। সর্বশেষ প্রাণহানির ঘটনা ঘটে ১২ ডিসেম্বর জামায়াতে ইসলামীর নেতা আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর হওয়ার পর।

আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল ১৯৭১ সালে রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধ করার দায়ে তাঁকে সাজা দেন। সে বছর যুদ্ধ শেষে ১৬ ডিসেম্বরে বাংলাদেশ বিজয় লাভ করেছিল। মনে করা হচ্ছিল, স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে আর রক্তপাত হবে না। কিন্তু সেই আশার গুড়েবালি।

শেখ হাসিনার সরকার দেশের একটা বড় অংশের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছে। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি রাজপথে নেমেছে। একের পর এক হরতাল-অবরোধের ঘোষণা দিচ্ছে দলটি। দেশের পরিবহন-ব্যবস্থা ও অর্থনীতি পঙ্গু হতে বসেছে। বিএনপির প্রধান মিত্র জামায়াত টিকে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।

জামায়াতের শক্ত ঘাঁটি ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকা সাতক্ষীরা জেলায় ১৬ ডিসেম্বরে জামায়াতের পাঁচজন কর্মীকে হত্যা করা হয়। পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে সংখ্যালঘু হিন্দুদের মালিকানাধীন দোকান ও বাড়িঘরে আগুন জ্বালিয়ে দেয় জামায়াতের তরুণ কর্মী দল (ছাত্রশিবির)। স্থানীয় আওয়ামী লীগের লোকজন পালিয়ে রাজধানী ঢাকায় চলে গেছে বলে দাবি করা হয়েছে ইকোনোমিস্টের প্রতিবেদনে।

আগামী দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৪টিতে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে না। বিএনপি ও এর জোটের অন্য ছোট ১৭ দল নির্বাচন বয়কট করেছে। নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ায় সাবেক স্বৈরশাসক ও দেশের তৃতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের প্রধান এইচ এম এরশাদকে হাসপাতালে আটকে রেখেছে সরকার। সংবিধানের সঙ্গে গঠনতন্ত্র সাংঘর্ষিক হওয়ায় আরেক বড় দল জামায়াতকে নির্বাচনে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

আর যা-ই হোক, আওয়ামী লীগ জিততে চলেছে। ৫ জানুয়ারি যা-ই ঘটুক না কেন, সরকার গঠন ও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার জন্য যথেষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাচ্ছেন শেখ হাসিনা। দেশ ও দেশের বাইরে এর বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। নির্বাচনের দিক পরিবর্তনে বাংলাদেশকে কেবল প্রভাবিত করতে পারে বৃহৎ প্রতিবেশী দেশ ভারত। কিন্তু বাংলাদেশ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটি।

ভারত যদি ‘ফল নির্ধারণপূর্বক আয়োজিত নির্বাচনের’ (প্রেসিডেন্ট এরশাদ ১৯৮০-র দশকে এ ধরনের নির্বাচনের চল করেন) প্রতি পরোক্ষ সমর্থনও দেয়, তবে তা দেশটির জন্য অদূরদর্শিতা বলে পরিগণিত হবে। বাংলাদেশে ইতিমধ্যে ভারতবিরোধী চেতনা তুঙ্গে উঠেছে।

সংঘাতময় পরিস্থিতি যত খারাপ হচ্ছে, ভারতের মিত্র আওয়ামী লীগকে ইসলামবিরোধী হিসেবে দেখানোর সম্ভাবনাও তত বাড়ছে। শেখ হাসিনার ক্ষমতা কুক্ষিগত করাকে সমর্থন করলে তা ভারতের জন্য উল্টো ফল বয়ে আনতে পারে। তা হবে ‘অপেক্ষাকৃত উগ্র ও কম সেক্যুলার বাংলাদেশ’।

এ পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীও হস্তক্ষেপ করতে রাজি নয়। গেল বার খালেদা জিয়া যখন নির্বাচনের ফল ছিনতাইয়ের ফন্দি করছিলেন, তখন ২০০৭ সালের জানুয়ারিতে একটি অনির্বাচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা দখল করে দুই বছর দেশ শাসন করেছিল। ওই সরকারের প্রতি সেনাবাহিনীর যে ধরনের সমর্থন ছিল, তা এবার নেই। এমনকি যেসব বিদেশি শক্তি তখনকার অভ্যুত্থানকে সমর্থন করেছিল, তারাও এবার সমর্থন দিতে অনিচ্ছুক।

এসবের অর্থ হলো, সংঘর্ষ আরও কয়েক মাস চলবে। আওয়ামী লীগের কিছু রাজনীতিকও স্বীকার করছেন, একটা সুষ্ঠু নির্বাচন হতে হবে।

জনমত জরিপ বলছে, মাত্র ৩০ শতাংশ বাংলাদেশি চায় সেনাবাহিনী ক্ষমতায় আসুক। আর যদি সেনাবাহিনী দায়িত্ব নিয়ে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করেও, তবু মাত্র এক-তৃতীয়াংশ মানুষ ‘যুদ্ধমান বেগমদ্বয়কে’ (খালেদা-হাসিনা) রাজনীতি থেকে নির্বাসনের পক্ষপাতী। দেশ চালাতে তাঁরা যত ব্যর্থই হোক, তাদের বিকল্প নেই বাংলাদেশিদের কাছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top