সকল মেনু

রাজনৈতিক অস্থিরতায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

 ক্যাম্পাস প্রতিবেদক, জবি, ১৭ ডিসেম্বর: রাজনৈতিক অস্থিরতায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। সরকারবিরোধী আন্দোলনে মশগুল বিএনপি-জামায়াত-হেফাজতে ইসলামসহ বিভিন্ন সংগঠনের কর্মসূচির কারণে ভয়াবহ সেশনজটের কবলে পড়ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ২৩ হাজার শিক্ষার্থী।

গত এক মাস যাবত রাজনৈতিক দলে বিভিন্ন কর্মসূচির কারণে ক্লাস ও পরীক্ষা হচ্ছে না। কোনো কোনো বিভাগে কর্মচারী-শিক্ষকসহ কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ে আসছে না। দিনের পর দিন বিভিন্ন বিভাগের গেটে তালা ঝুলছে। ফলে ক্যাম্পাসে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমসহ সব ক্ষেত্রে এক ধরনের স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।

এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে বিরাজ করছে চরম ক্ষোভ ও হতাশা। শিক্ষার্থীরা সাপ্তাহিক ছুটি বাতিল করে শুক্রবার ও শনিবার ক্লাস নেয়ার দাবি জানিয়ে ভিসির কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, জগন্নাথে কোনো আবাসিক হল নেই। আমাদের সদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ক্লাস ও পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হয় না।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, অক্টোবর মাসে সাপ্তাহিক ছুটি ৮ দিন, ঈদের ১০ দিন ও হরতালের ৩ দিনসহ বিশ্ববিদ্যালয় ২৪ দিন বন্ধ ছিল।

নভেম্বর মাসে তেমন বড় কোনো ছুটি না থাকলেও সারা মাসে মাত্র ৮ দিন ক্লাস হয়। ৭ দিনের হরতাল, ৫ দিনের অবরোধ ও সাপ্তাহিক ছুটিতে ২৪ দিন কোনো ক্লাস হয়নি। চলতি ডিসেম্বর মাসে একদিনও ক্লাস ও পরীক্ষা হয়নি। এছাড়াও আবার কিছু বিভাগের কয়েকবার পরীক্ষা রুটিন দিয়ে পরে তা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে।

সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সালের জুলাই মাসে সপ্তাহের শুক্রবার ও শনিবার ক্যাম্পাস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। এ কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ছুটিসহ বছরে ৩৬৫ দিনের মধ্যে ১৫৬ দিন ক্লাস বন্ধ থাকে। বর্তমানে দেশের রাজনৈতিক দলের র্কমসূচির কারণে এখন অনির্ধারিত বন্ধ থাকছে। এতে করে ভয়াবহ সেশনজাটের কবলে পড়ছে শিক্ষার্থীরা।

জানা যায়, হরতাল কারণে কিছু বিভাগ শুক্রবারও ফাইনাল পরীক্ষা নিয়েছে। আবার কতগুলো বিভাগ পরীক্ষার রুটিন দিয়ে পরেও প্রত্যাহার করে নিয়েছে।

গণিত, ব্যবসায় শিক্ষা, ইসলামের ইতিহাস, মনোবিজ্ঞান, ভূগোল, মার্কেটিংসহ বেশ কয়েকটি বিভাগ চলতি মাসে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার ছিল। হরতাল-অবরোধের কারণে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে না।

ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের এই পর্যন্ত তিনবার মাস্টাসের ফাইনাল পরীক্ষার রুটিন দেয়। কিন্তু হরতালের কারণে পরীক্ষা স্থগিত করতে বাধ্য হন।

এই বিভাগের শিক্ষার্থী ইকবাল ও হৃদয় জানান, অনার্স শেষ হয়েছে প্রায় ১০ মাস হলো। কিন্তু তারা মাস্টার্স এক সেমিস্টার পরীক্ষা দিতে পারেননি।

ওই বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক মিন্টু আলী বিশ্বাস বলেন, মাস্টার্সের প্রথম সেমিস্টার পরীক্ষা নেওয়ার জন্য আমরা রুটিন দিয়েছিলাম। কিন্তু অবরোধের কারণে তা বাতিল করতে বাধ্য হই।

সেশনজট কমাতে গত ৪ এপ্রিল শনিবার ক্লাস ও পরীক্ষা নেয়ার দাবি জানিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেন। আন্দোলনের মুখে প্রশাসন শনিবার খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেয়।

কিন্তু তিন মাস পর গত ২৭ জুন আবারো শনিবার বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ফলে এ নিয়ে চরম হতাশা প্রকাশ করছেন শিক্ষার্থীরা।

২০০৫-০৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে সব কটি অনুষদের প্রত্যেকটি বিভাগে সেমিস্টার পদ্ধতি চালু করা হয়। ৪ বছরের অনার্স কোর্সকে মোট ৮টি সেমিস্টারে ভাগ করা হয়। প্রতি সেমিস্টারের জন্য ৬ মাসের সময়সীমা নির্ধারণ করে প্রতি বছরে ২টি সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। নানা কারণে ৫ বছরে কোর্স শেষ করতে ৬ থেকে ৭ বছর সময় লাগে। ফলে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন চাকরি পরীক্ষা অংশ নিতে পারছে না।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ভিসি প্রফেসর ড. মীজানুর রহমান রাইজিংবিডিকে বলেন, লাগাতার হরতাল- অবরোধ চলছে কিছু করার নেই। শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মচারী বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে পারছে না। কীভাবে আমরা শুক্রবার ও শনিবার ক্লাস ও পরীক্ষা নেব। এ নিয়ে আমি নিজেও উদ্বিগ্ন। তবে দেশের স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরে আসলে অতিরিক্ত ক্লাস নিয়ে ক্ষতি পূরণ করার চেষ্টা করব।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top