সকল মেনু

সহিংসতায় কেড়ে নিল দু’শিশুর প্রাণ

শাহ মোহাম্মদ মাকসুদুল আলম, চাঁদপুর:  চাঁদপুরে রাজনৈতিক কর্মকান্ডে শিশু-কিশোরদের ব্যবহার মারাত্নকভাবে বেড়ে চলছে। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সরকার বিরোধী আন্দোলনে শিশু-কিশোরদের সরব উপস্থিতি চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। দু’মাসের ব্যবধানে রাজনৈতিক কারণে চাঁদপুর জেলায় ৬ টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে দু’জনই শিশু। গত ২৮ অক্টোবর সকালে চাঁদপুর শহরের পুরাণবাজারে পুলিশ, আ’লীগ ও বিএনপি’র মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষ  বাঁধে। আর সেই সংঘর্ষে নিহত হয় কিশোর বল্টু। তার মা
জানিয়েছে, সে নদীতে গোসল করতে যাচ্ছিল। এমন সময় তার ছেলের মাথায় ইট এসে পড়ে। আর তাতেই সে মারা যায়।
তার মৃত্যুর পর জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল তাকে ছাত্রদলের কর্মী দাবি করে চাঁদপুরে একদিন হরতালও পালন করে। নিহত বল্টুর
বাবা একজন সাধারণ শ্রমিক। বল্টুও নিজে একটি জালের দোকানে কাজ করতো। গত ৩ নভেম্বর সকালে চাঁদপুর শহরের জেএমসেনগুপ্ত
রোডে পুলিশের সাথে বিএনপি-জামাত কর্মীদের সংঘর্ষে নিহত হয় চাঁদপুর শহরের ট্রাক রোড এলাকায় অবস্থিত আল আমিন মডেল মাদ্রাসার অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র সিয়াম(১৪)। সিয়াম চাঁদপুর শহরের ট্রাকরোডস্থ মুজিবুর রহমানের ছেলে। ছাত্রশিবির তাকে তাদের কর্মী বলে দাবি করে আসছে। জানা যায়, সকালে সিয়াম তার বন্ধুদের সাথে স্থানীয় বালুর মাঠে ক্রিকেট খেলছিল। শিবিরের এক নেতা যেয়ে ১০০ টাকা করে দিবে বলে তাকে ও তার দু’বন্ধুকে মিছিলে নিয়ে আসে। মিছিলে এসে এই কিশোরকে দিতে হল প্রাণ। কিন্তু শিবিরের সাবেক জেলা সভাপতি জানালেন, সিয়াম তাদের কর্মী। সে শিশু নয়। তার ব্রেক অব স্টাডি রয়েছে। চাঁদপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মাহবুব মোরশেদ জানান, পুলিশ সেদিন কোন গুলি করেনি। তারা টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট ছুঁড়েছে। সিয়াম মারা
গেছে ইটের আঘাতে। চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক ফয়সাল আহমেদ জানালেন, নিহতদের শরীরে রাবার বুলেটের আঘাত
যেমন রয়েছে, তেমনি ইট-পাথড়ের আঘাতও রয়েছে।এদিকে রাজনৈতিক সহিংসতায় দু’শিশুর প্রাণ যাবার পরও চাঁদপুরে থেমে নেই শিশুদের ব্যবহার। তারা নিয়মিতই মিছিল, পিকেটিং এবং সংঘর্ষে অংশ নিচ্ছে।এজন্য তাদের ৫০ থেকে ২০০ টাকা করে প্রদাণ করছে
রাজনৈতিক দলের নেতারা। এ বিষয়ে কথা হল চাঁদপুর জেলা বিএনপি’র সহ-সভাপতি মোঃ জসিমউদ্দিন খান বাবুলের
সাথে। তিনি বললেন, শিশুরা নাকি স্বতঃপ্রণোদিতভাবেই এই স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে ঘর থেকে বেরিয়ে আসছে।
চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ কামরুল ইসলামের সাথে আলাপকালে তিনিও শিশুদের রাজনৈতিক কর্মকান্ডে ব্যবহারের কথাটি স্বীকার করে জানালেন, জাতিসংঘ শিশু সনদ এবং দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি।
চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মোঃ ইসমাইল হোসেন জানালেন, তিনি এমপিওভুক্ত, রেজিষ্টার্ড এবং সরকারি সব বিদ্যালয় প্রধানদের নির্দেশ দিয়েছেন শিশু-কিশোররা যেন রাজনৈতিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহন করতে না পারে। তিনি বিষয়টিকে অত্যন্ত
দুঃখজনক হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, সামাজিকসচেতনতা না বাড়লে এবং নেতা-নেত্রীদের ভেতর বোধদয় না
জাগলে শুধুমাত্র আইনের প্রয়োগ করে এ ধরনের সমস্যারসমাধান সম্ভব নয়। রাজনৈতিক কর্মকান্ডে শিশুদের ব্যবহার বন্ধ করা হোক
এটাই এখন চাঁদপুরবাসীর দাবি। না হলে আরো অনেকবল্টু ও সিয়ামকে এভাবে অকালে ঝড়ে পড়তে হবে বলে
স্থানীয়দের ধারনা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top