সকল মেনু

সাতক্ষীরায় রাজনৈতিক সহিংসতায় ১০ মাসে নিহত ২৯

 মোজাফফর রহমান, সাতক্ষীরা, ১০ ডিসেম্বর:  রাজনৈতিক সহিংসতায় সাতক্ষীরায় হামলা, মামলা ও খুনের শিকার হচ্ছে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষ। রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে সাতক্ষীরায় জনমনে আতংক ও অস্থিরতা বিরাজ করছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। প্রতিদিনই বাড়ছে লাশের মিছিল। সর্বশেষ ৮ ডিসেম্বর নিহত হয়েছেন সাতক্ষীরা সদর উপজেলার আমতলা গ্রামের এজাহার আলী মোড়ল (৪৫)। ৫ ডিসেম্বর রাত ৯টায় সাতক্ষীরা সদরে কুচপুকুর গ্রামে আগরদাঁড়ি ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ কর্মী সিরাজুল ইসলামকে স্ত্রীর সামনে গুলি করে হত্যা করা হয়। এসময় গুলিতে জখম হন তার ভগ্নিপতি কওছার আলী। ৪ ডিসেম্বর রাত ১২ টায় ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় কালিগঞ্জ উপজেলার ভাড়াশিমলা গ্রামে আলাউদ্দিন খোকন (৬৩) নামে এক মুক্তিযোদ্ধাকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ৫ ডিসেম্বর তাঁকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়েছে।
৩ ডিসেম্বর দেবহাটায় পুলিশ বিজিবি’র সঙ্গে সংঘর্ষে শিবিরের ২ কর্মী নিহত। নিহতরা হলেন হোসেন আলী (১৬) ও আরিজুল ইসলাম (১৭)।

৩ ডিসেম্বর মঙ্গলবার বিকেল ৫টায় সাতক্ষীরা-ভোমরা সড়কের মাহমুদপুর এলাকার তালবাড়িয়া মোড়ে যুবলীগ কর্মী গিয়াসউদ্দিন সরদার (৩০) কে পিটিয়ে হত্যা করে অবরোধকারীরা।

২৭ নভেম্বর সদরের আগরদাড়ি এলাকায় পুলিশ-বিজিবি ও এলাকাবাসী’র সংঘর্ষে শামসুর রহমান রহমান (৩৫) নামে এক জামায়াত কর্মী নিহত হয়।

২১ নভেম্বর রাত সাড়ে ৮টায় দেবহাটা উপজেলার পারুলিয়া বাজারের পাশে মোমেনা বস্ত্রালয়ের সামনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু রায়হান (৪২) কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।

২৬ নভেম্বর সকাল ১০ টায় কলারোয়া উপজেলার মীর্জাপুরে মোটর সাইকেল গতিরোধ করে পিটিয়ে হত্যা করা হয় দেয়াড়া ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহাবুদুর রহমান বাবু (৩২) কে। একই দিন বিকেল সাড়ে ৫টায় দেয়াড়া ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলাম (৪০) কে অবরোধকারীরা কুপিয়ে হত্যা করে।

২৫ নভেম্বর আশাশুনির গোয়ালডাংঙ্গা গ্রামে পুলিশি অভিযানে হার্ড এ্যাটাকে আতিয়ার রহমান (৫৭) জামায়াত কর্মীর মৃত্যু হয়।

৬ নভেম্বর পাটকেলঘাটার সারুলিয়ায় জামায়াত কর্মী আব্দুস সবুর (৩২) কে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।

২৫ অক্টোবর শ্যামনগরের কাশিমাড়িতে ১৮ দলের মিছিলে স্থানীয় আওয়ামী লীগের হামলায় শফিকুল ইসলাম (৪০) হৃদ ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যায়।

২৬ আগস্ট রাত ১০টায় সাতক্ষীরা সদর উপজেলার শিবপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলাম (৫৫) কে পরানদহা বাজার থেকে বাড়ি যাওয়ার পথে হরিশপুর-বারোপোতার মাঝখানে রাস্তার উপর কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা।

১৩ আগস্ট দুপুরে উপজেলার গরানবাড়িয়ায় শ্রমিকলীগের নেতা আলমগীর হোসেন (৪২) কে পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করে হরতাল সমর্থনকারীরা। ১৬ আগস্ট ঢাকা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসাধীন অবস্থার তার মৃত্যু হয়।

১৬ জুলাই জামায়াতের সেক্রেটারী জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের রায়ের দিনে কালিগঞ্জে পুলিশ বিজিবি’র সাথে জামায়াত-শিবিরের সংঘর্ষে শিবির কর্মী আরিফুজ্জামান (১৭) ও জামায়াত কর্মী রুহুল আমিন গাজী (৩২) পুলিশে গুলিতে নিহত হন।

১৫ জুলাই সকাল ৯টায় দেবহাটার সখিপুর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আজিজকে বাড়ি থেকে ডেকে এনে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।

জামায়াতের ডাকা হরতালের দ্বিতীয় দিনে ৪ মার্চ কলারোয়ায় বিজিবি ও পুলিশের সাথে জামায়াত-শিবিরের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে রুহুল আমিন (৪৫) ও আরিফ বিল্লাহ (৪২) নিহত হয়।

৩ মার্চ শহরের রইচপুরের জামায়াত-শিবির ও বিজিবির সংঘর্ষে মাহবুবুর রহমান (৩০) নামে একজন নিহত হয়।

২৮ ফেব্রুয়ারি দুপুরে জামায়াতের নায়েবে আমীর দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল ফাঁসির রায় ঘোষণা করার পর বিকেল চারটায় সাতক্ষীরা শহরতলীর কদমতলা বাজার থেকে বিক্ষোভ মিছিল করে জামায়াত-শিবিরের কয়েক হাজার নেতা, কর্মী ও সমর্থক। এসময় সাতক্ষীরা সার্কিট হাউজ মোড়ে পুলিশ-বিজিবির সাথে জামায়াত শিবিরের সংঘর্ষে ৮ জন নিহত হয়।

নিহতরা হলো সাতক্ষীরা সদরের আঁগরদাড়ি গ্রামের আব্দুল বারির ছেলে ইকবাল হোসেন তুহীন (১৭), একই উপজেলার বেলেডাঙ্গা গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে আবুল হাসান (২০), শশাডাঙ্গা গ্রামের গোলাম মোস্তফা, খানপুর গ্রামের আতিয়ার রহমানের ছেলে সাইফুল ইসলাম, গাজীপুর গ্রামের আনারুল ইসলাম ও তার ছেলে রবিউল ইসলাম।

লাবসা গ্রামের আকরাম মাওলানার ছেলে ছাত্রলীগ নেতা প্রভাষক এবিএম মামুন হোসেন ও পায়রাডাঙ্গা গ্রামের অজিহার রহমানের ছেলে যুবলীগ নেতা শাহীন আলম (২৫)।

সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ায় সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক ড. মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন হাওলাদার নিরাপত্তা চেয়ে সচিবলায়ে চিঠি দিয়েছেন। সাতক্ষীরা জেলা শহরের সাথে উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেছে। অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে জেলার ৭৮টি ইউনিয়নের মানুষ।

তবে সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মোল্লা জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণেই আছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top