সকল মেনু

ঝিনাইদহে ফুলের বাজারে ধস

 জেলা প্রতিবেদক, ঝিনাইদহ , ৮ ডিসেম্বর:  ফুলনগরী হিসেবে খ্যাত ঝিনাইদহে ফুলের বাজারে ধস নেমেছে। টানা অবরোধের কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন হাজার হাজার ফুল চাষী। ২০টি মালার এক ঝোপা ফুল বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৩০ টাকায়। অবরোধের কারণে প্রতিদিন জেলার ফুলচাষীদের ক্ষতি হচ্ছে ৫০ লাখ টাকা। তারপরও ক্ষেতের গাছ সতেজ ও বাজার ঠিক রাখতে কৃষকরা ফুল তুলে বাজারজাত করছেন। আবার অনেকে খরচ না উঠার কারণে ফুল তুলে ফেলে দিচ্ছেন। এ অবস্থায় অনেক চাষী বলছেন, আগামীতে আর ফুল চাষ করব না।

কৃষকরা জানিয়েছেন, ফুল এমন ধরণের কৃষিপণ্য যা জমিতে রাখা যায় না। প্রতিদিন ফুল তুলে বিক্রি করতে হয়, নইলে গাছ সতেজ থাকে না। আর এ জেলায় ফুল সংরক্ষণেরও কোনো ব্যবস্থা নেই। এক ঝোপা গাদা ফুল যেখানে দেড়শ থেকে দুইশ টাকা দরে বিক্রি হয়। সেখানে ক্রেতাই মিলছে না।

অবরোধের কারণে জেলার বাইরে পাঠাতে না পারায় ফুল কিনছেন না ব্যবসায়ীরা ফলে বাধ্য হয়ে চাষীরা ফুল ফেলে দিচ্ছেন। দাম না পাওয়ায় ফেলে দেওয়া ফুল খাদ্য হচ্ছে ছাগলের। এ অবস্থা চলতে থাকলে তারা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হবেন।

ফুল ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা বলছেন, প্রতিদিন ঝিনাইদহের বিভিন্ন এলাকার মাঠ থেকে আনুমানিক ৫ হাজার ঝোপা ফুল রাজধানী ঢাকা, বন্দরনগরী চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যায়। যশোরের গদখালীর ফুল বাজারের পরই ঝিনাইদহে ফুলের বাজার রয়েছে।

জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা মাঠে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাঠের পর মাঠ ফুল ক্ষেত। হলুদ ও বাসন্তি রং এর গাঁদা ফুলে মাঠ রঙ্গিন হয়ে আছে।

বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের ফুল চাষী কুতুব উদ্দিন জানান, ১২ বছর ফুলের চাষ করছেন এতো কম মুল্যে কখনও ফুল বিক্রি করতে হয়নি। তার এবার ১৫ বিঘা জমিতে ফুল চাষ রয়েছে।

তিনি আরো জানান, বছরের যে কোন সময় ফুলের চারা রোপন করা যায়। একটি চারা রোপনের তিন মাস পর থেকে ফুল তোলা যায়। আর গাছটি ফুল দেয় আরো ৩ থেকে ৪ মাস। ৩৩ শতাংশের এক বিঘা জমিতে চাষ করে ফুল তোলা পর্যন্ত তার খরচ হয়েছে প্রায় ১৫ হাজার টাকা। এই জমিতে ২ হাজার ঝোপা ফুল হয়, যা বিক্রি করলে ৫৫ থেকে ৬০ হাজার টাকা আয় হয়। কিন্তু ফুলের দাম না পাওয়ায় তার অনেক টাকা লোকসান হবে। কৃষকের হিসাব অনুযায়ী বর্তমান বাজার মুল্যে এক বিঘায় ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা আয় হবে।

বড়-ঘিঘাটি গ্রামের আব্দুল মতলেব জানান, তার ১০ কাঠা জমিতে ফুলের চাষ করেছেন। বাজারে মুল্য না থাকায় অনেক কৃষক ক্ষেত থেকে ফুল তুলছেন না।

এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ ফুল চাষী সমিতির সভাপতি মতিয়ার রহমান জানান, তাদের এলাকায় ফুলের চাষ কয়েকগুন বেড়ে গেছে। ফুলনগরী খ্যাত বালিয়াডাঙ্গা এলাকায় ১০ বছর পূর্বে মাত্র ২ শত বিঘায় ফুল চাষ হলেও বর্তমানে তা বেড়ে এক হাজার বিঘায় দাড়িয়েছে। এছাড়াও চাষটি অন্য এলাকাতে ছড়িয়ে গেছে। অবরোধের কারণে কারণে চাষীরা ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় তাদের উৎসাহ কমে যাচ্ছে।

কালীগঞ্জ উপজেলার পাইকপাড়া গ্রামের সাইদুল ইসলাম জানান, অবরোধের কারণে চাষীরা ঠিকমতো ফুল বাজারে নিতে পারছেন না।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top