সকল মেনু

ভাবির দ্বারে নাছোড়বান্দা কাদের, ভাই অটল

 আছাদুজ্জামান,৮ডিসেম্বর,ঢাকা:  আকস্মিকভাবে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয়ার পরই এরশাদকে হাতে রাখতে প্রধান দুই দলের ব্যাপক তৎপরতা শুরু হয়েছে। পর্দার আড়ালে উভয়েই তাকে ম্যানেজ করার চেষ্টা করছে। আওয়ামী লীগ চাইছে তিনি আবার নির্বাচনে ফিরে আসুন আর বিএনপি প্রাণপণে চেষ্টা করছে এরশাদ তার সিদ্ধান্তে অনড় থাকুন। জাতীয় পার্টির অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা যাচ্ছে, আওয়ামী লীগের হয়ে দূতিয়ালী করছেন তার সহোদর ভাই গোলাম মোহাম্মদ কাদের এবং পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার। স্ত্রী রওশনকে দিয়ে এরশাদকে রাজি করানোর চেষ্টা করছেন তারা। অবশ্য এখনো পর্যন্ত রওশনকেও তারা টলাতে পারেননি।

গত মঙ্গলবার হঠাৎ করেই নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়ে জাপার চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেন, সব দল অংশ না নিলে তিনি নির্বাচনে যাবেন না। এই ঘোষণার পরপরই মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের। এরশাদকে বাগে রাখতে সাথে সাথে দলের শীর্ষস্থানীয় দুই জনকে দায়িত্ব দেয়া হয়। সরকারের সঙ্গে অব্যাহত যোগাযোগের কথা অবশ্য পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার স্বীকারও করেছেন। তবে বিএনপির পক্ষ থেকে যোগাযোগের বিষয়টি নিয়ে সরাসরি কেউ কথা বলছে না। অতি গোপনে এ যোগাযোগ হচ্ছে বলে মনে হয়।

কিন্তু সর্বশেষ শনিবার দুপুরেও এরশাদ তার নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের জানান, সিদ্ধান্তে তিনি এখনো অটল। যদিও আপন ভাই ও দলের মহাসচিব তাকে নানাভাবে প্ররোচিত করার চেষ্টা করছে বলে জানা যাচ্ছে।

এদিকে গতকাল শুক্রবার থেকেই গুঞ্জন চলছিল, জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হচ্ছেন রওশন এরশাদ। স্ত্রীকে দায়িত্ব দিয়ে এরশাদ অবসরে যাবেন এমন গল্পও চালু হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু শনিবার দুপুরে সেসব সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিলেন এরশাদ। তিনি বললেন, যতদিন জীবিত আছেন তিনিই পার্টির চেয়ারম্যান থাকবেন। অন্য কেউ পার্টিতে ভারপ্রাপ্ত বা চেয়ারম্যান হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

সিদ্ধান্তে অটল থাকার কথা এরশাদ বারবার জোরের সাথে গণমাধ্যমকে জানালেও খোদ নিজ পার্টির মধ্যে এ নিয়ে রয়েছে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এরশাদের বাসভবন প্রেসিডেন্ট পার্কে নেতাদের সঙ্গে তার অনেকবার বৈঠক হয়েছে। কিন্তু শুক্রবার থেকে দফায় দফায় যেসব বৈঠক হয়েছে তা প্রেসিডেন্ট পার্কের সীমানার বাইরে। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার রওশন এরশাদের বাসায় নেতাদের বৈঠক হয়েছে। এরপর শনিবার দুপুরের দিকে পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদারের বাসায় দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য জিএম কাদের বৈঠক করেন। এরপর তারা রওশনের বাড়িতে যান এবং এরশাদকে নির্বাচনে অংশ নেয়ায় রাজি করাতে তাকে অনুরোধ করেন। অবশ্য এরশাদপত্নী তাদের অনুরোধ নাকচ করে দিয়েছেন বলে একটি সূত্র জানায়।

এরপরও জিএম কাদের ও রুহুল আমিন হাওলাদার আশা ছাড়ছেন না। তারা নাছোড়বান্দার মতো রওশনের পিছে লেগে আছেন। বারবার বিষয়টি পার্টির চেয়ারম্যানকে বুঝানোর জন্য চাপ দিচ্ছেন। তবে শনিবার রাত ১১টা পর্যন্ত তিনি তার স্বামীর সিদ্ধান্তকেই স্বাগত জানিয়ে চুপ করে আছেন বলে জানা গেছে।

এদিকে পার্টির এক প্রেসিডিয়াম সদস্য জানান, নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এরশাদকে নানা প্রলোভন দিচ্ছে। পাশাপাশি তাকে জেলের ভয়ও দেখাচ্ছে। আওয়ামী লীগ দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বিচারাধীন গুরুতর অনেক মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিবেচনায় প্রত্যাহার করলেও এরশাদের বিরুদ্ধে এখনো মঞ্জুর হত্যা মামলা ঝুলিয়ে রেখেছে। এসব কারণে তিনি বেশ ভেঙে পড়েছেন।

পার্টির একটি সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ দলের নেতাদের দিয়ে এরশাদকে ম্যানেজ করতে ব্যর্থ হয়ে এখন জাপার নেতা রুহুল আমিন হাওলাদার ও জিএম কাদেরকে দিয়ে চেষ্টা করছে। তারা এরশাদকে রাজি করাতে পারেন তবে এর বড় অংকের টাকার পুরস্কার দেয়ারও প্রতিশ্রুতি রয়েছে।

তবে কতোটা সফল হবেন তা এখনই বলা যাচ্ছে না। তৃণমূল এরশাদের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। এছাড়া রোববার জাতিসংঘের বিশেষ দূত অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোর সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি রংপুর যাবেন। সেখান থেকেই ফিরেই হয়তো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবেন।

স্পষ্টতঃ এই মুহূর্তে এরশাদকে টলানো যাবে না জেনেই রওশনের দ্বারস্থ হয়েছেন হাওলাদার ও কাদের। এতে খুব একটা ফল হবে বলে মনে হচ্ছে না। কারণটা ব্যাখ্যা করলেন পার্টির এক নেতা। তিনি বলেন, ‘রওশন এরশাদ তার স্বামীর সিদ্ধান্তের বাইরে কখনও যাননি আর এখনও যাবেন না। কেননা এর আগে ২০০৬ সালে চারদলীয় জোটের সময় ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে বিদিশা স্যারকে ডিভোর্স দেয়ার ঘটনায় ম্যাডাম উল্টাপাল্টা কিছু করেননি। দেশের এই সঙ্কট মুহূর্তেও চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্তের বাইরে কিছু করবেন না এবং যাবেনও না। তারা যতই চেষ্টা করুক না কেন তাকে রাজি করানো যাবে না।’

শনিবার বিকেলে পার্টির চেয়ারম্যানে সঙ্গে দেখা করতে আসেন রুহুল আমিন হাওলাদার। এরশাদের বাড়িতে প্রবেশের আগে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথাও বলেননি। ঘণ্টাখানেক অবস্থান করার পর বেরিয়ে যাওয়ার সময়ও তিনি মিডিয়ার সামনে কথা বলতে রাজি হননি, সোজা বেরিয়ে গেছেন।

এদিকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বারিধারায় যোগাযোগ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এরশাদের বাড়ির সামনে আসেন। কিন্তু  আসার পর সাংবাদিকদের দেখে তিনি ‘ভুল করে এই পথে এসেছেন’ এমন ভান করে অন্য পথে গাড়ি ঘুরিয়ে নেন। এসময় তার সঙ্গে থাকা বিভিন্ন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ওবায়দুল কাদেরের অন্য পথে যাওয়ার সিদ্ধান্ত বুঝতে না পেরে বিপাকে পড়েন। তারা পরে তাকে খুঁজতে থাকেন।

এ বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তারা বিষয়টি একেবারে উড়িয়ে দেন।

উল্লেখ্য, দলের পক্ষ থেকে এরশাদকে ম্যানেজ করার দায়িত্ব যে দু’জনকে দেয়া হয়েছে তাদের মধ্যে প্রধান হলেন অভিজ্ঞ নেতা উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু। আর তাকে সহোযোগিতা করছেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ওবাদুল কাদেরসহ আরো একজন নেতা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top