সকল মেনু

অবরোধে মাঠে নামেনি বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা

রেজা মাহমুদ,হটনিউজ২৪বিডি.কম,২৮নভেম্বর,ঢাকা: রাজধানীতে চলমান আন্দোলন চাঙ্গা করতে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশের পরও মাঠে নামেননি দলের সিনিয়র নেতারা। ফলে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট আহুত দেশব্যাপী টানা ৭১ ঘণ্টা রাজপথ, রেলপথ ও নৌপথ অবরোধ কর্মসূচিতে আগের মতোই রাজধানীতে তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি। এতে করে ঢাকার আটটি এলাকায় অবস্থানের খালেদা জিয়ার নির্দেশনা ব্যর্থ হতে বসেছে। প্রসঙ্গত, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদে মঙ্গলবার ভোর ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার ভোর ৬টা পর্যন্ত দেশব্যাপী টানা ৪৮ ঘণ্টা রাজপথ, রেলপথ ও নৌপথ অবরোধের কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট। এরপর বুধবার বিকেলে অবরোধের সময়সীমা ১২ ঘণ্টা বাড়িয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। সর্বশেষ বুধবার রাতে আরো ১১ ঘণ্টা বাড়িয়ে অবরোধের সময়সীমা শুক্রবার ভোর ৫টা পর্যন্ত পুনঃনির্ধারণ করে ১৮ দল। কিন্তু খালেদা জিয়ার নির্দেশনার পরও অবরোধে রাজধানীর চিত্র অভিন্নই রয়ে গেছে । ঢাকার বাইরে নেতা-কর্মীরা মাঠে থেকে সর্বাত্মকভাবে কর্মসূচি পালন করলেও অবরোধে রাজধানীতে দলের সিনিয়র কোনো নেতাকে রাজপথে নামতে দেখা যায়নি। অবরোধ শুরুর দিন মঙ্গলবার সকালে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমানকেই কেবল রাজধানীর অন্যতম প্রবেশমুখ আমিন বাজারে রাজপথ অবরোধ করে সমাবেশ করতে দেখা গেছে। এতে করে চলমান আন্দোলনে সারা দেশ থেকে যথারীতি পিছিয়ে রাজধানী ঢাকা। এদিকে গত ১৪ নভেম্বর সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের মেম্বার লাউঞ্জে সিনিয়র সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করেন বেগম খালেদা জিয়া। সেখানে সাংবাদিকরা বেগম জিয়াকে বলেন, নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে সারা দেশ আন্দোলনে উত্তাল হলেও ঠিক বিপরীত চিত্র রাজধানী ঢাকায়। তাই রাজধানীতে আন্দোলনকে জোরদার করতে না পারলে চলমান আন্দোলনকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া খুবই কঠিন হবে।’ এমন পরিস্থিতিতে ঢাকায় আন্দোলনকে চাঙ্গা করতে দল এবং সংগঠনের পাঁচ নেতাকে প্রথমে তিরস্কার ও পরে শোকজ করেন খালেদা জিয়া। তাতেও কোনো উন্নতি না হওয়ায় শেষ সময়ে রাজধানীতে আন্দোলন চাঙ্গা করতে গত সপ্তাহে ‘আট সেনাপতিকে’ দায়িত্ব দেন তিনি। একই সঙ্গে ঢাকার আসনগুলোতে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যারা দলীয় প্রার্থী ছিলেন তাদেরও আন্দোলনের সর্বোচ্চ শক্তি নিয়ে মাঠে থাকার নির্দেশ দেন বিএনপি চেয়ারপারসন। এদেরকে সঙ্গে নিয়ে এই আট ‘সেনাপতি’র  আন্দোলন পরিচালনা করার কথা।

হরতাল, অবরোধসহ সব কর্মসূচি তৃণমূলে পালিত হলেও ঢাকায় আন্দোলনের ছাপ ফেলতে না পারায় বাধ্য হয়েই বিএনপি প্রধানের এই সিদ্ধান্ত বলে দলীয় সূত্র জানায়। সূত্র মতে, খালেদা জিয়ার মনোনীত এই আট নেতা হলেন- স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রি. জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান ও ঢাকা মহানগর আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকা, যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, বরকত উল্লাহ বুলু, ঢাকা মহানগর সদস্য সচিব আব্দুস সালাম ও ঢাকার সাবেক এমপি সালাহ উদ্দিন আহমেদ। এদের মধ্যে আ স ম হান্নান শাহকে গত সোমবার রাতে বারিধারার জাপান এ্যাম্বেসির সামনে থেকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ।

দেশব্যাপী টানা ৭১ ঘণ্টা রাজপথ, রেলপথ ও নৌপথ অবরোধের কর্মসূচি ঘোষিত হওয়ার অনেক আগেই খালেদা জিয়া কেন্দ্রীয় নেতাদের মাঠে থেকে কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেয়ার নির্দেশনা দিলেও কাযত তা হয়নি। অবরোধের ৫০ ঘণ্টা অতিবাহিত হলেও একমাত্র আমান উল্লাহ আমান ছাড়া রাজধানীর কোথাও দলের আর কোনো কেন্দ্রীয় নেতাকে দেখা যায়নি।

এদিকে গত সোমবার দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর রাতেই বিএনপি চেয়ারপারসন তার গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সিনিয়র নেতাদের সাথে বৈঠক করেন। বৈঠকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. ওসমান ফারুক, বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক প্রমুখ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। আর বৈঠক শেষে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

কিন্তু কর্মসূচি ঘোষিত হওয়ার পর থেকেই বিএনপির এসব সিনিয়র নেতা লাপাত্তা। মাঠে নামা তো দূরে থাক, অধিকাংশ কেন্দ্রীয় নেতাই মোবাইল ফোন বন্ধ করে আন্দোলনের মাঠ থেকে সরে আছেন।

তবে বিএনপির কেন্দ্রীয় দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে অবস্থান করছেন। অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে সারা দেশের সার্বিক চিত্র এবং দলের অবস্থান তুলে ধরে বিএনপির পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে নিয়মিত কথা বলছেন তিনি।

এদিকে আন্দোলনের অন্য কর্মসূচি চলাকালে নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে দেশের সার্বিক চিত্র ও বিএনপির অবস্থান তুলে ধরে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে গণমাধ্যমে কথা বলতে দেখা গেলেও এই অবরোধ কর্মসূচি চলাকালীন সময়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তিনিও অনুপস্থিত।

তবে কি গ্রেফতার এড়াতেই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব দলীয় কার্যালয়ে আসছেন না-সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে গত মঙ্গলবার নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে রিজভী আহমেদ বলেন, ‘বাহিরে বের হলেই যে আমাদের সিনিয়র নেতাদের গ্রেফতার, হামলা-নির্যাতন চালানো হচ্ছে, তা নিশ্চয়ই আপনাদের (সাংবাদিক) অজানা নয়। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আন্দোলনে আছেন। তিনি আমাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন, প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দিচ্ছেন। আর তার পক্ষেই আমি কথা বলছি।’

অবরোধ কর্মসূচিতে বিএনপির সিনিয়র নেতাদের সম্পৃক্ততা প্রসঙ্গে অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বিবার্তাকে বলেন, ‘দলের ১০জন নেতা-কর্মী কোথাও একত্রিত হয়ে মিছিল করার চেষ্টা করলে পুলিশ মিছিলের উপর নির্বিচারে গুলি চালাচ্ছে। কারণ, সরকার বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করতে চায়। এজন্য নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার, নির্যাতন-নিপীড়ন করছে। এরই ধারাবাহিকতায় স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, আ স ম হান্নান শাহসহ সিনিয়র নেতাদের গ্রেফতার করা হয়েছে।’

তিনি দাবি করে বলেন, এমন পরিস্থিতিতেও বিএনপির সিনিয়র নেতারা আন্দোলনে আছেন। এছাড়া নিজস্ব অবস্থানে থেকে তারা কাজ করছেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top