সকল মেনু

সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করছেন জাফর ইকবাল

 নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট, ২৭ নভেম্বর:  পদত্যাগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত পুনর্মূল্যায়ন করছেন অধ্যাপক জাফর ইকবাল ও অধ্যাপক ইয়াসমিন হক।

উপাচার্য ও শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন পক্ষের অনুরোধের পর পদত্যাগপত্র প্রত্যাহারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত  জানাতে বুধবার পর্যন্ত সময় নিলেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এ দুই জনপ্রিয় শিক্ষক।

এদিকে জাফর ইকবাল ও ইয়াসমিন হক বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরিয়ে আনতে বিক্ষোভ শুরু করেছে শিক্ষার্থীরা। তারা অনির্দিষ্টকাল ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনেরও ঘোষণা দিয়েছে।

জাফর ইকবালের পদত্যাগের খবরটি ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তার ভক্তরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। জনপ্রিয় এ শিক্ষককে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরিয়ে আনতে সর্বোচ্চ চেষ্টার অনুরোধও করা হয়েছে কারও কারও পক্ষ থেকে।

এদিকে উপাচার্য আমিনুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেছেন, বুধবার অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের বৈঠকে সমন্বিত পরীক্ষা পদ্ধতির বিষয়ে আলোচনা করবেন তারা। অ্যধাপক জাফর ও ইয়াসমিন পদত্যাগপত্র ফিরিয়ে নেবেন বলেই তিনি আশা করছেন।

একই আশার কথা শোনা গেছে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক একে আজাদ চৌধুরীর মুখেও।

‘সিলেটের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ’ ব্যানারে একটি পক্ষের বিরোধিতায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শাহজালাল এবং যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত করার পর এর প্রতিবাদে সন্ধ্যায় পদত্যাগপত্র দেন দুই শিক্ষক।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও শিক্ষামন্ত্রী নাহিদসহ সংশ্লিষ্টদের ভূমিকা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন জনপ্রিয় লেখক ও আলোচক জাফর ইকবাল।

উপাচার্যের সঙ্গে অধ্যাপক জাফরের বৈঠকের পর রাত ১০টায় ইয়াসমিন হক বলেন, ‘অনেক রিকোয়েস্ট এসেছে, উপাচার্যও বলেছেন। শিক্ষার্থীরাও যে আবেগ দেখিয়েছে তা আমরা আগে ভাবিনি। পদত্যাগপত্র এখনও প্রত্যাহার করিনি। কাল পর্যন্ত ভেবে দেখি।’

ওই বৈঠকের পর উপাচার্য শিক্ষার্থীদের বলেন, ‘অধ্যাপক জাফর ইকবালকে অনুরোধ করেছি, পদত্যাগপত্রটি যেন প্রত্যাহার করে নেন। আগামীকাল সকাল ১১টায় অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের বৈঠক আছে। সেখানে পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা হবে।’

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অনুমতি নিয়ে প্রথমবারের মতো এক প্রশ্নে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় শাহজালাল ও যশোর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, গত আড়াই মাস ধরে যার প্রস্তুতি চলছিল।

কিন্তু পরীক্ষার কয়েকদিন আগে হঠাৎ করেই সিলেটে পরীক্ষার বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়। বলা হয়, একসঙ্গে পরীক্ষা হলে সিলেটের শিক্ষার্থীরা বৈষম্যের শিকার হবে।

ভর্তি কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়, সমন্বিত এ ব্যবস্থায় কোনো এলাকার শিক্ষার্থীদের বঞ্চিত হওয়ার কারণ নেই। কেবল শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি লাঘবেই এ উদ্যোগ।

কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ব্যাখায় সন্তুষ্ট না হয়ে ভর্তি পরীক্ষা প্রতিহতের ঘোষণা দেয় ‘সিলেটবাসী’ নামে আন্দোলনকারীরা। পাশাপাশি সিলেটের শিক্ষার্থীদের জন্য কোটাও দাবি করেন তারা।

সোমবার ‘সিলেটের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ’ ব্যানারে উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করে স্মারকলিপিও দেন তারা। এরপর মঙ্গলবার অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের বৈঠক থেকে ভর্তি স্থগিতের ঘোষণা আসে। ভর্তি পরীক্ষার নতুন তারিখ পরে জানানো হবে।

জানা যায়, অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলে বৈঠকে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে আলোচনা হলেও উপাচার্য একক সিদ্ধান্তে ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত করেন। ওই সভা শেষ হওয়ার আগেই বেরিয়ে আসেন অধ্যাপক জাফর ইকবাল।

সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত হওয়ার পর পদত্যাগপত্র জমা দেন অধ্যাপক জাফর ও ইয়াসমিন।

এর পরপরই পদত্যাগপত্র দেন ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ শিক্ষক পরিষদের’ প্রতিনিধিত্ব করে আসা জাফর ও ইয়সমিন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইফ সায়েন্স স্কুলের ডিন ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ইয়াসমিন হক মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জানান, আমরা পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছি।

জনপ্রিয় লেখক জাফর ইকবাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক এবং ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক বিভাগের প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে লেখা এক খোলা চিঠিতে পদত্যাগের বিষয়টি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যারা সবসময়ই আমাদের সবকিছুর বিরোধিতা করে, আমরা তাদের বিরোধিতার বিরুদ্ধে এতোদিন কাজ করে এসেছি। কিন্তু যারা আমাদের স্বজন, যাদেরকে পাশে নিয়ে কাজ করে এসেছি, তারা যদি আমাদের পাশে না থাকেন, তাহলে বুঝতে হবে অবশ্যই এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমাদের বিদায় নেয়ার সময় হয়েছে।’

দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বিত পরীক্ষার পক্ষে যুক্তি দিয়ে তিনি বলেন, এতে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় তাদের স্বকীয়তা পুরোপুরি বজায় রেখে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারবে। পার্থক্য শুধু পরীক্ষা হবে এক প্রশ্নে। এতে ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকদের ভোগান্তিও কমবে।

১৯৯৪ সাল থেকে সিলেটের এ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করে আসা জাফর ইকবাল বলেন, আমরা পুরোপুরি অবিশ্বাস ও বিস্ময় নিয়ে আবিস্কার করলাম, বামপন্থী ও জনসেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলো প্রথমে এর বিরোধিতার সূচনা করল এবং স্বাভাবিকভাবে সেটি অন্যরা গ্রহণ করল।

মাননীয় অর্থমন্ত্রী ও মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী যখন এই পদ্ধতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিলেন- তখন আমাদের মনে হয়েছে, আমাদের সবকিছু নতুন করে ভেবে দেখার সময় হয়েছে।

শিক্ষামন্ত্রী ও মঞ্জুরি কমিশন চেয়ারম্যানের প্রতিক্রিয়া

অধ্যাপক জাফর ও ইয়াসমিন পদত্যাগ করার পর শিক্ষামন্ত্রী নাহিদ বলছেন, তারা সব কিছু ‘সুন্দর’ করার চেষ্টা করবেন।

আর বিশ্ববিদ্যালয় মুঞ্জরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান আজাদ চৌধুরী বলেন, অধ্যাপক জাফর ইকবালের পদত্যাগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘অপূরণীয় ক্ষতি’ হবে।

শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, পদত্যাগ ঠেকাত হস্তক্ষেপের সুযোগ কম। তবে চেষ্টা করব যেন সব কিছু সুন্দরভাবে করা যায়।

আগামী ৩০ নভেম্বর অভিন্ন প্রশ্নপত্রে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল।

পদত্যাগপত্র জমা দিলেও অধ্যাপক জাফর ইকবাল বিষয়টি ‘রিকনসিডার’ (পুনর্বিবেচনা) করবেন বলে আশা করছেন মঞ্জুরি কমিশনের চেয়াম্যান।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top