সকল মেনু

৫ জানুয়ারি নির্বাচন-সিইসি

 নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা, ২৫ নভেম্বর:  বহুল আলোচিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী ৫ জানুয়ারি। সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে এ তথ্য জানিয়ে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিব উদ্দিন আহমদ। তফসিল ঘোষণার লক্ষে জাতির উদ্দেশ্যে সিইসি ভাষণ দেন। ভাষণটি বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারে প্রচার করা হয়েছে। এর আগেই ভাষণের কপিটি গণমাধ্যমে পাঠানো হয় নির্বাচন কমিশন থেকে। কিছুক্ষণ পরেই পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হবে ভাষণটির কপি।

প্রিয় দেশবাসী,
আসসালামো আলাইকুম।

আমি প্রথমেই সশ্রদ্ধ চিত্তে স্মরণ করছি জাতির সেই সব বীর শহীদদের যাঁদের জীবনের বিনিময়ে আমরা মায়ের ভাষা রক্ষা করতে পেরেছি এবং পেয়েছি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। একই সাথে স্মরণ করছি অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের যারা ১৯৭১ সালে জীবনের মায়া ত্যাগ করে শত প্রতিকূলতার মধ্যে থেকেও যুদ্ধ করে এ দেশের স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনে বিশ্বের মাঝে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর স্থান করে দিয়েছেন আমাদের সকলের জন্য।

এদেশের সকল জন মানুষের প্রত্যাশা শান্তি বজায় রেখে দেশকে এগিয়ে নিয়ে আমরা বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশগুলোর মাঝে প্রথম সারিতে দাঁড় করাই। আশা করি জনগণের এ প্রত্যাশা পূরণে সকল রাজনৈতিক দল এগিয়ে আসবে এবং একটা রাজনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমে সকলের অংশ গ্রহণে একটা সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে জনগণ তাদের রায়ের প্রতিফলন দেখতে পাবেন। এজন্য সকল রাজনৈতিক দলের কাছে বার বার অনুরোধ জানিয়েছি তারা যেন জনগণের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়ে দেশে শান্তি বজায় রাখতে একটা সমঝোতায় আসেন। গত ১৯ নভেম্বর মহামান্য রাষ্ট্রপতির সাথে সাক্ষাৎ করেও আমরা তাঁকে অনুরোধ জানাই তিনি যেন ব্যক্তিগত বিশেষ উদ্যোগ নেন এই অসহনীয় অচলাবস্থা দূরকরণে। আমরা এখনও আশা রাখি জনগণের এ প্রত্যাশা উপেক্ষা করবেন না কেউই। নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক সংস্থা। আমরা সংবিধান সমুন্নত রাখার জন্য শপথ নিয়েছি। সংবিধান মোতাবেক ২৪ জানুয়ারী ২০১৪ সালের মধ্যেই নির্বাচন করার বাধ্য বাধকতা রয়েছে। এতদিন আমরা অপেক্ষা করেছিলাম একটা রাজনৈতিক সমঝোতার জন্য। আমাদের হাতে বিলম্ব করার মতো সময় আর নেই। তাই আমি আজ দশম জাতীয় সংসদের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে যাচ্ছি; একই সাথে আলোচনার মাধ্যমে সকলের অংশগ্রহণে একটা শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পথে আসার জন্য আবারো সকল মহলকে আহ্বান জানাচ্ছি।

প্রিয় দেশবাসী,

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতির শুরুতেই আমরা নির্বাচনের সাথে সম্পৃক্ত বিভিন্ন স্টেক হোল্ডারদের সাথে মত বিনিময় করি। সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের সম্পাদক ও প্রধান নির্বাহীগণ, নির্বাচনের সাথে সম্পৃক্ত এনজিও প্রধানদের সাথে আমরা পৃথক পৃথক বৈঠকে সকল বিষয়ে আলোচনা করি। নির্বাচনের প্রধান স্টেক হোল্ডার নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলির সাথেও পৃথক পৃথক ভাবে মত বিনিময় করি। ভোটার তালিকা হালনাগাদকরণ ও জাতীয় সংসদ আসনের সীমানা নির্ধারণ ছাড়াও অন্যান্য বিষয়েও মতামত আহ্বান করা হয় এবং সকল দলকে  যে কোন বিষয়ে যে কোন সময়ে তাদের মতামত থাকলে তা কমিশনকে জানানোর জন্য অনুরোধ করা হয়। সে সময়ে নিবন্ধিত ৩৮ টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ২৮ টি দল এই আলোচনায় অংশ গ্রহণ করে তাদের সুচিন্তিত মতামত প্রদান করে। বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে তাদের মতামত বিশেষ করে সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত জনগণের মতামতকে  গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করেছি।

প্রিয় দেশবাসী,

দায়িত্বভার গ্রহণ করার পর বলেছিলাম আমরা আমাদের কাজের মাধ্যমে আমাদের নিরপেক্ষতা ও গ্রহণযোগ্যতার প্রমাণ দেবো। জাতীয় সংসদের শূন্য আসনে ৭ টি এবং সিটি কর্পোরেশনের বড় বড় ৬ টি সহ এ পর্য্যন্ত আমরা ৬৫৪ টি নির্বাচন অনুষ্ঠান করেছি। দেশী বিদেশী পর্যবেক্ষক, সংবাদ মাধ্যমের কর্মীরা এ সব নির্বাচনকে স্বচ্ছ, সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ বলে আখ্যায়িত করেছেন। রাজনৈতিক দল এবং জনগণও সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। এগুলির উল্লেখযোগ্য অংশে বিরোধী দলীয় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জয়লাভ করে প্রমাণ করেছেন যে নির্বাচনগুলি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ছিল। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নির্দলীয় হওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে সকল দল পূর্ণাঙ্গভাবে অংশ নেওয়ায় এ সব নির্বাচন অত্যন্ত প্রতিদ্বন্দি¡তা মুলক ছিল। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের কল্যাণে দেশবাসী জেনেছেন ও প্রত্যক্ষ করেছেন যে, সবকটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অত্যন্ত সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। দেশী বিদেশী পযবেক্ষকগণ ও সংবাদ মাধ্যমের কর্মীরাও অনুরূপ মতামত প্রকাশ করেছেন।

প্রিয় দেশবাসী,

এবার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জনগণের রায় মেনে নেওয়ার মন মানসিকতা তৈরী করে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য গড়ে তোলার আহ্বানে সাড়া দিয়ে পরাজিত ও বিজয়ী প্রার্থীরা যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তা সত্যিই প্রশংসনীয়। আশাকরি ভবিষ্যতেও জাতীয় সংসদের নির্বাচনে জনগণের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে সকল দলই এই ঐতিহ্যকে সমুন্নত রাখবেন। নির্বাচনি ফলাফলকে ঘিরে বিভ্রান্তি নিরসন ও রাজনৈতিক দলের আস্থা সৃষ্টির লক্ষ্যে নির্বাচনি আইনের বিধান অনুসারে আগামী নির্বাচনে প্রত্যেক কেন্দ্রে ভোট গণনার পর প্রিজাইডিং অফিসার প্রার্থীদের প্রাপ্ত ভোটের ফলাফল অতীতের মত শুধু অংকে লিখবেন না, কথায়ও লিখবেন। প্রিজাইডিং অফিসার ভোট কেন্দ্রে ফলাফল ঘোষণা করার পর এজেন্টদের স্বাক্ষরকৃত রেজাল্টসীট রিটার্নিং অফিসারের কাছে প্রেরণ করবেন এবং তার একটি কপি ডাকযোগে সরাসরি নির্বাচন কমিশনে পাঠাবেন। যত রাতই হোক না কেন ভোট কেন্দ্র থেকে রেজাল্টশিট জমা না হওয়া পর্যন্ত ডাকঘর খোলা রাখা হবে। আশাকরি এ পদক্ষেপ ভোটের ফলাফল প্রকাশকে সম্পূর্ণ স্বচ্ছ করে তুলবে।

প্রিয় দেশবাসী,

আপনারা অবগত আছেন কার্যভার গ্রহণ করার পর পরই নির্ভুলভাবে ভোটার তালিকা হালনাগাদের কার্যক্রম আমরা গ্রহণ করি। ২০০৯ সাল থেকে হালনাগাদের কাজ না হওয়ায় ৩ বছরের বকেয়া হালনাগাদ একত্রে সম্পন্ন করতে হয়। প্রত্যেক ভোটারকে সশরীরে রেজিস্ট্রেশন সেন্টারে উপস্থিত হয়ে ছবি ও আঙুলের ছাপ, পিতা মাতার নাম, বর্তমান ও স্থায়ী  ঠিকানা এবং জন্ম তারিখসহ ৩১ টি তথ্য প্রদান করে ফরম পূরণ করতে হয়। ওইসব তথ্য মাঠ পর্য্যায়ে যাচাই করে সঠিক পাওয়ার পরই নুতন ভোটারের তথ্যের সাথে কমিশনের ভোটার ডাটাবেজে রক্ষিত অন্যান্য সকল পুরানো ভোটারদের তথ্যের সাথে অটোমেটিক ফিঙ্গার প্রিন্ট আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেমের মাধ্যমে বা AFIS ম্যাচিং এর মাধ্যমে মিলিয়ে তা যাচাই করা হয়। কেউ একাধিকবার ভোটার হওয়ার চেষ্টা করলে এভাবে তা সনাক্ত করা হয় এবং দ্বিতীয়বারের ভোটার হওয়ার আবেদন বাতিল করা হয়। যারা এভাবে একাধিকবার ভোটার হওয়ার চেষ্টা করেন তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। উন্নতমানের সফটওয়ার ও প্রোগ্রাম ব্যবহার করে এ কাজটি দ্রুত ও সঠিক ভাবে করা সম্ভব হয়েছে যার ফলে ভোটার তালিকার শুদ্ধতা নিয়ে প্রশ্নের কোন অবকাশ নেই। বেসরকারী সংস্থাসমূহের সংগঠন ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপ এই বিষয়ে স্বপ্রণোদিত ভাবে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ অডিট করে এর শুদ্ধতা সম্বন্ধে প্রত্যয়ন করেছে। ভোটার তালিকার ক্রমিক নম্বর, ভোটার নম্বর এবং জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর একই ব্যক্তির তিনটি পৃথক নম্বর থাকার কারণে কারো কারো মনে হয়তো কিছুটা বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে। কিন্তু মনে রাখা প্রয়োজন যে, এই নম্বর তিনটি আলাদা আলাদাভাবে প্রতিটি ভোটারের জন্যই বিদ্যমান। তাই এ নিয়ে কোন ভুল বোঝাবুঝির অবকাশ নেই। এরপরও হালনাগাদকৃত ভোটারদের খসড়া তালিকা সারাদেশে উপজেলা নির্বাচন কমিশন অফিসে প্রকাশ করে তার উপর আপত্তি আহ্বান করে দুই সপ্তাহ ব্যাপী আপত্তি গ্রহণ করা হয় এবং ঐ সকল আপত্তি নিস্পত্তি করেই ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করা হয়।

প্রিয় দেশবাসী,

সংবিধানে সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনকে প্রদান করা হয়েছে। নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলসহ অন্যান্য স্টেক হোল্ডারদের মতামতকে যতদুর সম্ভব আমলে নিয়ে Delimitation of Constituencies Ordinance, ১৯৭৬ এর সংশ্লিষ্ট ধারা মোতাবেক জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের পুনর্নির্দ্ধারিত সীমানা সংক্রান্ত খসড়া ২ ফেব্রুয়ারী ২০১৩ তারিখের গেজেটে প্রকাশ করা হয় এবং ঐ খসড়ার উপর আপত্তি মতামত আহ্বান করে এক মাসের অধিককাল সময় দিয়ে গণবিজ্ঞপ্তি জারী করা হয়। জন সাধারণের জন্য উন্মুক্ত শুনানিতে সংশ্লিষ্ট আবেদনকারী অথবা তার পক্ষে নিযুক্ত এডভোকেটের যুক্তিতর্ক, আপত্তি, মতামত বিবেচনা করে সীমানা নির্ধারণ চূড়ান্ত করা হয় এবং তা ৩ জুলাই ২০১৩ তারিখের গেজেটে প্রকাশ করা হয়। Representation of the People Order, ১৯৭২ সহ অন্যান্য কয়েকটি আইন ও বিধিমালায়ও প্রয়োজনীয় সংশোধন করা হয়েছে।

প্রিয় দেশবাসী,

২০০৮ সালের নির্বাচন আচরণবিধিটি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার সাথে সামঞ্জস্য রেখে করা ছিল। যেখানে উপদেষ্টাগণের নির্বাচনে অংশ গ্রহণের সুযোগ ছিলনা। বর্তমানে দুইটি প্রধান রাজনৈতিক জোটের মধ্যে নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে মতানৈক্যের ফলে এখন পর্য্যন্ত এ বিষয়ে কোন সমঝোতা হয় নি। তাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলের নেতা, মন্ত্রী ও অন্যান্য সরকারী সুবিধাভোগী বিশেষ গুরুত্বপুর্ণ ব্যক্তিবর্গকে নির্বাচন-পূর্ব সময়ে কিছু কিছু নিষেধাজ্ঞার আওতায় এনে সকলের জন্য সমান সুযোগ বা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড প্রস্তুতের নিমিত্তে আচরণবিধিতে কিছু সংশোধন আনা হয়েছে। ভারত, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়াসহ বেশ কিছু সংসদীয় গণতন্ত্র অনুসরণকারী দেশের নির্বাচন আচরণবিধির আলোকে আমাদের আচরণ বিধিতে কয়েকটি সংশোধন আনা হয়েছে। প্রস্তাবিত সংশোধনীর খসড়াসহ ২০০৮ সালের আচরণবিধি কমিশনের ওয়েব সাইটে গত ৩ নভেম্বর ২০১৩ তারিখে প্রকাশ করে এক সপ্তাহ ধরে এর উপর নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলসহ সকল মহলের মতামত আহ্বান করা হয়। বেশ কিছু মতামত পাওয়া যায় তার মধ্যে থেকে কয়েকটি মতামত গ্রহণ করে চূড়ান্ত আচরণবিধি জারী করা হয়েছে। কমিশনের ওয়েব সাইটে তা পাওয়া যাবে। সংশোধিত আচরণবিধিতে তফসিল ঘোষণার দিন থেকে নির্বাচন পূর্ব সময় শুরু হবে এবং নির্বাচনের ফলাফল গেজেটে প্রজ্ঞাপিত হওয়া পর্য্যন্ত তা বলবৎ থাকবে। এতে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলের নেতা, মন্ত্রীবর্গ এবং সরকারি সুবিধাভোগী অন্যান্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার দিন থেকে সরকারি সুযোগ সুবিধা নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা করতে পারবেন না। তবে প্রাপ্যতা অনুযায়ী তারা নিরাপত্তা পাবেন। সংসদ সদস্যগণ বা তাদের কোন প্রতিনিধিরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটির দায়িত্বে থাকলে নির্বাচন পূর্ব সময়ে ঐ কমিটির কোন সভায় যোগ দিতে বা সিদ্ধান্ত গ্রহণে সম্পৃক্ত থাকতে পারবেন না। তারা তাদের ইচ্ছাধীন তহবিল বা তাদের অধীনস্থ অন্য কোন তহবিল থেকে কোন অর্থ কোন ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা প্রতিষ্ঠানকে প্রদান করতে পারবেন না। তারা নির্বাচনী প্রচারণায় সরকারি সুযোগ সুবিধাসহ সরকারি যানবাহন সরকারি কর্মকর্তা ও শিক্ষকদের ব্যবহার করতে পারবেন না। এ ছাড়াও পূর্বের সকল বিধি নিষেধ ও বলবৎ থাকবে।

প্রিয় দেশবাসী,

আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা করতে চাই যে, নির্বাচন আচরণ বিধি প্রয়োগে কোন ছাড় দেওয়া হবে না। কে কোন পদে আছেন তা দেখা হবে না। তিনি কোন্ আচরণ বিধি ভঙ্গ করলেন শুধু সেটাই দেখা হবে এবং সে মোতাবেক কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।যে কোন নির্বাচনের সাফল্য অনেকাংশে নির্ভর করে নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের আচরণের উপর। নির্বাচনী আইন ও আচরণ বিধিতে অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে বিভিন্ন রঙের পোস্টার ব্যবহার বা দেয়ালে সাঁটানো, দেয়াল লিখন, গেইট বা তোরণ নির্মাণ, বৈদ্যুতিক আলোকসজ্জা ইত্যাদির উপর যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা আছে, আমি বিনীতভাবে অনুরোধ জানাই, আগামী সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সকল প্রার্থী গণতন্ত্রের উজ্জীবিত হয়ে এগুলো যথাযথভাবে অনুসরণ করবেন এবং পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখবেন। নির্বাচন-পর্ব সময়ে মিছিল সহকারে শো-ডাউন, আপ্যায়ন ও ভোট কেনা বেচার বিরুদ্ধে সকলকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। বিশেষ করে মনোনয়নপত্র জমা প্রদানকালে চিরাচরিত শো-ডাউন কোনভাবেই বরদাশত করা হবে না এবং আচরণ বিধির এ জাতীয় লংঘন করা হলে তা ঐ প্রার্থীর প্রার্থিতা অনিশ্চিত করতে পারে। এবার প্রতি জেলায় শক্তিশালী মনিটরিং টিম নিয়োগ করা হয়েছে যারা প্রতিনিয়ত আচরণবিধি লংঘনের ঘটনা খুঁজে বের করার চেষ্টা করবে এবং তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

আশা করি সকল রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মীগণ এবং প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীগণ অত্যন্ত সতর্কতার সাথে আচরণবিধির প্রতিটি অনুশাসন নিজেরা মেনে চলবেন এবং তাদের সমর্থকদেরও মেনে চলতে বাধ্য করবেন। আমি আবারো সকল মহলকে স্মরণ করে দিচ্ছি যে আচরণবিধির কোন ব্যত্যয় কোন ভাবেই বরাদাশত করা হবে না। সকলের প্রতি আমি একই সাথে উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি আসুন আমরা সকলে আইন মনে চলার সুস্থ স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি গড়ে তুলি।

প্রিয় দেশবাসী,

একই দিনে সারা দেশে ৩০০ সংসদীয় আসনে আমাদের নির্বাচন করতে হয়। উপরন্তু আমাদের এ জনবহুল দেশে ভোটার সংখ্যাও বিশাল। এ বিরাট কর্মযজ্ঞ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষা করা অতি দুরূহ। তাই প্রতিবারের মতো এবারও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে, ভিডিপি, আনসার, পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও কোস্টগার্ড বাহিনীর সাথে সকলের প্রিয় ও আস্থাভাজন সশস্ত্রবাহিনীকেও নির্বাচনের জন্য দেশব্যাপী মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত আমরা গ্রহণ করেছি। আশাকরি সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় শান্তিপূর্ণভাবে একটা সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন জাতিকে উপহার দিতে পারবো ইনশাআল্লাহ। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে সরকারে নিজেদের পছন্দমতো প্রতিনিধি বেছে নেওয়ার অধিকার সকল ভোটারের। এটা শুধু সাংবিধানিক অধিকারই নয়, এটা আপনাদের মহান দায়িত্ব ও কর্তব্য। নিজ নিজ ভোটাধিকার  প্রয়োগের মাধ্যমে আপনার রায় প্রকাশ করে নিজের অধিকার আদায় করুন, নির্ভয়ে জাতীয় দায়িত্ব পালন করুন।

প্রিয় দেশবাসী,

২০০৮ সালের তুলনায় ভোটার সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা এবং নির্বাচনি কর্মকর্তাদের সংখ্যাও বেড়েছে। প্রচলিত নীতিমালা মোতাবেক ভোট কেন্দ্রের খসড়া তালিকা উপজেলা পর্য্যায়ে প্রকাশ করে তার উপর আপত্তি ও মতামত আহ্বান করা হয় এবং আপত্তি নিষ্পত্তি করে তা চুড়ান্ত করা হচ্ছে। নির্বাচনি কর্মকর্তাদের প্রাথমিক তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। তাদেরকে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে আইন মোতাবেক নিরপেক্ষভাবে তারা যেন অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে পারেন সে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

আমাদের সকলের প্রত্যাশিত একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের সাফল্য, নির্বাচন পরিচালনায় নিয়োজিত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পূর্ণ নিরপেক্ষতা ও দক্ষতার উপর বহুলাংশে নির্ভরশীল। জনস্বার্থে দায়িত্ব পালনের সময় সকল সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর পবিত্র দায়িত্বই হচ্ছে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ থাকা। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন সকল মহলের কাছে গ্রহণযোগ্য করার জন্য সকল সরকারি, আধাসরকারি ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের বিপুল কর্মী বাহিনী যারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নির্বাচনি দায়িত্ব পালন করছেন ও করবেন তাদের উদ্দেশ্যে আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই সকল ভয়ভীতির উর্ধ্বে থেকে আপনাদের উপর ন্যস্ত জাতীয় দায়িত্ব পালনে অবিচল থাকবেন। সকল অনভিপ্রেত প্রভাব ও অন্যায় দাবীকে উপেক্ষা করবেন। আপনাদের সব ধরনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা ইনশাল্লাহ আমরা করবো। আমার দৃঢ় বিশ্বাস এই দুরূহ ও পবিত্র দায়িত্ব পালনের চ্যালেঞ্জ আপনারা দৃঢ় প্রত্যয় ও সাহসের সাথে গ্রহণ করবেন। আপনারা এ দেশে জন্মেছেন এ দেশের মাটি, পানি, বাতাসে জীবন ধারণ করছেন এ দেশের অর্থে জীবিকা নির্বাহ করছেন এ দেশের স্বার্থই আজ আপনাদের একমাত্র লক্ষ্য হতে হবে। দেশের ঋণ পরিশোধ করার জন্য আজ ডাক এসেছে। সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে নির্ভয়ে আইন মোতাবেক কাজ করুন। নিশ্চয় আল্লাহ আপনাদের সহায়ক হবেন। এটাও উল্লেখ করতে চাই, নির্বাচনি দায়িত্ব পালনরত সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সকল কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করা হবে। নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন ১৯৯১ ও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ এ নির্দেশিত বিধানাবলী প্রয়োগ করতে আমরা দ্বিধাবোধ করবো না। আশা করি নিজেদের বিবেকবোধ ও সাধারণ মানুষের সচেতনতার কারণে নির্বাচন কাজে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তাদের দায়িত্বের প্রতি সজাগ থাকবেন।

প্রিয় দেশবাসী,

সংবিধান অনুযায়ী জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাব্য তারিখ বিবেচনায় নিয়ে আমরা ইতোমধ্যেই নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। আমরা অপেক্ষায় ছিলাম নির্বাচন কালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একটা সমঝোতায় আসবে সে আশায়। আগামী ২৪ জানুয়ারী ২০১৪ তারিখের মধ্যে এই নির্বাচন অনুষ্ঠান করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা থাকায় আমাদের পক্ষে আর অপেক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। নির্বাচন কমিশনে বিষয়টি সার্বিকভাবে পর্য্যালোচনা করে দশম জাতীয় সংসদ গঠন করার উদ্দেশ্যে প্রত্যেক নির্বাচনি এলাকা থেকে একজন সংসদ সদস্য নির্বাচনের জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের যে সময়সচী আমরা নির্দ্ধারণ করেছি তা আমি ঘোষণা করছি।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন

(ক) রিটার্নিং অফিসার/সহকারী : ২ ডিসেম্বর ২০১৩, সোমবার
রিটার্নিং অফিসারের নিকট
মনোনয়নপত্র দাখিলের
শেষ তারিখ

(খ) রিটার্নিং অফিসার কর্তৃক  : ৫ ডিসেম্বর ২০১৩ বৃস্পতিবার ও
মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের  ৬ ডিসেম্বর ২০১৩ শুক্রবার
তারিখ

(গ) প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ :  ১৩ ডিসেম্বর ২০১৩ শুক্রবার
তারিখ
(ঘ) ভোট গ্রহণের তারিখ :  ৫ জানুয়ারী, ২০১৪ রবিবার

প্রিয় দেশবাসী,

সকল রাজনৈতিক দল ও নেতৃবৃন্দের কাছে আমি আবারো উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি। দেশের উন্নতির জন্য, দেশবাসীর শান্তির জন্য গণতন্ত্রকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য আপনারা সমঝোতায় আসুন। দেশবাসীর কল্যাণের উপর আর কিছুই প্রাধান্য পেতে পারে না। একটি সুষ্ঠু, শান্তিপর্ণ এবং সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান করার জন্য মহামান্য রাষ্ট্রপতি, নির্বাচনকালীন সরকার ও নির্বাচন কমিশন অঙ্গীকারাবদ্ধ এবং দেশের সকল ভোটারদের আমি আজ এটুকুই আশ্বাস দিতে চাই যে, আপনারা যাতে ঘর থেকে বেরিয়ে নির্ভয়ে ভোট কেন্দ্রে যেতে এবং ভোট প্রদান করে নিশ্চিন্তে ঘরে ফিরে আসতে পারেন সে ব্যাপারে যা যা করা দরকার আমরা তাই করব। শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে শুধু পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, আনসার ও ভিডিপি নয় বরং এর পাশাপাশি দেশের অতন্দ্র প্রহরী ও জনগণের আস্থাভাজন সেনাবাহিনীর সদস্যদেরকেও নিয়োগ করা হবে। কোনভাবেই সন্ত্রাস, মাস্তানি বা পেশী শক্তির কাছে সাধারণ ভোটারদের জিম্মি হতে আমরা দেব না। শান্তপূর্ণ অবস্থায় নির্বাচন অনুষ্ঠান হবে ইনশাআল্লাহ।

আগামী ৫ জানুয়ারী ২০১৪ সালে সকল রাজনৈতিক দল, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, ছাত্রসহ সকল শ্রেণীর জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে এবং নির্বাচনের সাথে সম্পৃক্ত সকল শ্রেণীর সরকারি, আধাসরকারি ও বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় একটি আনন্দঘন পরিবেশে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, এ আশা ব্যক্ত করছি। সর্বশেষে আমি ব্যক্তিগতভাবে সবাইকে আশ্ব¯ করতে চাই যে, একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা আমরা গ্রহণ করব। আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ। পরম করুণাময় আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের সহায় হউন।

আল্লাহ  হাফেজ

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top