সকল মেনু

চাঁদপুরের মতলবে ব্যাটারির পানিতে ঝলসে দেয়া হয়েছে গৃহবধূর শরীর

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, চাঁদপুর:- মতলব উত্তর উপজেলার গজরা ইউনিয়নের ডুবগী গ্রামে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জের হিসেবে প্রতিপক্ষের ছোঁড়া অটোরিক্সার ব্যাটারির পানিতে কুরকুল বেগম (৪০) নামের এক গৃহবধূর শরীর ঝলসে গেছে। কুরকুল বেগম জানিয়েছেন, শনিবার রাতে তিনি নিজ বসতঘরে শুয়ে থাকা অবস্থায় একই গ্রামের প্রতিবেশী মৃত আমছর আলী প্রধানের ছেলে ইয়াছিন ডাকাত  (৩৫) জানালা দিয়ে তাকে লক্ষ্য করে এসিড জাতীয় কিছু নিক্ষেপ করে। ফলে তার দু’ পা ও দু’ হাত ঝলসে যায়। কুরকুল বেগম উপজেলার ডুবগী গ্রামের মোঃ উজ্জল প্রধানের স্ত্রী। কুরকুল বেগম মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানান কর্মরত চিকিৎসক।
কুরকুল বেগম জানায়, প্রতিবেশী ইয়াছিন, হাবিবুল্লাহ ও শাহজাহানের সাথে বাড়ির জায়গা নিয়ে দীর্ঘ প্রায় ১৫ বছর ধরে বিরোধ রয়েছে। ইয়াছিন তার উপর যখন এসিড নিক্ষেপ করে তখন হাবিবুল্লাহ ও শাহজাহান তার সাথে ছিলো। এ সময় তার স্বামী বাজারে ছিলো।
এ বিষয়ে ইয়াসিন ডাকাতকে আসামি করে মতলব উত্তর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মতলব উত্তর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নিক্ষিপ্ত পানি ছিল অটোরিক্সার ব্যাটারিতে ব্যবহৃত। আসামি ধরার জন্য তারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

চাঁদপুর শহরে ছাত্রদলের দু’গ্রুপের তান্ডব
আহত ১৫ ॥ বাসা-বাড়ি দোকান-পাটে হামলা ও ভাংচুর

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, চাঁদপুর।- রোববার বিকেল থেকে রাত প্রায় সাড়ে ৯টা পর্যন্ত চাঁদপুর শহরে  ছাত্রদলের দু’ গ্রুপ শহরজুড়ে তান্ডব চালিয়েছে। এ সময় মন্দির অফিস, দোকানপাট ও বাসা বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করা হয়। ওয়ার্ড ছাত্রদলের দু’ গ্রুপের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এ সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে উভয় গ্রুপের প্রায় ১৫ জন আহত হয়। সংঘর্ষ চলাকালে দু’ গ্রুপের নেতা-কর্মীরা জেলা বিএনপি কার্যালয়ের সামনে এবং কদমতলা সড়কে ককটেল বিস্ফোরণ ও ভাংচুর চালায়। আহতরা চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়। এদের মধ্যে গুরুতর আহত ১ জনকে ঢাকায় প্রেরণ করা হয়। আহতরা হলেন : শাহাদাত (১৯), নূরে আলম (২০), শরীফ বকাউল (২৬), জিলান (২১), শিপন (১৯), মেহেদী হাছান )২০) ও মাসুদ বেপারী (২১)।
জানা যায়, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবিতে রোববার বিকেলে ১৮ দলীয় জোটের আয়োজনে জেলা বিএনপি কার্যালয়ের সামনে থেকে মিছিল বের করা হয়। মিছিলের অগ্রভাগ জোড় পুকুর পাড় এলাকায় আসার পরই পেছনে থাকা ওয়ার্ডের ছাত্রদল নেতা ইসমাইল ও ইউসুফের সমর্থকদের মধ্যে পূর্ব শত্রুতা ও মিছিলে সামনে থাকা নিয়ে প্রথমে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। এক পর্যায়ে দু’ গ্রুপের সমর্থকরা জেলা বিএনপি কার্যালয়ের সামনে ফার্ণিচারের দোকান থেকে চেয়ার-টেবিল নিয়ে ভাংচুর করে ও ইট পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। সন্ধ্যার পর জেএম সেনগুপ্ত রোড ও কদমতলা এলাকায় আবার দু’ গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ চলে। এ সময় তারা দেশীয় ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করে। খবর পেয়ে মডেল থানা পুলিশের একটি দল সেখানে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এরপর রাত ৯টার দিকে ওই সন্ত্রাসীদের এক গ্রুপ পালপাড়া এলাকায় ঢুকে তান্ডব চালায়। এ সময় তাদের মুখ কালো কাপড় দিয়ে ঢাকা ছিলো বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়। তারা পালপাড়ায় শীতলা মন্দির অফিস, সুবলের কনক স্টোর, জীবন পালের আপন স্টোর, আবুল খায়ের শেখের সরকার স্টোর, রমনী তালুকদারের মুদি দোকান, জ্যোতিষ পালের মুদি দোকান, মিজানুর রহমান লিটনের বাড়ির গেইট, মান্নান মিজির বাড়ির গেইট, হারাধন দাসের বাড়ির গেইটসহ রাস্তার পাশে থাকা বিভিন্ন বাসা বাড়ির গেইট ও দোকানে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে। একই সময় তারা ট্রাক রোড বটগাছ তলা এলাকায়ও দোকানপাট ভাংচুর করে। এমন সন্ত্রাসী ঘটনায় ওইসব এলাকার মানুষ চরম আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। পথচারীরা ভয়ে দিগি¦দিক ছোটাছুটি করে।

প্রস্তুতি শেষের দিকে
চাঁদপুরে মাসব্যাপী বিজয় মেলা শুরু হচ্ছে ১ ডিসেম্বর
শাহ মোহাম্মদ মাকসুদুল আলম, চাঁদপুর।- আর ক’দিন পরই শুরু হতে যাচ্ছে চাঁদপুরবাসীর প্রাণের মেলা, সার্বজনীন মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা। পয়লা ডিসেম্বরের আর মাত্র দিন কয় বাকি। সেই লক্ষ্যেই খুব দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে বিজয় মেলার মাঠ ও মঞ্চের কাজ।
চাঁদপুর সরকারি হাসান আলী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রতি বছরের চেয়ে এ বছর একটু ব্যতিক্রমভাবে সাজানো হয়েছে মেলার মাঠ। অন্যান্য বছর যেমন মেলার ভেতরে প্রবেশ করতে হলে পূর্ব এবং পশ্চিম দিক দিয়ে হেঁটে গিয়ে মাঠের ভেতরে প্রবেশ করতে হতো। এবার দেখা গেছে তার চেয়ে একটু অন্য রকম। মাঠের চারদিকের দোকানগুলো আগের মতো সাজানো থাকলেও এবার মাঝের সারির স্টলগুলো সাজানো হয়েছে একেবারেই ভিন্ন রূপে। মাঠের প্রবেশ পথের পূর্ব এবং পশ্চিম পাশে উত্তর দক্ষিণ করে স্টলের দুটি সারি রয়েছে। যার কারণে এবার মেলার দর্শনার্থীরা গেইট থেকেই সরাসরি ভেতরে প্রবেশ করতে পারবেন এবং তার দু’পাশ দিয়ে সুন্দরভাবে মেলার ভেতরে প্রবেশ করা যাবে। এ ব্যাপারে কথা হয় মাঠ ও মঞ্চের আহ্বায়ক হারুন আল রশীদের সাথে। তিনি জানান, বিজয় মেলার দর্শক সমাগম বাড়ছে। বিশেষ করে সপ্তাহের প্রতি শুক্রবার মেলায় দর্শকের প্রচন্ড ভিড় হয়ে থাকে। তাই দর্শকের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করেই এবার একটু ব্যতিক্রম করে মাঠের স্টলগুলো সাজানো হয়েছে। অন্যান্য বছর যেমন মঞ্চের পূর্ব পাশের গেইটটি বন্ধ রাখা হতো, এবার দর্শকদের সুবিধার জন্য আমরা প্রতি শুক্রবার মঞ্চের পূর্ব পাশের গেটটি উন্মুক্ত করে দেবো। ইচ্ছে হলে দর্শকরা এখান দিয়েও বেরুতে পারবে।
১৯৯২ সালের ৮ ডিসেম্বর চাঁদপুর মুক্ত দিবসে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা যাত্রা শুরু করে হাঁটি হাঁটি পা পা করে এবার ২১ বছরে থেকে গৌরবের ২২ বছরে পদার্পণ করতে যাচ্ছে। প্রতি বছরের মতো এ বছরও ৮ ডিসেম্বর চাঁদপুর মুক্ত দিবসে আনুষ্ঠানিকভাবে এর উদ্বোধন করা হবে। এবারের মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনী প্রসঙ্গ নিয়ে কথা হয় বিজয় মেলা-২০১৩-এর চেয়ারম্যান অ্যাডঃ সলিমুল্লা সেলিম ও মহাসচিব অ্যাডঃ বদিউজ্জামান কিরণের সাথে। তারা বলেন, এবার মেলার উদ্বোধন কাকে দিয়ে করাবো এ ব্যাপারে এখনো ঠিক করা হয়নি। তবে আমরা ইতিমধ্যে মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান নিয়ে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, ডাঃ দীপু মনিসহ মেলার নেতৃবৃন্দের সাথে আলাপ আলোচনা করে যাচ্ছি। এছাড়া আগামী ২৭ নভেম্বর স্টিয়ারিং কমিটি ও মেলার সিনিয়র নেতৃবৃন্দসহ সকলের সঙ্গে আলোচনা করে মেলার বিষয়গুলো নির্ধারণ করা হবে এবং আগামী ৩০ নভেম্বর বিজয় মেলার সার্বিক কার্যক্রম নিয়ে বিকেল ৪টায় মেলা প্রাঙ্গণে উপদেষ্টা, ভাইস চেয়ারম্যান, যুগ্ম মহাসচিব এবং ১৫টি কর্ম পরিষদের আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবকে নিয়ে চূড়ান্ত সভা অনুষ্ঠিত হবে।
এদিকে পয়লা ডিসেম্বর থেকে চাঁদপুরের ঐতিহ্যবাহী মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার শুরু হচ্ছে বলে চাঁদপুরবাসীর মাঝে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। সবাই এখন অপেক্ষায় আছে চাঁদপুরবাসীর মিলন মেলা ও প্রাণের মেলা সার্বজনীন মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার জন্যে।

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে নির্বাচনী মাঠে এক ডজন মনোনয়ন প্রত্যাশী
শাহ মোহাম্মদ মাকসুদুল আলম, চাঁদপুর।-দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চাঁদপুর-৪ (ফরিদগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন কে পাচ্ছেন এ নিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে উচ্ছ্বাসের পাশাপাশি উদ্বেগও রয়েছে। একই সাথে বর্তমান এমপি বিএনপি থেকে দুঃসময়ে জেলায় একমাত্র দলের এমপি নির্বাচিত হওয়ায় বিএনপির নেতা-কর্মীরা তিনিই মনোনয়ন পাচ্ছেন এমন নিশ্চিত হলেও বসে নেই তার প্রতিন্দ্বদ্বীরা। মনোনয়ন পরিবর্তন করে নিজেদের দিকে নিয়ে আসতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চাঁদপুর জেলার ৫টি আসনের মধ্যে ফরিদগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত আসনটি ছাড়া বাকি আসনগুলোতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিজয়ী হন। ১৯৭৩ সালের পর অদ্যাবধি এ আসনটিতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জয়ী হতে পারেনি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তীরে তরি ডুবেছে আওয়ামী লীগের। আওয়ামী লীগ প্রার্থী অল্প ভোটের ব্যবধানে হেরে যান। আর এটিই ছিলো ৭৩ সালের পর থেকে ফরিদগঞ্জে আওয়ামী লীগ-বিএনপি জয়-পরাজয়ের মধ্যে সবচে’ কম ভোটের ব্যবধান। অবশ্য এ নিয়ে প্রধান দু’ মনোনয়ন প্রত্যাশী নির্বাচনের পর থেকে বিগত দ্’ু সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া সাংবাদিক শফিকুর রহমান এবং জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. মোহাম্মদ শামছুল হক ভূঁইয়ার পক্ষের লোকজনের মধ্যে রয়েছে বিরোধ। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী পরাজয়ের জন্য এক পক্ষ অপর পক্ষকে দায়ী করেছে। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব আরো তীব্রতর হয়েছে।
এদিকে বিএনপি তথা ১৮ দলীয় জোট এখনো নির্বাচনে আসবে কিনা তা নিশ্চিত না হলেও নির্বাচন এগিয়ে আসার সাথে সাথে বিএনপির মধ্যে থাকা অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব দিন গড়ানোর সাথে সাথে প্রকাশ্য রূপ নিচ্ছে। ইতিমধ্যেই গত নির্বাচনে বিএনপির টিকেটে এ আসন থেকে বিজয়ী কেন্দ্রীয় কমিটির প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি সংসদ সদস্য লায়ন হারুনুর রশিদের বিরুদ্ধে বিএনপি থেকে নির্বাচিত উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হাজী মোজাম্মেল ও শিল্পপতি এমএ হান্নান (বিএনপি থেকে ইতিপূর্বে বহিষ্কৃত) থানায় জিডি করেছেন। আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও উপজেলা বিএনপির সম্পাদক মোতাহার হোসেন পাটওয়ারী এখন পর্যন্ত প্রকাশ্যে কিছু না বললেও সংসদ সদস্য লায়ন হারুনুর রশিদের সাথে তার বিরোধ রয়েছে। ফলে সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জমে উঠেছে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের দৌড়-ঝাঁপ।
প্রায় ৫ লাখ লোকের আবাসস্থল এবং প্রবাসী অধ্যুষিত ফরিদগঞ্জ উপজেলায় ১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগের এমপি হিসেবে সর্বশেষ নির্বাচিত হন এম সফিউল্লা। এরপরর্ দীঘদিন জিয়াউর রহমান ও এরশাদের শাসনামলে ফরিদগঞ্জে একচেটিয়া দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক ও জমিয়াতুল মোদার্রেছিনের প্রতিষ্ঠাতা সাবেক ত্রাণ ও ধর্ম মন্ত্রী মাওঃ এমএ মান্নানের যুগ ছিলো। ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি জাকারিয়া চৌধুরী, বিএনপি থেকে মনোনয়ন পান তৎকালীন যুবদলের কেন্দ্রীয় নেতা আলমগীর হায়দার খান। এ নির্বাচনে আলমগীর হায়দার খান নির্বাচিত হওয়াসহ পর পর চার বার নির্বাচিত হয়ে ফরিদগঞ্জ উপজেলাকে বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে গড়ে তুলেন বলে বিএনপির দাবি। ২০০২ সালে আলমগীর হায়দার খান গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে আসনটি দলের অন্য মনোনয়ন প্রার্থীদের কাছে উন্মুক্ত হয়ে পড়ে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে নানা নাটক মঞ্চস্থ হয়। সর্বশেষ মাত্র ৩ দিন আগে  ধানের শীষের প্রতীক নিশ্চিত করে মাত্র সাড়ে ৭ হাজার ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়ে সকলকে চমকে দেন বর্তমান সংসদ সদস্য লায়ন মোঃ হারুনুর রশিদ। ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগের জাকারিয়া চৌধুরী মনোনয়ন পাওয়ার পর ১৯৯৬ সালে মনোনয়ন পান সাবেক এমপি এম সফিউল্লা। ২০০১ সালে বিশিষ্ট সাংবাদিক মুহাম্মদ শফিকুর রহমান মনোনয়ন পেলেও তিনি আলমগীর হায়দারের কাছ থেকে আসনটি পুনরুদ্ধার করতে পারেন নি। এরপর ২০০৬ সালের ১১ জানুয়ারির নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. মোহাম্মদ শামছুল হক ভূঁইয়া মনোনয়ন পেলেও ওয়ান ইলেভেনের কারণে সেই নির্বাচন বাতিল হয়ে যায়। পরবর্তীতে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে ড. মোহাম্মদ শামছুল হক ভূঁইয়ার পরিবর্তে আবারো মনোনয়ন পান সাংবাদিক মুহম্মদ শফিকুর রহমান।
২০১৪ সালের নির্বাচনকে সামনে রেখে আবারো মনোনয়ন যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। পরপর দুই বারের মনোনীত প্রার্থী সাংবাদিক মুহম্মদ শফিকুর রহমানের সমর্থকরা জানান, তিনি গত দু’ বার মনোনয়ন না চাইলেও নেত্রী দেয়ায় তিনি নির্বাচন করেছেন। এবার তিনি নিজেই মনোনয়ন চাইবেন। অন্যদিকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. মোহাম্মদ শামছুল হক ভূঁইয়া ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন না পাওয়ায় ফরিদগঞ্জ উপজেলার রাজনীতি নিয়ে প্রথমাবস্থায় তেমন মাথা না ঘামালেও তার বাড়ি ফরিদগঞ্জে হওয়ায় পরবর্তীতে তিনি ফরিদগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগসহ অঙ্গ-সংগঠনগুলোকে ঢেলে সাজাতে শুরু করেন। ইতিমধ্যে তিনি আওয়ামী লীগের ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ের সম্মেলন শেষে নতুন কমিটি গঠন করে নেতা-কর্মীদের মনোবল সুদৃঢ় করেছেন বলে তার সমর্থকরা জানান। গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে প্রতিটি ইউনিয়নে বর্ধিত সভা করাসহ নানাভাবে মাঠ গোছানোর কাজ শুরু করেন। ক’দিন আগে যুবলীগের মান-অভিমানের পালা সমাধান করেছেন। ফলে তার সমর্থকরা ধরেই নিয়েছেন আগামী সংসদ নির্বাচনে তিনি মনোনয়ন পাচ্ছেন। তাছাড়া আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে তিনি সঠিক ও যোগ্য লোক মনোনয়ন দিলে আগামী সংসদ নির্বাচনে এ আসনটি উপহার দেয়ার চ্যালেঞ্জ ঘোষণা করায় অনেকটাই উজ্জীবিত তার সমর্থকরা। এদিকে এই দু’জনের বাইরে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে অ্যাডঃ নূর হোসেন বলাই ব্যানার ফেস্টুন দিয়ে ফরিদগঞ্জ উপজেলার আনাচে-কানাচে তার অবস্থান জানান দেয়ার পাশাপাশি মাঝে মাঝে এলাকায় ঘুরে মনোনয়ন যুদ্ধে শরিক হয়েছেন। তার বিশ্বাস এবার নতুন প্রার্থী আসবে এ আসনে। এছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ও বিএমএ’র সভাপতি ডাঃ হারুনুর রশিদ সাগর উপজেলার প্রতিটি এলাকায় জনগণের মাঝে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের মাধ্যমে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের কাতারে নাম লিখিয়েছেন। তিনিও নানাভাবে গণসংযোগ ও সভা-সমাবেশ করে মনোনয়ন যুদ্ধে আছেন। ফরিদগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগকে চাঙ্গা করতে কাজ করা চাঁদপুর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডাঃ দীপু মনির ফুফাতো ভাই সাবেক এমপি মরহুম অ্যাডঃ সিরাজুল ইসলাম পাটওয়ারীর ছেলে জাহিদুল ইসলাম রোমানের নাম আলোচনায় রয়েছে। এদিকে প্রধানমন্ত্রীর সাথে তৃণমূলের বৈঠকে দেয়া জরিপে আরো ক’জনের নাম রয়েছে বলে জানা গেছে। সর্বশেষ গত ১০ নভেম্বর থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু হওয়ায় মাঠে ন্যূনতম অবস্থান রয়েছে এর বাইরেও আরো ক’জন মনোনয়নপত্র ক্রয় করেছেন। তবে অনেকেই আবার মূল প্রার্থীর (তাদের কাঙ্খিত) ড্যামি হিসেবেও দলের মনোনয়নপত্র ক্রয় করেন। যাকে পরবর্তীতে নিজে সর্মথন দিয়ে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে পারেন।
অন্যদিকে বিএনপি নির্বাচন করলে এ আসনে বিএনপি থেকে নির্বাচিত বর্তমান সংসদ সদস্য কেন্দ্রীয় কমিটির প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি লায়ন হারুনুর রশিদের মনোনয়ন পাওয়া নিশ্চিত বলে তার সমর্থকরা জানান। বিগত সংসদ নির্বাচনে তিনি বিজয়ী হওয়ার পর থেকে উপজেলার প্রতিটি প্রান্তরে দিনের পর দিন ঘুরে ঘুরে বিএনপির নেতা-কর্মী ও সাধারণ জনগণের মধ্যে নিজের অবস্থান চিহ্নিত করতে পেরেছেন। উপজেলা বিএনপির কমিটি গঠনের পর নিজে সভাপতি হিসেবে থেকে দলকে চাঙ্গা করার চেষ্টা করছেন। নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠনের মাধ্যমে ইতিমধ্যেই তিনি যুবদলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে প্রাণের সঞ্চার সৃষ্টি করেছেন। প্রতিটি মিছিল-সমাবেশেই তাদের উপস্থিতি লক্ষ্যণীয়। গত ২৫ অক্টোবরের ত্রিমুখী সংঘর্ষে নিহত তিন নেতাই যুবদলের সক্রিয় কর্মী। তবে ছাত্রদলকে এখনো পুরোপুরি সাজাতে পারেননি সংসদ সদস্য। গত ৫ বছরে দলের নতুন মুখ হয়েও দলের কান্ডারী হিসেবে নিজেকে পরিণত করার ফলে আগামী সংসদ নির্বাচনে তার মনোনয়ন না পাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো কারণ থাকতে পারে বলে বিশ্বাস করেন না উপজেলা বিএনপির নেতা-কর্মীরা। অপর দিকে এ নির্বাচনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন পাওয়ার জন্য মাঠে থাকার পাশাপাশি জোর তদবির করে যাচ্ছেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও উপজেলা বিএনপির সম্পাদক মোতাহার হোসেন পাটওয়ারী, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী মোজাম্মেল, বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত বিশিষ্ট শিল্পপতি এমএ হান্নান, জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক ফাউন্ডেশনের সভাপতি হুমায়ুন কবির বেপারী। তবে লায়ন হারুনুর রশিদ মনোনয়ন পেলে স্বতন্ত্র নির্বাচন করবেন বলে ইতিমধ্যে ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন এমএ হান্নান। বিএনপি নির্বাচনে এখনো যাবে কি না সেটি নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে মনোনয়ন নিয়ে নিজেদের মধ্যে বিরোধ ক্রমশ প্রকাশ্য রূপ নিচ্ছে। শারদীয় দুর্গোৎসব ও পরবর্তীতে ঈদুল আযহায় এমপির সাথে এমএ হান্নানের ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হাজী মোজাম্মেলের বিরোধ তুঙ্গে উঠে। এর বাইরে উপজেলা বিএনপির সম্পাদক মোতাহার হোসেন পাটওয়ারীর সাথে পৌরসভার নির্বাচনকে নিয়ে সৃষ্ট বিরোধ দিন দিন ভারী হচ্ছে। এছাড়া পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন ঝুলিয়ে পুরো উপজেলায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন হুমায়ুন কবির বেপারী। আরো বেশ ক’জন প্রার্থী রয়েছেন যারা মাঠে অবস্থান না করলেও দলের মনোনয়ন চাইতে পারেন। জাতীয় পার্টি থেকে এ পর্যন্ত কোনো প্রার্থীর নাম শোনা না গেলেও এককভাবে নির্বাচন করলে কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মোতাহার পাটওয়ারী, সিপিবি ও বাসদ থেকে বাসদের উপজেলা সমন্বয়ক হারুন-অর রশিদের নাম আলোচনায় রয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top