সকল মেনু

নির্বাচনে ব্যস্ত আ.লীগ, সংলাপের দায় বিএনপির

 image_62563_0আছাদুজ্জামান,হটনিউজ২৪বিডি.কম,ঢাকা: নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে সংলাপ সমঝোতার প্রস্তাব এখনো জিইয়ে রাখলেও প্রধান বিরোধী দল বিএনপিকে ছাড়াই নির্বাচনী ছক আঁকছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তবে সংলাপের দায় এখন তারা বিএনপির ওপরই চাপিয়েছে। বিরোধী দল সংলাপের জন্য এগিয়ে এলেই কেবল আওয়ামী লীগ সংলাপের টেবিলে বসতে রাজি। নিজ গরজে আর নতুন করে আমন্ত্রণ নয়। কারণ তারা ইতিমধ্যে এ ব্যাপারে সর্বোচ্চ উদারতা দেখিয়েছে বলে মনে করছে। সুতরাং এটা পরিষ্কার যে, সংলাপ হওয়া না হওয়া এখন নির্ভর করছে বিএনপির ওপর। সরকারের পক্ষ থেকে আর কোনো উদ্যোগ নেয়া হবে না। এখন বিএনপি চাইলে সংলাপ হবে অন্যথায় নয়।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ড  লীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘আওয়ামী লীগ চায় বিএনপি নির্বাচনে আসুক। কাউকে বাদ দিয়ে নির্বাচনের যাওয়ার পক্ষে না আমরা। এমনকি বিএনপিকে আলোচনার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। কিন্তু বিএনপি আসেনি। তবে প্রধানমন্ত্রীর সে আমন্ত্রণ এখনো বহাল আছে। তারা চাইলে যেকোনো সময়ে আলোচনা হতে পারে।’

তবে সাথে তিনিও এও বললেন যে, ‘বিএনপি এখন জামায়াতের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে। জামায়াত চাইছে দেশে একটি অরাজকতা সৃষ্টি করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করতে। বিএনপি তাদের কথা অনুযায়ী কাজ করছে।’ অতএব বিএনপি সমঝোতার লক্ষ্যে আলোচনায় আসবে এমনকি তিনি মনে করছেন না।

চলছে মনোয়নয়পত্র সংগ্রহ, চাঙ্গা আওয়ামী লীগ
নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে জটিলতার অবসান না ঘটলেও দলীয় মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু করে দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ফলে স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে পরাজয়ের পর তৃণমূল পর্যায়ে নেতাকর্মীদের মনবল ভেঙে গেলেও এখন নতুন করে চাঙ্গা হয়ে উঠছে তারা। সব দ্বন্দ্ব বিভেদ ভুলে আবার বিরোধী দলের আন্দোলন মোকাবেলা এবং নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে দলের নেতাকর্মীরা।

ব্যাপক উৎসাহ আর উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে শুরু হয়েছে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র বিতরণ ও জমার কাজ। প্রথম দিন থেকেই মনোনয়ন প্রত্যাশীরা বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলীয় কার্যালয়ের সামনে উপস্থিত হচ্ছে মিছিল নিয়ে। নতুন করে তৃণমূল নেতা-কর্মীরা আসতে শুরু করেছে ঢাকায়।

দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে আওয়ামী লীগের নেতারা নিজ নিজ এলাকায় শুরু করে দিয়েছেন নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা। যাচ্ছেন ভোটাদের দ্বারে দ্বারে। নিয়মিত চালিয়ে যাচ্ছেন সভা-সমাবেশ মিটিং মিছিল।

১০ নভেম্বর সকালে ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে মনোনয়ন ফরম বিতরণ কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। প্রথম ফরমটি কেনা হয় দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার জন্য গোপালগঞ্জ-৩ আসনের। এরপর দলের দ্বিতীয় ফরমটি কেনেন সৈয়দ আশরাফ কিশোরগঞ্জ-১ আসনের। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গোপালগঞ্জ-৩ ছাড়াও নড়াইল-১ এবং রংপুর-৬ আসনেরও ফরম সংগ্রহ করেছেন।

১৬ নভেম্বর শনিবার পর্যন্ত মনোনয়নপত্র বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ২৪৩টি আর জমা পড়েছে ১ হাজার ২০০ এর বেশি। আগামী ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে কার্যক্রম।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস বলেন, ‘নির্বাচনী ফরম বিক্রির শুরুতেই নিতাকর্মীদের মধ্যে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা পরিলক্ষিত হচ্ছে। আওয়ামী লীগ জন্মলগ্ন থেকে একের পর এক লড়াই-সংগ্রাম করে বিজয়ের মুকুট ছিনিয়ে এনেছে। এবার আমরা যখন নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি নিয়ে এগিয়ে চলছি তখন বিরোধী দল নির্বাচন বানচালের জন্য হরতাল দিয়ে নির্বাচন প্রতিহতের চেষ্টা করছে। এসবকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করে বিজয়ের মুকুট ছিনিয়ে আনবে  আবার।’

বিএনপিকে ছাড়াই সর্বদলীয় সরকার
প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবিত সর্বদলীয় মন্ত্রিসভার অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের দিকে হাঁটছে আওয়ামী লীগ। ইতিমধ্যে এ মন্ত্রিসভা গঠনের কাজও গুছিয়ে নিয়েছে তারা। মহাজোটের শরিকদের সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করা হয়েছে কাকে কাকে এতে স্থান দেয়া হবে। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এলে এ মন্ত্রিসভার গঠন কেমন হবে আর না এলে কেমন হবে সে রূপরেখাও ঠিক করে রেখেছে আওয়ামী লীগ।

তবে প্রাথমিকভাবে মন্ত্রিসভা গঠনের জন্য ১৭ অথবা ২০ নভেম্বর সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। এ মন্ত্রিসভার দায়িত্ব বণ্টনের একটি খসড়া তালিকাও করা হয়েছে।

অনেকে ধারণা করছেন, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের প্রবীণ দুই নেতা আমির হোসেন আমু ও তোফায়েল আহমেদ নির্বাচনকালীন এই মন্ত্রিসভায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পাবেন। তবে একটি সূত্র জানিয়েছে, তোফায়েল আহমেদ এবারও সর্বদলীয় সরকারে থাকছেন না। সম্প্রতি তাকে প্রস্তাব করা হলে দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রীকে বিনয়ের সঙ্গে বলেছেন, ‘বিগত মন্ত্রিসভায় যোগদান করিনি, এবারও করব না।’

তবে শেখ হাসিনা চান আমু-তোফায়েল সর্বদলীয় সরকারে থাকুন। উপদেষ্টা পরিষদের ঘনিষ্ঠ কয়েকজনকে এমনই আভাস দিয়েছেন।

আওয়ামী লীগ সূত্র জানিয়েছে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সর্বদলীয় মন্ত্রিসভায় যারা থাকছেন তারা হলেন- স্থানীয় সরকার মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, বাণিজ্যমন্ত্রী জিএম কাদের, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার, প্রেসিডিয়াম সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। তবে মন্ত্রিসভার কাঠামোর ওপর নির্ভর করে আরও কিছু নতুন মুখ আসতে পারে।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নূহ-উল আলম লেনিন বলেন, ‘সংবিধান মোতাবেক নির্বাচন করতে দ্রুততম সময়ের মধ্যেই সর্বদলীয় সরকার গঠন করা হবে। বিএনপি এলে অবশ্যই তাদেরও মন্ত্রিসভায় রাখা হবে।’

বিএনপির বিকল্প বিরোধী জোট গঠনে তৎপরতা
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট নির্বাচনে অংশ নিলে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের জোট হিসেবে মহাঐক্য জোটে নির্বাচনে অংশ নেবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট।

আর যদি বিএনপি  মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি ছোট ছোট দলগুলোকে একত্রে করে একটি বিরোধী জোট বানিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের চেষ্টা করবে আওয়ামী লীগ। সে পরিকল্পনা মোতাবেক কাজ শুরু করে দিয়েছে তারা। ১৪ দলীয় জোটের শীর্ষস্থানীয় একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।

এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির (জেপি) এবং পঙ্কজ ভট্টাচার্যের ঐক্য ন্যাপের সঙ্গে বৈঠক করে ১৪ দল। তরিকত ফেডারেশনও ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগের সর্বদলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

অন্যদিকে মহাজোটের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ মহাজোট ছেড়ে নতুন জোট গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন। মহাজোট ভেঙে যাচ্ছে বলেও দাবি করছেন তিনি। তবে এতে আওয়ামী লীগ খুশিই। আওয়ামী লীগ নেতারা মুখে এটাকে এরশাদের রাজনৈতিক স্টান্টবাজি বললেও ভিতরে ভিতরে মহাখুশি মহাজোটের নেতারা। কারণ তারা মনে করছে, আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিলে এরশাদের জোটকে বিরোধী দল হিসেবে পাওয়া যাবে। এতে এককভাবে নির্বাচন করার অভিযোগ থেকে মুক্তি পাবে আওয়ামী লীগ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, ‘এরশাদ জোট গঠন করছে এতে আওয়ামী লীগের জন্য কোনো ক্ষতি হবে না বরং লাভই হবে। বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার কথা বলে যে দুশ্চিন্তার মধ্যে ফেলে দিয়েছিল এরশাদ নতুন জোট গঠন করলে তা থেকে মুক্তি পাবে আওয়ামী লীগ।’

ইশতেহার প্রণয়ন ও প্রাথী বাছাইয়ে ব্যস্ত আওয়ামী লীগ
নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়ন, প্রার্থী বাছাই, দলের জনপ্রিয়তা মূল্যায়ন জরিপের কাজে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টারা এবং আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা। শেখ হাসিনাকে চেয়ারম্যান করে গঠিত আওয়ামী লীগের নির্বাচনী পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন এইচটি ইমাম। প্রধানমন্ত্রীর জন প্রশাসন বিষয়ক এই উপদেষ্টা আওয়ামী লীগের নির্বাচনী কর্মকাণ্ডের একটা বড় অংশের সঙ্গে সম্পৃক্ত। আর শিক্ষা উপদেষ্টা ড. আলাউদ্দিন আহমেদ দলীয় প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়ার সঙ্গে তিনি নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের একজন যুগ্মসাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে যে প্রার্থী তালিকা তৈরি করা হচ্ছে সেই তালিকা প্রণয়ণের অন্যতম দায়িত্বশীল ব্যক্তি ড. আলাউদ্দিম আহমেদ। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের এই সদস্য সম্প্রতি দলটির নির্বাচন সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।’

এছাড়া সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নূহ-উল আলম লেনিন, কাজী জাফর উল্লাহ, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত নির্বাচনী ইশতেহার, নির্বাচনকালীন সরকার, প্রার্থী বাছাইয়ের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ বলেন, ‘নির্বাচনী ইশতেহার এবং স্লোগান তৈরির কাজ শেষ। এখন সেন্ট্রাল কমিটির বৈঠক করে সাইন করার বাকি আছে। আর ১৮ নভেম্বর থেকে প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ শুরু হবে।’

অবশ্য প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা পরিষদের এক সদস্য জানান, আওয়ামী লীগের প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। এখন মনোনয়নপত্র বিক্রি শেষে শুধু ঘোষণা হবে- কাকে কোন আসনে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হচ্ছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top