সকল মেনু

শান্তি চাই প্রধানমন্ত্রীত্ব নয়

রোববার সকালে একটি অনুষ্ঠানে বিরোধীদলীয় জোটের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে ‘জ্বালও-পোড়াও’ এর ঘটনা তুলে ধরে তিনি বলেন, “বিশ্বাস করেন, যখন দেখি এভাবে মানুষ পোড়ায়, তখন এতো কষ্ট লাগে, মনে হয় প্রধানমন্ত্রীত্ব দরকার নাই।

“আমি প্রধানমন্ত্রীত্ব চাই না। মানুষের শান্তি চাই। এতো কষ্ট সহ্য হয় না।”

নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের হরতালকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সময়ে যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করা হচ্ছে। এসব ঘটনায় বেশ কয়েকজনের মৃত্যুও হয়েছে।

সর্বশেষ গত সপ্তাহের হরতালে কভার্ড ভ্যানে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় মনির নামের এক কিশোর অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যায়।
জাতীয় খতিব ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ইমামদের সম্মেলন ও শিশু-কিশোর সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের সনদ ও পুরস্কার বিতরণ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।  সমস্যা সমাধানে বিরোধীদলীয় নেতাকে ফোন করে আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানানোর বিষয়টি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তার আমন্ত্রণে বিরোধীদলীয় নেতা হরতাল প্রত্যাহার করেননি, আলোচনাতেও আসেননি।ইসলামের উন্নয়নে আওয়ামী লীগকে আবারো নির্বাচিত করতে আলেম-ওলামাদের সহযোগিতা চান দলীয় সভানেত্রী। তিনি বলেন, “আর যেন বাংলাদেশে কোরআন শরীফের আবমাননা না হয়, এজন্য আপনাদের সহায়তা চাই।”গত পাঁচ মে হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচি ঘিরে বায়তুল মোকাররমের সামনে বিভিন্ন দোকানে শতাধিক কোরআন শরীফ পোড়ানোর ঘটনা ঘটে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বিএনপি-জামায়াত-হেফাজত আজ এক হয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার বন্ধ করেত মরিয়া হয়ে উঠেছে।”

সন্ত্রাস ও মাদকের বিরুদ্ধে নাগরিকদের সচেতন করার জন্য আলেম ও ওলামাদের প্রতি আহবান জানান তিনি।

খতিব, ইমাম ও ওলামা-মাশায়েখদের প্রতি শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, ইসলামের প্রচার-প্রসারে আলেম-ওলামাদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। আলেম-ওলামারা ‘ওয়ারেসাতুল আম্বিয়া’ হিসাবে যুগ যুগ ধরে এ দায়িত্ব পালন করে আসছেন। সমাজে কোনো অসঙ্গতি দেখলে আলেম-ওলামারা মানুষকে হেদায়েতের পথে আহবান করতেন।”

সেই দাওয়াতের পথ এখন অনেকটাই রুদ্ধ হয়ে গেছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এখন তারা অনেকেই দাওয়াতের পথ থেকে সরে এসে দেশের মুসলমানদেরকে আস্তিক ও নাস্তিকে বিভাজন করার খেলায় মেতে উঠেছেন।”

ব্যক্তিগতভাবে ‘ধর্মীয় অপপ্রচারের’ শিকার হওয়ার কথাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “আমার দিন শুরু হয় কোরআন শরীফ পড়ে। আর বলা হয় যে, আমার দাদী হিন্দু ছিলেন। কি দুর্ভাগ্য আমাদের, এভাবে মিথ্যা অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। এই মিথ্যার হাত থেকে বাঁচতে চাই।”

কওমি মাদ্রাসা শিক্ষাকে সরকারি সনদের আওতায় আনার উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে দুটি ধারায় প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মীয় শিক্ষা পরিচালিত হচ্ছে। একটি আলিয়া ধারা। অপরটি কওমি ধারা। আলিয়া ধারার শিক্ষা কার্যক্রমে সরকারি স্বীকৃতি থাকায় আরিয়া মাদ্রাসা থেকে পাস করা শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকরির সুযোগ পাচ্ছেন। কিন্তু কওমির শিক্ষার্থীদের শিক্ষা সনদে সরকারি স্বীকৃতি না থাকায় তারা এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত।”

এ কারণে সরকার কওমি শিক্ষাকে সরকারি সনদের আওতায় আনার উদ্যোগ নিলেও কেউ কেউ এর ‘ভুল ব্যাখ্যা’ করছেন বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “এটা বাধ্যতামূলক নয়। যারা চাইবেন না- তারা আসবেন না। এটা তো জবরদস্তি না। কেউ চাইলে নেবে। কেউ চাইলে নেবে না। কোন এমন কোনো কাজ করবো, যাতে লাশ পড়ে?”

একটি কমিশনের প্রতিবেদনের আলোকিই কওমি মাদ্রাসা শিক্ষাকে সরকারি সনদের আওতায় আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “যিনি ওই কমিশনের প্রধান ছিলেন, তিনিই হুমকি দিলেন যে এটা করা হলে লাশ আর লাশ পড়বে।”

ইসলামের উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও বক্তৃতায় তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “আমরা যা বিশ্বাস করি, তাই করার চেষ্টা করি। ইসলাম আমার ধর্ম। তাই স্বাভাবিকভাবে ইসলামের খেদমতে আমি যা করছি, তা আমার বিশ্বাসের গভীর অনুভূতি থেকেই করছি।”

ফতোয়া সংক্রান্ত সুপ্রিম কোর্টের রায় বাস্তবায়নের জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি ফতোয়া বোর্ড গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলেও শেখ হাসিনা জানান।

তিনি বলেন, এতে দেশের প্রতিটি জেলার শীর্ষস্থানীয় আলেম-ওলামা ও মুফতি-মুফাস্সিরদের সম্পৃক্ত করা হবে।

মুহাম্মদ ইউনূসের সমালোচনা করে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজাল বলেন, “৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে ড. ইউনূস কীভাবে সমকামীতাকে সমর্থন করেছেন! তার বিচার চাই।”

এ সময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত আলেম-ওলামারা ‘বিচার চাই, বিচার চাই, ইউনূসের বিচার চাই’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন।

জাতীয় খতিব কাউন্সিলের আহবায়ক জালাল উদ্দিন আল কাদেরী বলেন, “যারা আজ ইসলাম প্রতিষ্ঠার নামে সন্ত্রাসের পথ বেছে নিয়েছে, তাদের সঙ্গে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নাই।”

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. শাহজাহান মিয়ার সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে ধর্ম সচিব কাজী হাবিবুল আউয়াল অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যের আগে জাতীয় খতিব ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ইমামদের সম্মেলন ও শিশু-কিশোর সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে সনদ ও পুরস্কার বিতরণ করেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top