সকল মেনু

আওয়ামী লীগকে আগামীতে ভোট দেবেন : হাসিনা

PM1_3893======4=5 বড়লেখা মৌলভীবাজার প্রতিনিধি,হটনিউজ২৪বিডি.কম:  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপির জন্ম সেনা শাসকের হাত ধরে। তাই দলটি গণতন্ত্রের ভাষা বোঝে না। শনিবার মৌলভীবাজার বড়লেখা ডিগ্রি কলেজ মাঠে এক জনসভায় তিনি এ কথা বলেন। শেখ হাসিনা বলেন, “বিএনপির জন্মই হয়েছিল এক মিলিটারি ডিকটেটরের পকেট থেকে। তারা ক্ষমতায় আসে মানুষের সম্পদ লুটে নিতে। তারা গণতন্ত্রের ভাষা বোঝে না। “আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই উন্নয়ন হয়। মাত্র চার বছরে এতো উন্নয়ন অতীতে কোনো সরকার পারে নাই।”

সমাবেশে বিরোধীদলের সমালোচনার পাশাপাশি দেশের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে এবং এর ধারাবাহিতকার জন্য দেশবাসীকে আবারো নৌকা প্রতীকে ভোট দেয়ার আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “নৌকায় ভোট দেবেন। আমরা যুদ্ধাপরাপধীদের বিচার শুরু করেছি। তাও কার্যকর করব।”

আবার সুযোগ পেলে প্রত্যেক উপজেলায় একটি করে সরকারি করে স্কুল ও কলেজ করার পাশাপাশি ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার আশ্বাসও দেন তিনি। স্থানীয় আওয়ামী লীগ এই জনসভার আয়োজন করে। শেখ হাসিনা স্থানীয় উন্নয়নের আশ্বাস দিয়ে বলেন, “ইনশাল্লাহ ক্ষমতায় আসতে পারলে বড়লেখা ডিগ্রি কলেজ সরকারি করে দেব। আতরের কারখানা যাতে ক্ষুদ্র শিল্প হিসাবে গড়ে ওঠে সে ব্যবস্থা নেব। মৌলভীবাজরে চা নিলাম কেন্দ্র করে দেয়া হবে।”

চা শ্রমিকদের উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকারের পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “চা শ্রমিকদের জন্য অনেক সুযোগ সুবিধা সৃষ্টি করেছি। এবার প্রতিদিন চা শ্রমিকদের বেতন ৭০ টাকা করেছি।”

কুলাউড়া থেকে শাহবাজপুর রেললাইন নির্মাণের কাজ শুরু হওয়ার কথাও বলেন শেখ হাসিনা।

এই অঞ্চলের গ্যাস সংযোগ দীর্ঘায়িত হওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “কুলাউড়ার মামলা করে গ্যাস লাইনের কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। আমি বলব, মামলা তুলে নেন। বড়লেখায় গ্যাস আসতে দিন।”

সকাল থেকেই বড়লেখা উপজেলা এবং আশেপাশের এলাকা থেকে জনগণ সমাবেশস্থলে সমবেত হতে থাকে। অনেকেই আসেন দশ কিলোমিটার পথ হেঁটে। বিকাল ৩টার কিছু পর সমাবেশস্থলে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী, তখন বড়লেখা ডিগ্রি কলেজ মাঠ ছিলে নারী-পুরুষে পূর্ণ। মাঠ পূর্ণ হয়ে যাওয়ায় সামনের রাস্তা, কলেজের বারান্দা ও ছাদে দাঁড়িয়ে মানুষ প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ শুনেন।

সমাবেশে প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা একাধিকবার থামাতে হয় লাখো মানুষের মুহুর্মুহু ‘জয় বাংলা’ আর ‘শেখ হাসিনা’ স্লোগানে।

সমাবেশস্থল থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার পর্যন্ত পথের দু’পাশে নারী-পুরুষ দাঁড়িয়েছিলেন শেখ হাসিনার বক্তব্য শোনার জন্য।

বর্তমান সরকারের সময়ে দশ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন করার কথাও প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে তুলে ধরেন।

বিরোধীদলের হরতাল কর্মসূচির সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, “গত চার তারিখে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা শুরু হয়েছে, আমি বিএনপি নেত্রীকে অনুরোধ করলাম, হরতাল দিয়েন না। অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে হয়, উনি ওই চার তারিখেই হরতাল দিলেন। উনি পেলেনটা কি? উনি কতগুলো মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করলেন। মনির হোসেনের মতো শিশুকে আগুন দিয়ে হত্যা করেছেন।”

“মানুষ যখন পুড়ে মরে, তারা তখন হাসে। এরা কি মানুষের জাত?”

বিরোধীদলীয় নেতার শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, “বিএনপি নেতা খালেদা জিয়া, যখন এসএসসি পরীক্ষা দেয় তখন তিনি খালেদা বেগম। উনি অংক আর উর্দু ছাড়া সব বিষয়ে ফেল করেছেন। তাই উনি চায় আমাদের সন্তানরা মূর্খ হয়ে থাকুক।”

“উনি ওনার ছেলেদের লেখাপড়ার জন্য সরকারের কাছ থেকে টাকা নিয়েছিলেন। কী শিখিয়েছে? দুর্নীতি, সন্ত্রাস, অর্থ পাচার আর গ্রেনেড হামলা শিখিয়েছেন।”

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের শরিক জামায়াতে ইসলাম এবং হেফাজতে ইসলাম প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, “ওনার (খালেদা জিয়া) সাথে জামাত আর হেফাজতে ইসলাম। এরা ইসলামের নামে রাজনীতি করে। যারা মসজিদে আগুন দেয় আর কোরআন শরীফ পোড়ায় তারা কীভাবে ইসলামের হেফাজত করে?”

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়ার যৌক্তিকতা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “আওয়ামী লীগকে আগামীতে ভোট দেবেন এই কারণে- আওয়ামী লীগ দেশের উন্নয়ন করে। গতবার যেমন মোবাইল ফোন দিয়েছি। এবার, ইন্টারনেট ল্যাপটপ দিয়েছি, হাতে হাতে।”

“আমরা এই জাতিকে শিক্ষিত জাতি হিসাবে গড়ে তুলতে চাই। মাধ্যমিক পর্যন্ত বিনা পয়সায় বইয়ের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি; লেখাপড়ার।”

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিরোধীদলীয় নেতা হাজিরা না দিয়ে বারবার সময় নেয়ার কথাটি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “দুঃখের বিষয়, মাননীয় বিরোধীদলীয় নেত্রী প্রধানমন্ত্রী অরফানেজের টাকা মেরে খেয়েছেন। কোর্টের হাজিরা দেন না। ওনার মনে সততা নেই, যে কোর্টে গিয়ে দাঁড়াবেন।”

বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের সময়ে স্থানীয় সাংসদ শাহাব উদ্দিন তৎকালীন সরকারদলীয় ক্যাডারদের হামলার শিকার হন। শেখ হাসিনা তার বক্তব্যের শুরুতেই তা উল্লেখ করে বলেন, “মৃত্যুর কোল থেকে শাহাবুদ্দিন ফিরে এসেছিল।”

জনসভায় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, “আমরা দেশে জঙ্গিবাদ নির্মূল করেছি। কিন্তু, নির্বাচনকে সামনে রেখে তারা আবার মাথাচারা দিচ্ছে। সেটা আর হতে দেয়া যাবে না।”

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু ২০০৬ সালে আব্দুল জলিল ও আব্দুল মান্নান ভুইয়ার মধ্যে আলোচনার কথা উল্লেখ করে বিরোধীদলীয় নেতাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “সেদিন যদি আপনি আলোচনা সফল করতে দিতেন, তাহলে আর মহাসচিব পর্যায়ের আজ আলোচনার দরকার ছিল না। আপনি সে আলোচনা সফল হতে দেননি বলেই ওয়ান ইলেভেনের সৃষ্টি হয়েছিল।”

“আপনি আলোচনায় না এসে অরাজকতা সৃষ্টি করছেন,” বিরোধীদলীয় নেতাকে উদ্দেশ্য করে বলেন আমু।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, “শেখ হাসিনা যদি আগামীতে নেতৃত্ব দেন তাহলে, আর বিদ্যুতের কোনো সমস্যাই থাকবে না।”

খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে তিনি বলেন, “বেগম খালেদা জিয়ার একদিকে হেফাজত আর জামাত। অন্যদিকে, ইউনূস। যে কিনা পুরুষে পুরুষে বিয়ের কথা বলেন।”

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত জনসভার ব্যাপ্তি বোঝাতে গিয়ে বলেন, “বড়লেখার বড় মানুষরা বড় জনসভা করবেন জানতাম। কিন্তু এতো বড় জনসভা হবে ভাবতে পারি নাই।”

নির্বাচনে সকলকে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়ে বলেন, “যখন তারা বুঝেছে ভোটে পারবে না। তখন মানুষ পুড়িয়ে মারছে। আপনারা তামাশা পেয়েছেন। আপনারা মানুষ পোড়াবেন। আর একটি গণতান্ত্রিক সরকার তা বসে বসে দেখবে? আপনার সংখ্যালঘুদের বাড়ি পোড়াবেন। আর এই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সরকার তা বসে বসে দেখবে? শেখ হাসিনা অনেক ধৈর্য দেখিয়েছেন।

“জামাত আর হেফাজতকে নিয়ে বেগম খালেদা জিয়া স্বাধীনতার ওপর আক্রমণ করেছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আপনাদের ঐক্যবন্ধ হতে হবে।”

প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে সুরঞ্জিত আরো বলেন, “আমরা শেখ হাসিনাকে বলবো, আপনি আরো কঠোর হোন।”

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এই অঞ্চলের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নয়নের আশ্বাস দেন।

নাহিদ বলেন, “এই জাতি হিসাবে টিকে থাকবো- কী থাকবো না? যদি আমরা টিকে থাকতে চাই। তাহলে শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে হবে।”

বড়লেখা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহাব উদ্দিনের সভাপতিত্বে জনসভায় আরো বক্তব্য রাখেন, জাতীয় সংসদের হুইপ আব্দুস শহীদ, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেসবাহ উদ্দিন সিরাজ।

এরআগে দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হেলিকপ্টারে বড়লেখা পৌঁছান। পরে জনসভাস্থলে পৌঁছে এতিম প্রতিবন্ধী ছেলেমেয়েদের জন্য নির্মিত কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র উদ্বোধন করেন শেখ হসিনা।

এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি ছাড়াও শনিবার দুপুরে মৌলভীবাজার জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স, ইটাউড়ী মহিলা দাখিল মাদ্রাসা, চান্দ্রগ্রাম এ ইউ দাখিল মাদ্রাসা এবং জুড়ী মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের নবনির্মিত একাডেমিক ভবন উদ্বোধন করেন সরকার প্রধান।

মৌলভীবাজারের বড় লেখা ডিগ্রী কলেজ মাঠে দু’টি মাদ্রাসা, কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, জুড়ি মডেল বিদ্যালয়ের একাডেমি ভবন এবং জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের ফলক উন্মোচন করেন শেখ হাসিনা।

এছাড়াও বড়লেখা থানা ভবন, কাঁঠালতলী থেকে মাধবকুন্ড পর্যন্ত সড়ক পুনর্বাসন প্রকল্প, ধলছড়া উপ-প্রকল্পের হাইড্রলিক স্ট্রাকচার নির্মাণ প্রকল্প, পাথারিয়া ছোটলেখা মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন, বড়লেখা উপজেলায় ৫০০ আসন বিশিষ্ট অডিটরিয়াম-কাম-মাল্টিপারপাস হল নির্মাণ কাজ, জুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মাণ কাজ এবং ৩৩/১১ কেভি. ১০ এমভিএ মৌলভীবাজার উপকেন্দ্র-২ এর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top