সকল মেনু

তেরখাদায় কুমারী মাতার আহাজারী

Khulna pic-08-11-13 এম এইচ হোসেন, খুলনা থেকে, ৮নভেম্বর::  অভাব অনটনের পরিবারে পড়া লেখার সুযোগ পায়নি খুলনার তেরখাদার কুশলা গ্রামের শিশু ফাতেমা। তাই ক্ষুধার জ্বালা নিবারনে পরিবারের ইচ্ছেতেই প্রতিবেশির বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করে সে। কিন্তু প্রতারনার ফাঁদে আটকে তার জীবন হয়ে পড়ে আরও অসহায়। সে আজ কুমারী মাতা। কিন্তু পাচ্ছে না স্ত্রীর মর্যাদা, পাচ্ছে না সন্ত্রানের পিতৃ পরিচয়। এই স্বীকৃতি পেতে আইন ও সমাজপতিদের দ্বারে দ্বারে কেবলই ঘুরছে সে। এই স্বীকৃতির জন্য আইনের সহায়তায় বিচার পেতে পুলিশে অভিযোগ করে ফাতেমা। পুলিশ অভিযোগ পেলেও প্রভাবশালীদের কারণে তা নথিভুক্ত করেনি। এখন বিপাকে পড়েছে ফাতেমা ও পরিবারের সদস্যরা। ফাতেমার অসহায় পরিবারটি এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।

অভিযোগে বলা হয়, তেরখাদা উপজেলার কুশল গ্রামের ইউনুস সরদারের কন্যা ফাতেমা (১৩)। একই গ্রামের রাইস মিল মালিক ফুলমিয়া বাড়িতে এক বছর আগে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ নেয় সে। এরপর ফুলমিয়ার পুত্র রনি শিকদারের নজর পড়ে তার ওপর। তাদের মধ্যে সম্পর্কও স্থাপিত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন সময় রনি তাকে কুপ্রস্তাব দেয়। এতে ফাতেমা রাজি হয় না। এক পর্যায়ে রনি ফাতেমাকে নিয়ে সংসার করার স্বপ্ন দেখায়। অসহায় ফাতেমাও আশার আলো দেখতে শুরু করে। এ অবস্থায় তাদের অবৈধ মিলনও হয়। ফলে অন্তস্বত্ত্বা হয়ে পড়ে ফাতেমা। শিশু ফাতেমার পেটে বাড়তে থাকে আরেকটি শিশু। বিষয়টি জানাজানি হলে রনির পরিবার থেকে বিভিন্নভাবে ফাতেমার গর্বের সন্তান নষ্ট করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু ফাতেমা গর্ভে বাড়তে থাকে শিশুটি। ফাতেমার পরিবারও প্রতারনার শিকার হয়ে ২২ আগষ্ট তেরখাদা থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। তাতে রনি, তার ভাই সুমন, মা রেবেকা বেগম ও পিতা ফুলমিয়া সরদারকে অভিযুক্ত করা হয়। কিন্তু পুলিশ বিষয়টি নথিভুক্ত না করে নিরবতা পালন করে। এ অবস্থায় গর্ভের সন্তানের বয়স ৮ মাসের সময়ও সর্বশেষ শাচিয়াদহ এলাকার এক মহিলার কাছে নিয়ে চেষ্টা চালানো হয় তা নষ্ট করতে। কিন্তু তাতেও কোন সুফল পায়নি রনির পরিবার। এ অবস্থায় সামাজিক চাপে মুখে পড়ার আশঙ্কায় তারা রনিকে ঢাকায় পাঠিয়ে দেয়। আর গত ২০ অক্টোবর ফাতেমা জন্ম দেয় আকেটি কন্যা সন্তান। তার নাম রাখা হয়েছে সোনিয়া। এখন তার বয়স ১৯দিন।  কিন্তু ফাতেমা পাচ্ছে না স্ত্রীর মর্যাদা। দিতে পারছে না সন্ত্রানের পিতৃ পরিচয়।

অভিযোগ করা হয়, রনি ও তার অভিভাবকরা অনেক টাকা উৎকোচ দিয়ে পুলিশকে হাত করে রেখেছে। ফলে পুলিশ অসহায় এই পরিবারের অভিযোগটি আমলে নিচ্ছে না। এ ব্যাপারে প্রশাসনের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ, ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তসহ সুষ্ঠু বিচার দাবি করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে তেরখাদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, এ ঘটনায় অভিযোগ দায়েরের পর প্রাথমিক তদন্ত শেষে তা নারী নির্যাতন আইনের আওতায় ধর্ষণ হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়েছে। ফাতেমার মেডিকেল পরীক্ষাও করা হয়েছে। এখন এই মামলার তদন্ত শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এসআই সঞ্জয় মামলাটির তদন্ত করছেন। তবে, আসামিরা পলাতক থাকায় এখনও পর্যন্ত কোন আসামী গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। দ্রুত সময়ের মধ্যেই এই মামলার অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করা হবে বলে তিনি।

 

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top