সকল মেনু

ধানসিঁড়ি নদীপাড়ের প্রিয় বন্ধু

xPic------120131107140740.jpg.pagespeed.ic.CSdeLWOZcn শ্যামলেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়,হটনিউজ২৪বিডি.কম:  সালটা ঠিক মনে করতে পারছি না, তবে গত শতাব্দীর নয়ের দশকের গোড়ার দিকে বাশারকে প্রথম দেখি তপংকরের সঙ্গে আমাদের বাড়িতে। তপংকর আমার আত্মীয় এবং বন্ধু, বাংলাদেশের বরিশালে থাকে। ওরা আমার মেজদার ঘরে বসে গল্প-গুজবে মশগুল। আমারও ডাক এলো সেই আড্ডায় যোগ দেওয়ার। বাংলাদেশের এক প্রত্যন্ত গ্রামে আমার জন্মভিটে। তাই ওপার বাংলার মানুষ দেখলেই আমার মনে পড়ে যায় শৈশবে ছেড়ে আশা আমার জন্মভূমির কথা। তাঁদের সঙ্গে ভাব বিনিময়ের গভীর আগ্রহ প্রকাশ পায় আমার হাবভাবে আচরণে। তপংকরের সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব তার কয়েক বছর আগে থেকেই। ও তখন বেসরকারি কলেজের একজন অধ্যাপক এবং কবি ও সাহিত্যিক। তপংকরই আমাকে পরিচয় করিয়ে দিল একজন ২৭/২৮ বছর বয়সী শীর্ণকায়-শ্যামবর্ণ যুবকের সঙ্গে।   তপংকর বলল, ওর নাম সিকদার আবুল বাশার। ও ঢাকার একজন প্রকাশক। প্রকাশন সংস্থার নাম ‘গতিধারা’। যান্ত্রিকভাবে নমস্কার বিনিময় করলাম। মনে মনে ভাবলাম -এই নাকি প্রকাশক! আমাদের দেশের প্রকাশকদের এক এক জনকে তো ভিন্ন গ্রহের মানুষ বলে মনে হয়। কোথায় আনন্দবাজার, দেশ, যুগান্তর, বসুমতী! বুঝতে পারলাম, ছেলেটি আমাকে মাপছে। আসলে আমি নিজেকে যতই ভদ্র, বিনয়ী ভাবি না কেন, ভেতরে ভেতরে এক ধরনের চাপা উন্নাসিকতা আমার মধ্যেও ছিল। তখন তো আমি কলকাতার গ্র“প থিয়েটারে নিয়মিত অভিনয় করি। একটু আধটু এটা সেটা লিখি। বিভিন্ন পাড়ার থিয়েটার নির্দেশনার কাজ করি। কিন্তু এই উন্নাসিকতা কখনোই মানুষের প্রতি আমার আন্তরিক ভালোবাসার অন্তরায় হয়ে ওঠেনি। সেই আন্তরিকতার জন্যেই হয়তো। সেদিনের কথোপকথন ও আলাপচারিতার পর ঐ প্রকাশক যুবকটি বুঝেছিল, এই মানুষটি আর যাই হোক, এর সঙ্গে বন্ধুত্ব করা যায়। এরপর যতবারই বাশার কলকাতা এসেছে, একা বা দোকা ওর ঠিকানা হয়েছে আমার পলেস্তারা খসা ১র্০ দ্ধ ১র্০ ঘরটি। কলকাতায় পদার্পণ করেই ও আমাকে ফোন করত, ‘শ্যামলদা, আমি বাশার, আমি কলকাতা আসছি।’ এই দীর্ঘদিনে বিভিন্ন সময়ে অনেককে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছে। তাদের সঙ্গেও আমার আলাপ পরিচয়, বন্ধুত্ব হয়েছে। একবার অফিসে ফোন এলো শ্যামলদা আমি বাশার, কলকাতা আসছি আমার এক বন্ধু ও তাঁর ভগ্নিপতিকে নিয়ে। বন্ধুর ভগ্নিপতির একটু মানসিক সমস্যা আছে, ডাক্তার দেখাতে হবে। বললাম, ঠিক আছে, সব ব্যবস্থা হয়ে যাবে। মনে মনে ভাবলাম, বাশার যদি তার এতো কর্ম-ব্যস্ততার মধ্যেও বন্ধুর ভগ্নিপতিকে ডাক্তার দেখানোর জন্যে এক দেশে থেকে আর এক দেশে পাড়ি দিতে পারে, আমি এখানে থেকে এটুকু পারবো না! ডাক্তার দেখানো হলো, রোগী সুস্থ হয়ে দেশে ফিরে গেল। আমার স্মৃতিতে লেগে রইল আমার দেশের মানুষের বন্ধুত্ব, ভালোবাসা। বাশারের সেই বন্ধু সেলিম সাহেব বাংলাদেশের প্রকাশন সংস্থা ‘কাকলী প্রকাশনী’র কর্ণধার।

আর একবার এক গবেষক ড. তপন বাগচীকে নিয়ে এসেছিল। একবার ওর সঙ্গে এসেছিলেন রুহুল আমিন বাবুল, তিনি একজন স্বভাবকবি। অল্প সময়ের আলাপেই গাঢ় বন্ধুত্ব হয়েছিল। তিনিও আমার স্মৃতিতে অমলিন। এই রকম অনেকেই এসেছেন আমার এই বাড়িতে, কিন্তু পরবর্তীকালে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। আজকের একজন প্রতিষ্ঠিত প্রকাশক, সাহিত্যিক, গবেষক শিল্পী সিকদার আবুল বাশার সেদিনের সেই ছিপছিপে যুবক কিন্তু এখনও কলকাতায় পা রাখলে ঐ একই রকমভাবে ফোন করে বলে, ‘শ্যামলদা, আমি বাশার, আমি কলকাতা আসছি।’ আর আমার বুকের ভেতরটা ছলাৎ করে ওঠে আবার দেখা হবে ধানসিঁড়ি নদীপাড়ের প্রিয় বন্ধুর সঙ্গে। এতেই মনে হয় বন্ধুত্বের আর এক নাম সিকদার আবুল বাশার, যিনি এখন বাংলাদেশের বিদগ্ধ মহলে একটি অতি পরিচিত নাম, ঘোষিত সব্যসাচী প্রকাশক, সাহিত্যিক, গবেষক এবং পরপর তিন বছর শ্রেষ্ঠ প্রচ্ছদশিল্পীর জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত একজন কৃতী মানুষ। তিনি এদেশের একজন সাধারণ মানুষকে ভোলেননি।  একটু অন্য প্রসঙ্গে ঘুরে আসা যাক। আমার মনে হয়, এই মনুষ্য প্রজাতির মতো এত বিচিত্র জীব বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে আর দ্বিতীয়টি নেই। এর মধ্যে কেবল চিন্তাশীল মানুষ, মানে যাঁরা বুদ্ধি বিবেচনা বিচক্ষণতা ও কর্মকুশলতা প্রয়োগ করে নিজেদের বাঁচার যোগ্য করে তোলেন; যেমন ধরুন যাঁরা বোঝেন, কতটা সাবান ঘষলে ঠিক ঠিক ফ্যাণা হবে কিংবা কতটা তেল মর্দন করলে শরীরের বিভিন্ন প্রত্যঙ্গ চকচক করবে এঁরা জীবনের একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির করে, সেই লক্ষ্য পুরণের জন্য যা যা করা প্রয়োজন, সেটি সাধন করে জীবন সার্থক করেছেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top