সকল মেনু

এক আদম আলীর গল্প…

Bauphal-1 (6.11.13)  কামরুজ্জামান বাচ্চু, বাউফল (পটুয়াখালী), ৭ নভেম্বর:    গ্রামের মানুষের নিরাপত্তার জন্য অতন্ত্র প্রহরীর মত কাজ করেছেন তিনি। জীবনের পরন্ত বেলায় এসেও মানুষের মঙ্গলের জন্যে কাজ করে যাচ্ছেন। নাম তার আদম আলী (৮৫)। আদম আলী দফাদার হিসাবেই এলাকার মানুষের কাছে তিনি পরিচিত। পড়াশুনার প্রতি তার আগ্রহ ছিল ভিষন। কিন্তু ওই সময় তার গ্রামে কোন স্কুল না থাকায় সে আগ্রহ পূরন করতে পারেননি। অশিক্ষিত হলেও তার চিন্তা এবং ভাবনা ছিল সমাজের জন্য ভাল কিছু করা। তাই নিজের গাঁয়ের প্রতিষ্ঠা করলেন ১টি মাদ্রাসা, ১টি রেজিষ্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় ১টি হাইস্কুল ও ১ টি কলেজ। আর মধ্য বয়সে তার নিজের প্রতিষ্ঠিত সেই স্কুলের প্রথম ছাত্র হিসাবে ভর্তি হন তিনি । একবার দুবার নয় বারবার ৩ বার চেষ্টার পর তিনি এসএসসি পাশ করেন । এরপর পর্যায়ক্রমে তিনি এইচএসসি এবং বিএ পাশ করেনে এখানেই শেষ হতে পারত আদম আলী দফাদারে গল্প । কিন্তু সেই গল্পের শেষ না হয়ে বরং নতুন করে আবার শুরু হলো। গ্রামের সেই দফাদার থেকে তিনি নির্বাচিত হলেন ইউপি চেয়ারম্যান।

১৯৩৫ সালে পটুয়াখালীর সদর থানার কমলাপুর ইউনয়নের ধরান্দি  গ্রামে আদম আলী জন্ম গ্রহন করেন। বাবার তিন ছেলের মাঝে আদম আলী ছিল সবার ছোট । আদম আলী পেশায় ছিলেন একজন ইউনিয়ন দফাদার । দু টাকা বেতনে এই চাকরিটি করতেন তিনি । রাতে পাহাড়া দিতেন গ্রামে গ্রামে । আর দিনে জমিতে চাষাবাদ করতেন । আদম আলী লোক শিল্পের পালাগান, স্কুলে মালা দেওয়ার গান গেতেন । যেখানে ডাক পরে সেখানেই যেত তাঁর  দলবল নিয়ে গান গেতে । আর তাঁর এ উপার্জন থেকে স্থাপন শুরু করেন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান । প্রথমেই আদম আলী  শুরু করেন রসুলপুর নামে একটি  এফতেদায়ি ও দাখিল মাদ্রাসা। জীবনে তিনি মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে গিয়ে অংকে বারবার ফেল করলেও এলাকায় শিক্ষার আলো ছড়াতে তিনি ফেল করেননি । তখনকার সময়ে জেলা কিংবা থানা সদর ব্যতিত কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিলনা । রাস্তাঘাট না থাকায় চলাচলের একমাত্র বাহক ছিল নৌকা আর ডোঙ্গা । জেলা শহরে গিয়ে পড়ালেখার কোন সুযোগছিলনা বলেই ১৯৬০ সালে   আদম আলী নিজের গ্রামে মধ্য ধরান্দী নামে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রতিষ্টিত করেন । ওই বিদ্যালয় থেকেই তিনি ১৯৬৫ সালে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট সংগ্রহ করেন । এরপর থেকেই তিনি এলাকায় শিক্ষার আলো ছাড়াতে একের পর এক প্রতিষ্ঠা করতে থাকেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ সরকারের অধিনে প্রথম  মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরিক্ষায় অংশ গ্রহন করে তিনি উত্তির্ন হন । পরে তিনি বিএ পাশ করে নিজ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিযুক্ত হন । ১৯৮৩ সালে গণভোটে তিনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন । ১৯৮৭ সালে মধ্য ধরান্দি নামের রেজিঃ  প্রাথমিক  বিদ্যালয় করেন। ১৯৯৪ সালে সাড়ে ৫ একর ২৫ শতাংশ জমি নিয়ে ধরান্দী নামের একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে এই কলেজের অধ্যক্ষ পদে দায়িত্ব পালন করছেন তার সেজ ছেলে মোঃ রুহুল আমিন হাওলাদার । আদম আলীর প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন শিক্ষক বলেন, একজন নিরক্ষর মানুষ হয়েও তিনি সেই সময় একটি অজপাড়া গাঁয়েপাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে  আলো ছড়িয়ে দিয়েছেন । অজোপাড়ার এই গাঁয়ের হতদরিদ্র ছাত্র-ছাত্রী নিরক্ষতার অভিসাপ থেকে মুক্তি পেয়েছেন । অন্য দিকে এখানে প্রতিষ্ঠান হওয়াতে এলাকার বেশ কিছু মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে । রাস্তা ঘাট ব্রীজ হয়েছে । এসব প্রতিষ্ঠানে এখন প্রায় সহাশ্রাদ্ধিক ছাত্র-ছাত্রী পড়াশুনা করছেন । কলেজ অধ্যক্ষ মোঃ রুহুল আমিন বলেন, তাঁর পিতার এ অবদানে তিনি গর্বিত ও ধন্য । ওই এলাকার প্রবীণ ও নবীনদের অভিমত হলো আদম আলী পরিশ্রম করে অর্থ জমিয়েছেন। আর সেই অর্থ তিনি ব্যায় করেছেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মানের কাজে। আমরা রাষ্ট্রীয় ভাবে তার এ অসামান্য এ অবদানের স্বীকৃতি চাই।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top