সকল মেনু

উজাড় হচ্ছে ধুলাসার সংরক্ষিত বনাঞ্চল,বনকর্মকর্তার বিরুদ্ধে অন্তহীন অভিযোগ

kalapara-01 (31-10-13) 03 নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, ৩১ অক্টোবর :  ধুলাসার সংরক্ষিত এবং সামাজিক বনায়নের গাছ কেটে উজাড় করা হচ্ছে। বনবিভাগের স্থানীয় স্টাফদের প্রত্যক্ষ সহায়তায় সেখানকার একটি চিহ্নিত চোরাকারবারি প্রতিনিয়ত গাছ কেটে বিক্রি করছে। গত ছয় মাসে অন্তত দুই শ’ গাছ কাটার প্রমাণ মিলেছে। ফলে সাগরপারের মানুষের ঝড় জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষার অবলম্বন হারিয়ে ফেলছে। উজাড় প্রক্রিয়া বর্তমানে অব্যাহত রয়েছে। এক কথায় সেখানকার সংরক্ষিত বনাঞ্চল এখন অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। স্থানীয় লোকজনের দেয়া তথ্যমতে ধূলাসারে যে পরিমাণ বনাঞ্চল এখনও রয়েছে তার উপর ভরসা করে দুর্যোগকালে প্রাথমিকভাবে ঝড় জলোচ্ছ্বাসের ঝাপটার কবল থেকে নিজেদের রক্ষার চেষ্টা করছে অন্তত তিন হাজার পরিবার।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বেড়িবাঁধের স্লোপের দুই দিকের সামাজিক বনায়নের বিভিন্ন প্রজাতির শত শত গাছ কেটে নেয়া হয়েছে। শুধু গাছের গোড়া পড়ে আছে। এমনকি যাতে সদ্য কাটার দৃশ্যটি চোখে না পড়ে এই জন্য কাদায় লেপটে দেয়া হয়েছে। এছাড়া সংরক্ষিত বাগানের মধ্যে শত শত ছইলা, কেওড়া গাছ কেটে নেয়ার দৃশ্য দেখা গেছে। পশ্চিম ধুলাসার গ্রামের ৪৭/৪ পোল্ডারের বেড়িবাঁধের দুই পাশে অন্তত সাতটি গাছ কেটে নেয়ার দৃশ্য দেখা গেল। সদ্য কেটে নেয়া হয়েছে বলে বোঝা গেল। কয়েকটি গোড়ায় আবার ধুলামাটি লেপ্টে রাখা হয়েছে, যাতে একটু দুর থেকে বোঝা না যায় তারজন্য এই কৌশল বলে জানালেন উপস্থিত লোকজন। এমন দৃশ্য বেড়িবাঁধটির সর্বত্র। সংরক্ষিত বনাঞ্চলের মধ্যেও পড়ে আছে শত শত কাটা গাছের গোড়া। কারা গাছ কাটে ওই নামটি পর্যন্ত ভয়ে বলতে সাহস পায়না মানুষ। তবে জানা গেল সদ্য এই গাছ কাটা হয়েছে ইসমাইল ফরাজির নেতৃত্বে। স্থানীয় লোকজন জানায় তারা এসবের প্রতিবাদ কিংবা প্রতিরোধ করলে বনবিভাগের লোকজন উল্টো তাদেরকে আসামি করে মামলা দিয়ে রাখে। ফলে সচেতন সাধারণ মানুষ আর গাছ রক্ষায় এগিয়ে আসছে না। এমনিতেই সিডর আইলার মতো ঘুর্ণিঝড়ে উপকুলের ধুলাসারসহ সংরক্ষিত বিভিন্ন বনাঞ্চল ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়েছে। হাজার হাজার গাছ বিধ্বস্ত হয়েছে। প্রকৃতির বিপর্যয়ের পাশাপাশি মানুষসৃষ্ট বিপর্যয় এখন সংরক্ষিত বন উজাড়ের প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। উপকুলের কলাপাড়ার মানুষকে ঝড় জলেচ্ছ্বাসের কবল থেকে প্রাথমিকভাবে রক্ষার অবলম্বন বেড়িবাঁধ। আর এই বেড়িবাঁধের জলোচ্ছ্বাসের ঝাপটা ঠেকায় সংরক্ষিত বনাঞ্চল। প্রকৃতির বুলডোজারখ্যাত সিডরের সময় দেখা গেছে যে সব এলাকায় বেড়িবাঁধের বাইরে সংরক্ষিত বনাঞ্চল ছিল সেখানে বাঁধ বিধ্বস্ত হয়নি। রক্ষা পেয়েছে মানুষ ও তাদের সম্পদ। আর যেখানে বনাঞ্চল ছিলনা সেখানকার বাঁধ জরোচ্ছ্বাসের ঝাপটায় বিধ্বস্ত হয়ে জনপদ ভেসে প্রাণসহ ব্যাপকভাবে সম্পদ হানি ঘটে। তাই সাধারণ মানুষ এখন সংরক্ষিত বনাঞ্চলের গুরুত্ব প্রবলভাবে অনুধাবন করতে পেরেছে।

বনবিভাগের মহিপুর রেঞ্জের দেয়া তথ্যমতে বনাঞ্চল ধুলাসার ক্যাম্পের আয়তন এক হাজার পাঁচ শ’ ২২ দশমিক ৪২ একর। যার মধ্যে সংরক্ষিত বনাঞ্চল রয়েছে চার শ’ ৬১ দশমিক ৫৩ একর। তবে এর অর্ধেকটা সাগর মোহনার ভাঙ্গনে বিলীন হয়েছে বলে বনবিভাগের মহিপুর রেঞ্জের দাবি। বর্তমানে যে পরিমাণ বনাঞ্চল রয়েছে তাও সেখানকার দায়িত্বে নিয়োজিত বিট অফিসার রেজাউল করিমের যোগসাজশে বনদস্যুরা দেদার বিক্রি করে দিচ্ছে বলে স্থানীয় লোকজনের এন্তার অভিযোগ। লোকজনের ক্ষুব্ধ মন্তব্য কিছুদিন আগে কাউয়ার চর এলাকায় কাটা গাছসহ জড়িত লোকজনকে চিহ্নিত করে গঙ্গামতির বনকর্মকর্তা রেজাউল করিমকে অবহিত করা হয়েছে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে আজ অবধি কোন ব্যবস্থা নেয়নি। তবে ওই বনকর্মকর্তা জানান, প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। উপজেলা বন ও পরিবেশ কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, বিষয়টি ক্ষতিয়ে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট রেঞ্জ কর্মকর্তাকে বলা হচ্ছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top