সকল মেনু

একমাত্র স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র দুই বছর ধরে বন্ধ

মেজবাহউদ্দিন মাননু, কলাপাড়া, ২৯ অক্টোবর:  কলাপাড়া উপজেলার পর্যটনপল্লী গঙ্গামতি এলাকায় ধুলাসার kalaparaইউনিয়নের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটি দুই বছর তালাবদ্ধ। কেন্দ্রের একমাত্র ভবনটির বিধ্বস্তদশার কারনে এমন অবস্থা হয়েছে। ফলে সেখানকার অন্তত তিন হাজার পরিবার স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত রয়েছে। বঞ্চিত রয়েছে মা ও শিশু স্বাস্থ্যসেবাসহ বিভিন্ন পরামর্শ কার্যক্রম। বিভিন্ন সংযুক্ত চরাঞ্চল বেষ্টিত মানুষের চিকিৎসা সেবার লক্ষ্যে যে উদ্দেশে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছিল তা ভেস্তে যাচ্ছে। চরাঞ্চলের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর এ কারণে দুর্ভোগের যেন শেষ নেই। ন্যুনতম স্বাস্থ্য সেবার জন্য এসব মানুষকে এখন ছুটতে হচ্ছে ৩০ কিলোমিটার দুরে উপজেলা সদর হাসপাতালে। সরকার যেখানে জনগণের দোড়গোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌছে দিতে বহুমুখি পদক্ষেপ নিয়েছে। সেখানে উল্টো ধুলাসারের মা ও শিশু স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে স্বাস্থ্যসেবার পথ বন্ধ হয়ে গেছে। যেখানে শুধু স্বাস্থ্যসেবা নয় স্বাস্থ্য শিক্ষা দেয়া হতো। কিন্তু আজ স্বাস্থসেবা থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য বিষয়ক সকল সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছে ধুলাসারের মানুষ। এমনকি কবে নাগাদ এই কেন্দ্রটি পুর্ণাঙ্গভাবে চালু ফের চালূ হবে তা খোদ পরিবার পরিকল্পনা বিভাগও জানাতে পারে নি।

৮০ এর দশকের মাঝামাঝি সময় চরাঞ্চলের মানুষের মা ও শিশু স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নে এই স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটি চালু করা হয়। ৪৫ শতক জমির উপরে প্রতিষ্ঠিত হয় এটি। শুরু থেকেই এখানে একজন উপ-সহকারী কমিউনিটি চিকিৎসা কর্মকর্তা (এসএসিএমও), একজন ফার্মাসিস্ট, একজন ফ্যামিলি ওয়েল ফেয়ার ভিজিটর (এফডব্লিউভি), একজন গার্ড ও একজন আয়া পদায়ন করা হয়। এরপর থেকে চরাঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ এখান থেকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা পেয়ে আসছিল। বিশেষ করে অনগ্রসর চরাঞ্চল কাউয়ারচর ও গঙ্গামতি এলাকার জেলে পরিবারের গর্ভবতী মা এবং শিশুরা এখান থেকে বিশেষ স্বাস্থ্যসেবা পেয়ে আসছিল। পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি অবলম্বনের সুযোগ পেয়ে আসছিল। বিনামূল্যে ওষুধসহ এসব উপকরণ পেত রোগিরা। অবহেলিত, দরিদ্র জনগোষ্ঠীর চিকিৎসা সেবার একমাত্র অবলম্বন ছিল এই কেন্দ্রটি। কিন্তু এই পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রর ভবনটি একপর্যায়ে জীর্ণদশায় পতিত হয়। ধসে পড়ে ভবনের পলেস্তরা। এমনকি ভিমসহ পিলার পর্যন্ত ধসে পড়ে। ফ্লোর দেবে যায়। এ অবস্থায় ব্যবহার উপযোগিতা না থাকায় ভবনটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। বর্তমানে সেখানে কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী নেই। সর্বশেষ ২০০৮ সালে কেন্দ্রের জায়গা নির্ধারণের জন্য বাউন্ডারি দেয়াল করা হয়েছে। তবে অভিযোগ রয়েছে এই কাজটি পুর্ণাঙ্গভাবে না করেই সমুদয় বিল নিয়ে গেছে ঠিকাদার। বর্তমানে এই স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটি বন্ধ থাকায় সেখানকার মানুষ চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। নিতে পারছেন না গর্ভবতী মায়েরা কোন সেবা কিংবা পরামর্শ। এলাকার বাসিন্দা মোস্তফা বেপারী জানান, এই কেন্দ্রটি চালু থাকাকালে হাজার হাজার নারী-পুরুষ স্বাস্থ্যসেবা পেত। পেতেন ফ্রি ওষুধ। এখন লোকজন অসুস্থ হয়ে পড়লেই চরম দুর্ভোগ করে উপজেলা সদর কিংবা মৎস বন্দর মহিপুরে ছুটতে হয়। সেক্ষেত্রে চিকিৎসা ব্যয়ের চেয়ে পরিবহন ব্যয় বহুগুণে বেশি। আর ব্যয় সংকুলান মেটাতে না পারায় দরিদ্র মানুষ দু’টি বছর বিভিন্নভাবে রোগাক্রান্ত হয়ে পড়েছে, পাচ্ছেন না চিকিৎসা সেবা। স্থানীয়রা জানালেন, কিছুদিন আগে ধুলাসারের বেপারী বাড়ির আব্দুস সালামের প্রসুতি স্ত্রী তাছলিমা বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন। এলাকার লোকজনের মন্তব্য স্বাস্থসেবা কেন্দ্রটি চালু থাকলে এই প্রসুতি মায়ের প্রাণহানি ঘটনত না। পরিবার কল্যাণ ও স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রটি চালু থাকা অবস্থায় এখানে শত শত গর্ভবতী মায়েরা নিরাপদে সন্তান প্রসব করত।

মোট কথা দু’টি বছর এই কেন্দ্রটি বন্ধ থাকায় হাজার হাজার পরিবার সব ধরনের স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত রয়েছে। এলাকার সকল শ্রেণীর মানুষের দাবি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের ভবনটি মেরামত করে পুনরায় প্রয়োজনীয় চিকিৎসকসহ লোকবল পদায়ন করে স্বাস্থ্যসেবা চালু করা হোক। নইলে এখানকার দরিদ্র মানুষ বিনা চিকিৎসায় মারা যাবে। ধুলাসার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কেএম খালেকুজ্জামান জানান, ভবনটি দ্রুত সংস্কার করে লোকবল পদায়ন করা হোক। তার দাবি ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবনের একাধিক কক্ষ রয়েছে যেখানে স্বাস্থ্য বিভাগের ওই কর্মীরা থাকতে পারেন। যেখানে থেকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা বহাল রাখা যেত।

কলাপাড়া উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শাহআলম হাওলাদার জানান, ভবনটি মেরামত করে প্রয়োজনীয় লোকবল পদায়ন করে কেন্দ্রটি চালু করার জন্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। তবে অন্য ইউনিয়ন থেকে একজন কমিউনিটি চিকিৎসা কর্মকর্তাকে অন্তত সপ্তাহে একদিন পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলে তিনি জানিয়েছেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top