সকল মেনু

ময়না তদন্ত ছাড়াই লাশ দাফন

dinajpur-map-new_ecbf74  মো.নুরুন্নবী বাবু.দিনাজপুর প্রতিনিধি ২৫ অক্টোবার :  দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেক্সের চিকিৎসা সহকারি মনোয়ারুল ইসলাম টুটুলের ভূল চিকিৎসায় এক পোশাক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। ভূল চিকিৎসায় ফেন্সি আরা বেগমের (৪০) মৃত্যু হলেও ময়না তদন্ত ছাড়াই তাঁকে দাফন করা হয়েছে। সে উপজেলার খট্টামাধবপাড়া গ্রামের আব্দুর রশিদ সরদারের স্ত্রী। ফেন্সির স্বামী আব্দুর রশিদ অভিযোগ করেন, ৫-৬ মাস আগে তাঁর স্ত্রী ফেন্সির পিঠে একটি টিউমার দেখা দেওয়ায় চিকিৎসা করানোর জন্য গত মঙ্গলবার সকাল ১০টায় স্ত্রীকে নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেক্সের জরুরী বিভাগে যাই। কিছুক্ষণ পর স্বাস্থ্য কমপেক্সের চিকিৎসা সহকারি মনোয়ারুল ইসলাম টুটুল জরুরী বিভাগে এসে টিউমার দেখে অস্ত্রোপচার করলে ভালো হবে বলে স্বাস্থ্য কমপেক্সের গেট সংলগ্ন নাজমা ফার্মেসীতে নিয়ে যায়। এসময় তিনি ১৫০০ টাকা নিয়ে অস্ত্রোপচার (অপারেশন) করার কথা বলেন। তাঁর কথায় রাজী হয়ে প্রথমে ৫০০ টাকা দেওয়া হয়। তখন তিনি ওই ফার্মেসীর একটি ঘরে রোগিকে শুইয়ে টিউমারের পাশে একটি ইনজেকশন করে। সঙ্গে সঙ্গে রোগি ছটফট করতে থাকে। কয়েক মিনিটের মধ্যেই রোগি নিস্তেজ হয়ে মৃত্যুরকোলে ঢলে পড়ে। ঘটনা বুঝতে পেরে টুটুল পালিয়ে যায়। তিনি আরও বলেন, আমরা যেন বাড়াবাড়ি না করি সেজন্য টুটুলের সাঙ্গ-পাঙ্গরা নানা ভাবে হুমকি দিচ্ছে। আমরা গরীব হওয়ায় কিছু করার সাহস পাচ্ছি না।

স্বাস্থ্য কমপেক্সের জরুরী বিভাগের চিকিৎসা সহকারি সাইফুল ইসলাম বলেন, ওইদিন রোগিসহ তাঁর লোকজন জরুরী বিভাগে আসেন। টিউমারটি দেখে ক্যান্সারে আক্রান্ত সন্দেহ হওয়ায় চিকিৎসা না দিয়ে অন্যত্র গিয়ে উন্নত চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু তখন তাঁরা মনোয়ারুলের খোঁজ করতে থাকেন। কিছুক্ষণ পর মনোয়ারুল এসে তাদের বাইরে নিয়ে যান। ফেন্সির পারিবারিক সুত্রে জানাগেছে, প্রায় ৪ বছর ধরে ফেন্সি ঢাকার একটি তৈরি পোশাক কারখানায় চাকরি করছে। ৬ মাস পূর্বে তাঁর পিঠে একটি টিউমার দেখা দেয়। গত মঙ্গলবার তাঁকে চিকিৎসা করানোর জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেক্সে আনা হয়।

এ ব্যাপারে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য কমপেক্সের জরুরী বিভাগে গিয়ে চিকিৎসা সহকারি মনোয়ারুল ইসলামকে পাওয়া যায়নি। ওই সময় তাঁর ডিউটি থাকলেও তাঁর পরিবর্তে মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট রেডিও গ্রাফার এনামুল হক দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া একাধিকবার তাঁর মুঠোফোনে যোগাযোগ করেও পাওয়া যায়নি। নাজমা ফার্মেসীর স্বত্বাধিকারি মেহেদী বলেন, অনেক চিকিৎসক আমার দোকানের ওই কক্ষে ছোট অপারেশন করে। সেদিন মনোয়ারুল ইসলামও ওই রোগিকে অপারেশন করার জন্য কক্ষে নিয়ে গিয়ে লোকাল ইনজেকশন দেয়। তারপরে রোগি মারা যায়। এদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. সোলায়মান আলী বলেন, ঘটনাটি শুনেছি। কিন্তু ঘটনাটি স্বাস্থ্য কমপেক্সের বাইরে। তবে লাশের ময়না তদন্ত ছাড়া বলা যাবে না তাঁকে কি ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে। ওই সময় তাঁর স্বাস্থ্য কমপেক্সে ডিউটি ছিল না। তারপরেও চিকিৎসা সহকারি মনোয়ারুল ইসলামের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দিনাজপুর ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জনকে জানানো হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন সিভিল সার্জন দেশের বাইরে আছেন। আসলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ইউএইচএফপিও বলেন, এর আগে তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক লিখিত অভিযোগ সিভিল সার্জনকে দেওয়া হয়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁকে দুইবার অন্যত্র বদলী করা হলেও এখানে থেকে গেছে। সে একের পর এক স্বাস্থ্য কমপেক্সের পরিবেশ নষ্ট করছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top