সকল মেনু

প্রস্তুত শিবিরের ১৩৫টি টিম, দেশজুড়ে ছড়িয়েছে আতঙ্ক

xBGB-0120131024230923.jpg.pagespeed.ic.vqfmfNyiqg নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা, ২৫ অক্টোবর:  আজ সেই বহুল আলোচিত ২৫ অক্টোবর। এই দিনকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে মানুষের মাঝে কৌতুহলের পাশাপাশি আতঙ্কও বিরাজ করছে। সবার একই কথা-কী ঘটবে আজ। এই উত্তেজনার মধ্যেই বিএনপিসহ ১৮ দল শেষ পর্যন্ত সোহরাওয়াদী উদ্যানেই সমাবেশ করতে রাজি হয়েছে। চট্টগ্রামেও আওয়ামী লীগ বিএনপির সমঝোতা হয়েছে পৃথক অবস্থানে সমাবেশ করার ব্যাপারে।

তবে দেশের ১১ জেলা উপজেলায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা। এসব এলাকায় বিএনপি-আওয়ামী লীগের পাল্টাপাল্টি সভা সমাবেশ ঠেকাতে রণপ্রস্তুতিতে রয়েছে পুলিশ। বিজিবিকেও সতর্কাবস্থায় রাখা হয়েছে। এসব এলাকায় পুলিশের পাশাপাশি র্যা বের টহলদারি জোরদার করা হয়েছে।
এদিকে চলমান সঙ্কটে দেশজুড়েই কঠোর অবস্থান নিয়েছে পুলিশ প্রশাসন। দেশের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শক্ত অবস্থানের মাঝেই বিএনপি জোট ঘোষণা করেছে তারা যে কোন মূল্যে পূর্বঘোষিত সমাবেশ করবে। পাশাপাশি আওয়ামী লীগ ঘোষণা করেছে তারা মাঠে থাকবে। অন্যদিকে জামায়াত শিবিরের সম্ভাব্য নাশকতার আশঙ্কাও জনমনে আতঙ্কের বড় কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাতে জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির রফিকুল ইসলাম খান সাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে সারাদেশে জামায়াত শিবিরের কর্মীরা মাঠে সক্রিয় থাকবে। শুধু শিবিরের ১৩৫টি টিম সড়ক মহাসড়ক ও দেশের গুরুত্বপুর্ণ যোগাযোগ পয়েন্টে সক্রিয় থাকবে। তাদের এই প্রস্তুতি আতঙ্কের মাত্রা আরো বাড়িয়েছে।
এদিকে বৃহস্পতিবার মাঝরাতে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, শান্তি ও সমঝোতার স্বার্থে তারা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই সমাবেশ করবেন। তবে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর কোনো ধরনের হামলা হলে তার দায়ভার সরকারকেই বহন করতে হবে। তিনি সমাবেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
এদিকে আওয়ামী লীগ বৃহস্পতিবার ঢাকায় সমাবেশ করার পরিকল্পনা থেকে সরে গেছে। এতে উত্তেজনা কিছুটা কমলেও উদ্বেগ কাটেনি। সমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে সহিংসতার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেকেই। এর আগেও বিএনপির সমাবেশে জামায়াত শিবির কর্মীদের বাড়াবাড়ির ফলে সহিংসতা হয়েছে একাধিকার বার। এবারও তেমন আশঙ্কা রয়েছে বলে পুলিশের একাধিক সূত্র থেকে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।
এদিকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সন্দেহভাজন যানবাহন থামিয়ে তল্লাশি হয়েছে। এই কারণে গত রাতে ঢাকায় যানবাহন চলাচল কমে যায়। জন সাধারণের চলাচলও কমে আসে সেভাবেই।
অন্যদিকে ঢাকার পাশাপাশি চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ১৮ দলকে আজ সমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছে সরকার। তবে ঢাকার বাইরে যেসব স্থানে সমাবেশ করার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে সেসব স্থানে সমাবেশ করার ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নিয়েছে বিএনপি। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ রাজপথ ও অলিগলির পাশাপাশি আজ শুক্রবার মসজিদেও অবস্থান নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। দুই পক্ষের এই অনঢ় অবস্থানের কারণে জনমনে উদ্বেগ বেড়েছে।
এদিকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার বেনজীর আহমেদ সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছেন, যে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা কঠোর হস্তে প্রতিরোধ করা হবে। বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে ঢাকায় যেন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি না হয় সে ব্যাপারেও সতর্ক করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট সকলকে। তবে ঢাকায় বিএনপির পাশপাপাশি জামাত শিবিরও মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছে। এটাই মুলত: উদ্বেগের বড় কারণ বলে মনে করছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।
অন্যদিকে অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক একেএম শহীদুল হক বৃহস্পতিবার রাতে রাইজিংবিডিকে বলেন, সারাদেশে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী যে কোন ঘটনাকে কঠোরহস্তে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেওয়ার কথা তিনি জানান। এছাড়া পুলিশকে সহায়তায় র্যা ব ও বিজিবিকেও রাখা হয়েছে সতর্কাবস্থায় সারাদেশে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরো জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের ১০টি শহরে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, গাইবান্ধা, বগুড়া, সাতক্ষীরা ও সিলেটে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়াও সিরাজগঞ্জে আজ ভোর থেকে বিজিবি মোতায়েন হবে।
বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে ঢাকা মহানগরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিজিবির টহল শুরু হয়েছে। রাজধানীতে ২০ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক মনোজ কান্তি বড়াল।
সিলেটে পাল্টাপাল্টি সমাবেশ কিংবা রাজনৈতিক সহিংসতা এড়াতে বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে পুলিশ ও র্যা বের পাশাপাশি বিজিবিও টহল শুরু করেছে।
দুই দলের পাল্টাপাল্টি সমাবেশ ঘোষণার কারণে বগুড়া শহরের আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠসহ পৌর এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে সব ধরনের সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে প্রশাসন। তবে প্রশাসনের ১৪৪ ধারা ভেঙে আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠে আজ শুক্রবারের পূর্বনির্ধারিত সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট। রাজশাহীতেও কঠোর অবস্থানে রয়েছে পুলিশ। পাল্টাপাল্টি সমাবেশের কর্মসূচি এখানেও রয়েছে।
বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের সমাবেশকে ঘিরে রাজধানীতে আজ সতর্ক অবস্থানে থাকবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বিরোধী জোটের সমাবেশকে কেন্দ্র করে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ১২টি দল রাজধানীজুড়ে পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব পালন করবে। নগরীর ৯৭টি পয়েন্টে তারা সকাল থেকেই অবস্থান করবে। পাশাপাশি রাজধানীর ৬৭টি মসজিদে তাদের কড়া দৃষ্টি থাকবে।
এ জন্য আওয়ামী লীগ মসজিদভিত্তিক তত্পরতা রুখতে ৯২টি কমিটিও এরই মধ্যে গঠন করেছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সভা থেকে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top