সকল মেনু

রানা প্লাজা ধস,সন্তান হারা মায়ের আর্তনাদ

xranaplaza-00020131023235557.jpg.pagespeed.ic.wN7jEwZlvH আফিফা জামান, সাভার, ২৪ অক্টোবর:  সাভারের রানা প্লাজা ধসের ছয় মাস পূর্ন হলেও এখনো কাজে ফিরতে পারেনি প্রানে বেঁচে যাওয়া অধিকাংশ শ্রমিক।

হতভাগ্য এ শ্রমিকরা কিছুতেই ভূলতে পারছেনা দূর্বিসহ সেই স্মৃতির কথা। চোখের সামনে সহকর্মীর মর্মান্তিক মৃত্যু এখনো যন্ত্রনা দেয় তাদের। উপার্জন সক্ষম এসব শ্রমিকই ছিল তাদের পরিবারের একমাত্র সম্বল। তবে দীর্ঘদিন ধরে কাজ না করায় আর্থিক ভাবে পঙ্গু হয়ে পড়েছে ওই পরিবারগুলো। এ দীর্ঘ সময়ের মধ্যে কেউ কেউ কাজে ফেরার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন। পোষাক কারখানার কথা শুনলেই মনে ভয় ঢুকে যায় এসব শ্রমিকের। তবে জীবন জীবিকার টানে কেউ কেউ পোষাক কারখানা ছেড়ে অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ, হোটেল রেস্তোরায় রান্নার কাজ জোগার করে সংসার চালাচ্ছেন বলে জানা গেছে। পুরুষ শ্রমিকরা খাটছেন দিনমজুর, বেচে নিয়েছেন রিকসা। আর যারা এরকম কাজ জোগার করতে পারেননি তাদের মধ্যে কেউ কেউ নিয়তি মেনে নিয়েই আবার যোগ দিয়েছেন অন্য কোন পোষাক কারখানায়। তবে সে সংখ্যা অনেক কম। ভবন ধসের পাঁচ দিন পর নিউ ওয়েব বাটনের শ্রমিক শাপলা বেগম (৩২) কে জীবিত উদ্ধার করে উদ্ধারকর্মীরা। ধসে পড়ার শব্দ শুনে প্রানে বাঁচতে একটি লোহার টেবিলের নিচে শুয়ে পড়েছিলেন বলেই বেচে যান এই হতভাগিনী। কিন্তু এরপরেই শুরু হয় বেচে থাকার যুদ্ধ।
দূর্বিসহ যন্ত্রনার মধ্যদিয়ে অন্ধকারে কাটিয়েছেন ৫টি দিন। পানি চেয়ে অনেকের হাকডাক শুনেও কিছুই করতে পারেননি। নিজেও গলা ভেজাতে পারেননি একটু খানি পানির অভাবে। মৃত্যু যন্ত্রনা যে কত কঠিন তা দেখেছেন অনেক কাছ থেকেই। ৫ দিনের দিন যখন উদ্ধার কর্মীরা তার কাছে পৌঁছায় তখন পাশের অনেকেই ঢলে পড়েছে মৃত্যুর কোলে। উদ্ধার কর্মীরা তার কাছে সকালে পৌঁছালেও তাকে উদ্ধার করতে করতে দুপুর গড়িয়ে যায়। তবু প্রান ফিরে পেয়ে সৃষ্টিকর্তার প্রতি অসংখ্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন শাপলা বেগম। তবে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হওয়ার পর তিনি শুনতে পান ভাইয়ের মৃত্যুর খবর। একই ফ্যাক্টরীতে কাজ করতেন তার ভাই মতিউর রহমান। ভাইয়ের মৃত্যুর শোক কাটতে না কাটতেই পরিবারের সদস্যদের মুখে দু’ মুঠো ভাত তুলে দিতে শাপলা বেগম বের হন চাকরির সন্ধানে। জুলাই মাসের প্রথম দিকে সাভারের রাজাশন এলাকায় জিকে গ্রুপে চাকরি নেন তিনি। কিন্তু প্রথম দিনেই সিড়ি বেয়ে উপড়ে ওঠার সময় পা পিছলে পড়ে যান। শাপলা বেগম হটনিউজ২৪বিডি.কমকে জানান, মনে হয়েছিল যেন আবারো গার্মেন্টস ভেঙ্গে পড়ছে আমার মাথা উপর। সাথে সাথে হাত পা সহ পুরো শরীর ঠান্ডা হয়ে গিয়েছিল আমার। বাধ্য হয়ে ফিরে আসতে হয়েছে আমাকে। এখন গার্মেন্টস কারখানার নাম শুললেই ভিতর কেঁপে ওঠে শাপলার।
বর্তমানে সাভার ব্যাংক কলোনীর ৩টি বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করছেন শাপলা বেগম। কখনও কখনও নিহত ভাইয়ের ক্ষতিপূরন পাওয়ার আশায় যোগ দিচ্ছেন মিছিল মিটিংয়ে। তবে তাতে কোন লাভ হচ্ছে না বলে জানান তিনি। একই কথা জানালো লাবনী নামের (২০) আরেক শ্রমিক। পেটের দায়ে দুদিন আল-মুসলিম গ্রুপের একটি পোষাক ফ্যাক্টরিতে কাজ করলেও মনের ভয়ে পরে আর যাননি। গার্মেন্টেসের মেশিনে হাত রাখলেই তার মনে পড়ে দুর্বিসহ সেই স্মৃতির কথা। পাশাপাশি দুজন সহকর্মীর মৃত্যু হয়েছে তার চোখের সামনে। ঘটনার ১ দিন পর উদ্ধার হন রানা প্লাজার ৭ তলায় কর্মরত এ শ্রমিক। তবে পারুল এবং পারভীন নামের দুজন শ্রমিক জানান, পরিবারের সদস্যদের মুখের দিকে তাকিয়ে নিয়তিকে মেনে নিয়েই তারা আবার যোগ দিয়েছেন অন্য একটি পোষাক কারখানায়। দীর্ঘদিন কাজ না করে বসে থাকায় একপর্যায়ে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছিল তাদের। বাধ্য হয়ে সাভারের পাকিজা মিলে কাজ নিয়েছেন তারা দুইবোন।
রানা প্লাজা ভবনটি ধসে পড়লে অলৌকিকভাবে বেঁচে যান এ দু বোন। ছিটকে পড়েন ভবনের বাইরের দিকে। তবে সহকর্মীদের হারানোর বেদনা তাদের দুজনকে এখনও তাড়া করে ফিরে। মাঝে মাঝে চোখের সামনে ভেসে ওঠে সহকর্মীর বিকৃত মরদেহের ছবি। ব্রেনের সাইকোসিসের প্রভাবে ওই শ্রমিকদের মনে ভয় বসবাস করছে জানিয়ে শেরে বাংলা নগর ন্যাশনাল ইনষ্টিটিউট অব নিওরোসাইন্সের সহযোগী অধ্যপক ডাঃ প্রভাত কুমার সরকার বলেন, মানুষের ব্রেন তাদের জীবনে ঘটে যাওয়া বিশেষ ঘটনাগুলোকে ধরে রাখে। রানা প্লাজায় যেসব শ্রমিক জীবন মুত্যৃর সন্ধিক্ষনে পৌঁছেছিলেন তাদের ক্ষেত্রে ব্রেনের সাইকোসিস প্রভাব ফেলছে। তবে যাদের ক্ষেত্রে এ সমস্যা রয়ে গেছে তাদের উপযুক্ত চিকিৎসা প্রদান করা হলে তারা আবার কাজে যোগ দেয়ার ক্ষমতা ফিরে পাবে। এজন্য নিজের মনকে শক্ত করারও পরামর্শ দেন এ চিকিৎসক। উল্লেখ্য, গত ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা ধসে মারা যান ১১৪৭ জন শ্রমিক। জীবিত উদ্ধার করা হয় ২৪৩৮ জনকে। পরিচয় না পাওয়ায় এদের ৩০০ জনের অধিক শ্রমিককে দাফন করা হয় জুরাইন কবর স্থানে। সরকারী হিসেবে এখনও নিখোঁজ রয়েছে আরো আড়াই’শ জনেরও বেশি শ্রমিক।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top