সকল মেনু

প্রকৃতির দুয়ারে হেমন্ত

xhemonto,P20magura-2320131023044404.jpg.pagespeed.ic.6-DIfUcSA9 মাগুরা প্রতিনিধি, ২৩ অক্টোবর :  ‘শুয়েছে ভোরের রোদ ধানের উপরে মাথা পেতে/ অলস গেঁয়োর মতো এইখানে কার্তিকের ক্ষেতে;/ মাঠের ঘাসের গন্ধ বুকে তার, চোখে তার শিশিরের ঘ্রাণ,/ তাহার আস্বাদ পেয়েছে অবসাদে পেকে ওঠে ধান।’ এই ধান সমৃদ্ধি আনবে কৃষকের জীবনে এবং দেশেও। কী অসাধারণ কবিতাই না লিখেছেন রুপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশ। হ্যাঁ, তাই তো প্রকৃতির পালাবদলে এখন হেমন্ত। দিগন্ত জোড়া মাঠে ধানক্ষেত। কাঁচা পাঁকা ধানের শীষ বাতাসে দুলছে। অগ্রহায়ণের মাঠে রচিত হয় ভিন্ন এক দৃশ্য। চাষি ধান কেটে নেবে। প্রকৃতি হয়ে উঠবে রুক্ষ। শুকনো। ধু ধু মাঠের ওপর সকাল-সন্ধ্যায় ভারী হয়ে জমবে সাদা শুভ্র কুয়াশা। তারপর শীত এসে এই অবসন্ন প্রকৃতিকে নিষ্পেষিত করবে কনকনে ঠান্ডায়। এভাবেই হাজার বছর ধরে প্রকৃতিতে হাতে হাত ধরে আসে হেমন্ত।

বিকেলগুলো এখন স্বল্পায়ু। চারটার পর থেকেই ছায়া ঘনিয়ে আসে। পাঁচটায় সন্ধ্যা ছুঁই ছুঁই। হেমন্ত এল। দিন আরও ছোট হয়ে আসবে ক্রমেই। বরাবর এ সময়টায় বৃষ্টি থাকে না। কিন্তু এবার বৃষ্টি যেন থামছেই না। তাই অন্য বছরের মতো এবার হেমন্তের আগমন ভিন্ন। কৃষিনির্ভর আমাদের জনজীবনে হেমন্ত আনন্দ-বেদনার কাব্যের মতো। হেমন্ত মানে পাঁকা ধানের ওপর সোনালি রোদ্দুর। এই সোনালি ফসল ছায়াপাত করে কৃষিজীবীদের জীবনে।

উপরন্তু অগ্রহায়ণ তো পাকা ফসলের ডালা সাজিয়ে আসছেই। মাঠে মাঠে চোখে পড়ে তার প্রস্তুতি। মেঘমুক্ত নীল আকাশ। নীলের বাটি যেন উপুড় হয়ে পড়ে আছে হেমন্তের আকাশে। শুভ্র শরতের পর ধোয়ামোছা পরিষ্কার আকাশ মন কেড়ে নেয়। আহ! কী তৃপ্তির সুবাস বাতাসে। মৌ মৌ গন্ধে মেতে ওঠে পাড়া। শিশির স্নানে গাছের পাতারা আরও নির্মল সবুজ হয়ে ওঠে।

সন্ধ্যা নামার আগেই কুয়াশার হালকা চাদরে ঢাকা পড়ে সন্ধ্যার প্রকৃতি। বাতাসে হিমেল পরশ। পাখির কলকাকলীতে মুখরিত ভোর। নাম না জানা হাজার রকমের পরিযায়ী পাখি মুখর করে তোলে বাংলার নদী-মাঠ-জলাশয়।

হেমন্তের শেষভাগে চলে ফসল তোলার তোড়জোড়। ধান কাটা ও ধান মাড়াইয়ে দিনমান ব্যস্ত থাকে গাঁয়ের কিষাণ-কিষাণী। শত ব্যস্ততায়ও অবসাদ নেই তাদের। ক্লান্তিহীন কর্মমুখর জীবনে জড়িয়ে থাকে ফসলের হাসি- নবান্নের হাসি।

একদিকে আমন কাটার ধুম অন্যদিকে রবিশস্য রোপণের প্রস্তুতি। ধীরে ধীরে মাশকলাই, মটরশুটির ঘন সবুজ কচি চারায় ছেয়ে যায় মাঠ। সরিষার হলুদ সমুদ্রে গন্ধে মাতোয়ারা চরাচর। বিভিন্ন শাক সবজি ও মশলা যেমন : গাজর, কপি, আলু ও পেঁয়াজ রসুনের চাষ করতে দেখা যায়। পতিত ভিটায় পড়ে থাকা মাচায় লাউ, সিম ও পুঁইয়ের কচি ডগা লকলকিয়ে বাড়তে থাকে। চারদিকে তৃপ্তির অনাবিল হাসি-উল্লাস।

হেমন্তকে বলা হয় অনুভবের ঋতু। ম্লান, ধূসর, অস্পষ্ট। তাকে যেভাবে অনুভব করা যায়, সেভাবে দেখা যায় না। শীত, গ্রীষ্ম কিংবা বর্ষার মতো হেমন্ত তীব্র, প্রখর অথবা উন্মোচিত নয়। বসন্তের মতো তার বর্ণ, গন্ধ, গরিমা নেই। হেমন্ত মৌন, শীতল, বলা যায় অন্তর্মুখী।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘নৈবদ্যে স্তব্ধতা’ কবিতায় লিখেছেন-‘আজি হেমন্তের শান্তি ব্যাপ্ত চরাচরে/ জনশূন্য ক্ষেত্র মাঝে দীপ্ত দ্বিপ্রহরে/ শব্দহীন গতিহীন স্তব্ধতা উদার রয়েছে / পড়িয়া শ্রান্ত দিগন্ত প্রসার স্বর্ণশ্যাম ডানা মেলি।’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top