সকল মেনু

আগামী সপ্তাহে প্রতিবেদন, তালিকায় নেই দুই এমপি পুত্র

dudok-0020131022153931.jpg.pagespeed.ce.nspMnMzvFZ  মেহেদি হাসান, ঢাকা, ২৩ অক্টোবর:  দেশের ৫টি ব্যাংক থেকে টেরিটাওয়েল (তোয়ালে জাতীয় পণ্য) উৎপাদক প্রতিষ্ঠান বিসমিল্লাহ গ্রুপের প্রায় ১২শ’ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার ঘটনায় আগামী সপ্তাহে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) জমা হতে যাচ্ছে অনুসন্ধান প্রতিবেদন। প্রতিবেদনে প্রায় ১ ডজন মামলার সুপারিশ থাকলেও আসামির তালিকায় নেই সরকার দলীয় দুই এমপি পুত্র। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দুদক চেয়ারম্যান মো. বদিউজ্জামান রাইজিংবিডিকে বলেন, চলতি সপ্তাহের শেষের দিকে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তারা কমিশনে তাদের অনুসন্ধান প্রতিবেদন দাখিল করবে বলে আশা করছি। দ্রুততম সময়ে তাদের এই প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে অন্য একটি সূত্র থেকে আগামী সপ্তাহে বিসমিল্লাহ গ্রুপের অনুসন্ধান প্রতিবেদন দাখিলের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

দুদক সূত্র জানায়, অনুসন্ধান প্রতিবেদনে ১০টি মামলার সুপারিশ করা হবে।
মামলাগুলোয় বিসমিল্লাহ গ্রুপের এমডি, পরিচালক এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তাসহ ৪০ থেকে ৪৫ জনকে আসামি করার সুপারিশ থাকবে।
গ্রুপের পরিচালক হিসেবে সরকার দলীয় সংসদ সদস্য অ্যাড. রহমত আলীর ছেলে এ্যাড. জামিল হাসান দুর্জয় এবং কুমিল্লার সংসদ সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) সুবিদ আলী ভূঁইয়ার ছেলে মোহাম্মদ আলীর সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে। তবে গ্রুপটির সকল নথি এবং সম্প্রতি জয়েন্ট স্টক কোম্পানি থেকে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে পরিচালক হিসেবে তাদের কোন সম্পৃক্ত পাওয়া যায়নি। এতে কেলেঙ্কারির দায় থেকে মুক্তি পেতে যাচ্ছেন ওই দুই এমপি পুত্র।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, গ্রুপের পরিচালক হিসেবে অ্যাড. জামিল হাসান দুর্জয়কে নিয়মিত বেতন ও অন্যান্য সুবিধা প্রদান করা হতো। তবে পরিচালক হিসেবে নিয়োগসংক্রান্ত যেসব নথি ছিল তার সবই গায়েব করা হয়েছে। ফলে তাদের আটকানোর আর কোন পথ নেই।
তিনি আরো জানান, গত ১৪ আগষ্ট বিসমিল্লাহ গ্রুপের অনুসন্ধান দল কমিশনের সামনে পাওয়ার পয়েন্টে অনুসন্ধান প্রতিবেদন তুলে ধরে। কমিশন তাদের কাজের অগ্রগতি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে।
আসামীর তালিকায় বিসমিল্লাহ গ্রুপের ৫টি প্রতিষ্ঠানের পরিচালকবৃন্দ ও পাঁচ ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তাদের নাম রয়েছে। বিসমিল্লাহ গ্রুপের পরিচালনা পর্ষদে যাদের নাম থাকবে বলে দুদক সুত্রে জানা গেছে তারা হলেন-
বিসমিল্লাহ টাওয়েলস লিমিটেডের চেয়ারম্যান নওরিন হাসিব, ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবিদা হাসিব, পরিচালক নাহিদ আনোয়ার খান, খন্দকার মো. মইনুদ্দিন আশরাফ, সারোয়ার জাহান।
আলপা কম্পোজিট টাওয়েলস লিমিটেডের চেয়ারম্যান নওরিন হাসিব, ব্যবস্থাপনা পরিচালক খাজা সোলেমান আনোয়ার চৌধুরী, পরিচালক শফিকুল আনোয়ার চৌধুরী, আবুল খায়ের আবদুল্লাহ, লুনা আবুদল্লাহ, মো. আলমগীর হোসাইন, হেনা সেরনিয়াবাত এবং সাইদ মাহমুদ মোসতাকি।
শাহারিশ কম্পোজিট টাওয়েলস লিমিটেডের চেয়ারম্যান শফিকুল আনোয়ার চৌধুরী, ব্যবস্থাপনা পরিচালক খাজা সোলেমান আনোয়ার চৌধুরী, পরিচালক নওরিন হাসিব। সেহরিন টেক্সটাইল ইন্ডাসট্রিশ লিমিটেডের চেয়ারম্যান শফিকুল আনোয়ার চৌধুরী, পরিচালক মির মোহাম্মদ ইয়াকুব, মের্সাস কনিজ ফাতিমা, মির মোহাম্মদ কামরুজ্জামান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক খাজা সোলেমান আনোয়ার চৌধুরী, পরিচালক নওরিন হাসিব।
হিন্দুওয়ালী টেক্সটাইল লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য- শফিকুল আনোয়ার চৌধুরী, খাজা সোলেমান আনোয়ার চৌধুরী, বেগম সরোয়ার জাহান, আলহাজ্ব নাদের জাহান বেগম, বেগম নাহিদ আনোয়ার, বেগম ফেরদৌস আনোয়ার এবং মিসেস শারমিন আনোয়ার।
এদের মধ্যে খাজা সোলেমান আনোয়ার চৌধুরী, শফিকুল আনোয়ার চৌধুরী, নওরিন হাসিব ও নাহিদ আনোয়ার খান একাধিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক পর্ষদের সদস্য থাকায় তাদের প্রায় প্রতিটি মামলার কমন আসামী হিসেবে সুপারিশ করা হয়েছে।
অন্য একটি সূত্রে জানা যায়, মামলায় ব্যাংক কর্মকর্তা হিসেবে ব্রাক ব্যাংকের এমডি (প্রাইম ব্যাংকের সাবেক ডিএমডি) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের এমডি (প্রাইম ব্যাংকের সাবেক ডিএমডি) এহসানুল হক এবং ব্যাংক এশিয়ার এমডি (প্রাইম ব্যাংকের সাবেক এসইভিপি) মো. মাহমুদ হোসেনসহ বেশ কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তার নাম থাকতে পারে।
কারন হিসেবে জানা যায়, এ তিন ব্যাংকের এমডিই জালিয়াতির সময় প্রাইম ব্যাংকের প্রধান শাখায় কর্মরত ছিলেন। তারা বিসমিল্লাহ গ্রুপের বিল পার্চেজ অনুমোদনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। মাত্রাতিরিক্ত বকেয়া থাকা সত্ত্বেও নতুন কন্ট্রাক এলসির কাগজ পত্রে তাদের স্বাক্ষর পেয়েছে দুদক।
সর্বশেষ বিসমিল্লাহ গ্রুপের নামে নতুন করে ১৪২ কোটি টাকার বিল পার্চেজ রিনিউ হয়। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে ওই সময় বিসমিল্লাহ গ্রুপের বকেয়া ঋণের পরিমাণ ছিল ১৫০ কোটি টাকার উপরে। এই বিশাল অঙ্কের বকেয়া থাকার পরও ঐ অর্থ ছাড় হয়েছিল।
দুদক সূত্র থেকে আরো জানা যায়, মূল জালিয়াতি প্রক্রিয়ায় গ্রুপের এমডি খাজা সোলেমান আনোয়ার চৌধুরীর সঙ্গে প্রতিটি ব্যাংকের কর্মকর্তাদের কিছু না কিছু সম্পৃক্ততা রয়েছে। জালিয়াতির মূল ঘটনাটি শুরু হয় যখন বিসমিল্লাহ গ্রুপ ২০০৬ সালের জুন-জুলাই মাসের দিকে জনতা ব্যাংক থেকে সরে আসার পর প্রাইম ব্যাংক থেকে কন্ট্রাক এলসিতে ঋণ নেয়া শুরু করে।
এক্ষেত্রে তাদের এ কাজে সরাসরি সহায়তা করেন বর্তমানে ৩ ব্যাংকের এমডি যারা ওই সময় প্রাইম ব্যাংকের ডিএমডি ছিলেন। তাদের সাথে ছিল একই ব্যাংকের ২০-২২ শীর্ষ কর্মকর্তা।
দুদক সূত্র জানায়, বিসমিল্লাহ গ্রুপের ঋণ জালিয়ারিত পরিমাণ প্রাথমিকভাবে প্রায় ১২শ’ কোটি টাকা জানা গেলেও দুদক টিমের প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষে এ অর্থের পরিমাণ আরও কম হবে।
কারণ, ইতোমধ্যেই সাউথইস্ট ব্যাংকের সঙ্গে লেনদেন চুকিয়ে ফেলেছে বিসমিল্লাহ গ্রুপ। এছাড়া শাহজালাল এবং যমুনা ব্যাংকেও কিছু অর্থ সমন্বয় হয়েছে বলে জানা গেছে।
জালিয়াতির ঘটনায় সম্পৃক্ত মোট পাঁচটি ব্যাংক হলো- জনতা ব্যাংক, শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক এবং প্রাইম ব্যাংক।
কমিশনের অনুসন্ধান টিম সম্পৃক্ত ব্যাংকগুলোর নথিপত্র পর্যালোচনা করে ইতোমধ্যেই শতাধিক ব্যাংক কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ সম্পন্ন করেছে। যার মধ্যে প্রাইম ব্যাংকের সাবেক ও বর্তমান মিলিয়ে প্রায় ৩০ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।
তবে এ গ্রুপের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা ব্যক্তিদের বিদেশ থাকার কারণে অনুসন্ধান টিমের কাজে ব্যাঘাত ঘটেছে। বিদেশে থাকা এমডি, চেয়ারম্যান ও দুই পরিচালকসহ ওই কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে না পারায় জালিয়াতির অনেক তথ্যই অজানা থেকে যাচ্ছে।
বিসমিল্লাহ গ্রুপের প্রায় ১২শ’ কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতির ঘটনা অনুসন্ধানে ২৬ ফেব্রুয়ারি পাঁচ সদস্যের একটি অনুসন্ধান টিম গঠন করে দুদক। দুদকের উপ-পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে এ অনুসন্ধান টিমের অন্য সদস্যরা হলেন- সহকারি উপ-পরিচালক তৌফিকুল ইসলাম, গুলশান আনোয়ার প্রধান, উপ-পরিচালক সরদার মঞ্জুর আহমেদ এবং মো. আল আমিন।

 

 

 

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top