সকল মেনু

ষড়যন্ত্র করে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করা যাবে না-প্রধানমন্ত্রী

BABU .PM  picমো.নুরুন্নবী বাবু.দিনাজপুর প্রতিনিধি ২২ অক্টোবার: বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আগামী ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দেশের সংবিধান অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হবে। এই লক্ষ্যে সব ধরনের ব্যবস্থা নির্বাচন কমিশন গ্রহণ করেছে। এই লক্ষ্যে সকল দলের অংশ গ্রহণের মাধ্যমে নির্বাচন সম্পন্ন করতে নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকারের রূপরেখা ঘোষনা করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে স্থানীয় গোর-এ শহীদ ময়দানে এক বিশাল জনসভায় আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আমরা যখন দেশের মানুষের কল্যাণ ও উন্নয়নের জন্য অবিরাম কাজ করে যাচ্ছি তখন বিএনপি নির্বাচনকে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বাধা গ্রস্ত করার জন্য বিশৃঙ্খলা ও অশান্তি শুরু করেছে। মানুষ আর অশান্তি চায় না। তাই সংবিধানের ভিত্তিতেই দেশ পরিচালিত হবে আর আগামী নির্বাচন হবে সংবিধানের আলোকে। প্রধানমন্ত্রী তার ৩৮ মিনিটের ভাষণে বর্তমান সরকারের বিগত পৌনে ৫ বছরের উন্নয়নের বিবরণ তুলে ধরে বলেন, আমরা এদেশের কৃষক, শ্রমিক, খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করেছি। বিগত বিএনপি সরকারের আমলে ১ জন দিন মজুর সারা দিন পরিশ্রম করে ২ কেজি চাল কিনতেন আর আজকে সেই দিন মজুর ১০ কেজি চাল কিনে বাসায় ফিরে। মানুষের ভাগ্যের উন্নয়নে আমরা যে কর্মসূচী গ্রহণ করেছি পূর্বের কোন সরকার তা করেননি। আমরা দারিদ্রের ভাগ ৪০ থেকে কমিয়ে ২৬ এ এনেছি। জাতীয় প্রবৃদ্ধির হার ৬ ভাগ ধরে রাখা হয়েছে। মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি রোজগার বেড়েছে। এখন মাথাপিছু আয় ১৪৪ মার্কিন ডলার। বিদ্যুতের উন্নয়ন যেভাবে আমরা শুরু করেছি তাতে ইনশাআলাহ মানুষ ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পাবে। জোট সরকার ক্ষমতা ছাড়ার সময় ৩২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত রেখে গেলেও আমরা এখন ৯৯০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করছি। হাওয়া ভবনের দুর্নীতির কারণে মানুষ বিদ্যুৎ না পেয়ে পেয়েছিল খাম্বা।

শেখ হাসিনা বলেন, শিক্ষা ক্ষেত্রে আমরা যে অগ্রগতি সাধন করেছি এরফলে আমাদের ছেলে-মেয়েরা বিজ্ঞান প্রযুক্তিতে শিক্ষিত হয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আলোকিত করছি। বছরের প্রথম দিনেই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে নতুন বই। মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত বিনা পয়সায় পড়াশোনার সুযোগ দেয়া হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে ৭৮ লক্ষ ৭০ হাজার শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি দেয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ট্রাস্টের মাধ্যমে ১ লাখ ৩৬ হাজার শিক্ষার্থীকে সহায়তা দেয়া হচ্ছে। উন্নত জাতি হিসেবে আমাদের সন্তানদের গড়ে তোলার জন্য আমরা প্রতিটি জেলায় একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছি। তিনি বলেন, খাদ্য সংকট দুর করে কৃষকের মুখে হাসি ফোটানো হয়েছে। জোট সরকারের আমলে সারের জন্য কৃষকদের গুলি করে হত্যা করা হয়। আর আমাদের সরকার ১০ টাকার একাউন্ট খোলা সুযোগ দিয়ে কৃষকদের সরাসরি ভুতুর্কির টাকা প্রদান করছে। দেশের সার্বিক উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকার যে ধারার সুচনা করেছে তা অব্যাহত রাখতে যে কোন ষড়যন্ত্র, বিশৃঙ্খলা ও অশান্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বেগম জিয়া দেশকে পেছনের দিকে নিয়ে যেতে চান। আমরা যখন সামনের দিকে এগিয়ে জনগনের ভোট ও ভাতের অধিকারকে সুনিশ্চিত করার কাজ চূড়ান্ত করছি তখন তিনি দেশকে ৯১ ও ৯৬ সালের পেছনের দিকে ঠেলতে চান। বেগম জিয়া কখনই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ধারণাকে মানেনা। তিনি ১৯৯১ সালে ছাত্রদলের গুন্ডা বাহিনী পাঠিয়ে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হাবিবুর রহমানের বাসায় হামলা করিয়েছিলেন। ভোটার বিহীন নির্বাচন করে ১৫ ফেব্র“য়ারী বেগম জিয়া টিকতে পারেননি। তিনি সব সময় ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে জনগনের অধিকারকে ছিনতাই করে পেছন দরজা দিয়ে ক্ষমতায় যেতে চান।

বিএনপি’র কঠোর সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে স্ব-পরিবারে হত্যা করে জিয়া স্বাধীনতার শত্র“ ও যুদ্ধাপরাধীদের পুরস্কৃত করে প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রী বানিয়েছিলেন। আমরা যখন আমাদের নির্বাচনী ওয়াদা পূরণের জন্য যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেছি ও রায় কার্যকরের উদ্যোগ নিচ্ছি তখন তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ধুয়া তুলে দেশে বিশৃঙ্খলার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে। জামায়াত-শিবির রগ কেটে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে মানুষ হত্যা করছে আর বেগম জিয়া তাদেরকে রক্ষা করার জন্য মায়া-কান্না করছেন। ১৫ আগষ্ট বেগম জিয়ার জন্মদিন না হলেও আমাকে কষ্ট দেয়ার জন্য সেদিন তিনি ভূয়া জন্মদিন পালন করে ফুর্তি করেন, কেক কাটেন। অথচ দিনাজপুরের মানুষ জানেন বেগম জিয়া এখানকার সরকারী বালিকা বিদ্যালয়ে মেট্রিক পরীক্ষার রেজিষ্ট্রেশনের সময় জন্মের তারিখ উলেখ করেছেন ৫ সেপ্টেম্বর। তিনি নিজেই পাশ করেনি বলে শিক্ষার মর্যাদা বোঝেন না। তিনি চান না আমাদের ছেলে-মেয়েরা শিক্ষিত হোক। জ্ঞান-বিজ্ঞানে এগিয়ে যাক। মাদ্রাসা শিক্ষার উন্নয়নের উলেখ করে তিনি বলেন, এতিমদের দিয়ে বোমা বানিয়ে লাশ করা হচ্ছে। হেফাজতে ইসলাম ও জামায়াত-শিবিরের মদদদাতা বিএনপি’র কঠোর সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, যারা কোরআন শরিফ পুড়িয়ে বাইতুল মোকারমে আগুন জ্বালিয়ে ইসলাম রক্ষা করতে চায় তাদের সম্পর্কে জনগনকে সব সময় সজাগ ও সোচ্চার হতে হবে।

সর্বদলীয় সরকারের প্রস্তাব মেনে নিয়ে শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচনে অংশ নিয়ে বেগম জিয়াকে গণতন্ত্রের যাত্রাকে শংকামুক্ত করার আহ্বান জানান। তিনি দৃঢ়তার সাথে বলেন, আগামী নির্বাচন হবে সংবিধানের আলোকেই। শেখ হাসিনা সোনার বাংলা গড়ে তুলে ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে উন্নত করার জন্য আগামী নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দেয়ার জন্য উপস্থিত জনতাকে আহ্বান জানালে জনতা দু’হাত তুলে অঙ্গীকার করেন।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু এমপি বেগম জিয়ার উদ্দেশ্যে বলেন, ষড়যন্ত্র বন্ধ করে গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে আগামী নির্বাচনে অংশ নিয়ে নিজের গ্রহণযোগ্যতা প্রমাণ করুন।

উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য তোফায়েল আহমেদ এমপি বলেন, শেখ হাসিনার সর্বদলীয় সরকার গঠনের প্রস্তাবের বিরোধীতা করে বেগম জিয়া যে প্রস্তাব দিয়েছেন তা সংবিধান সম্মত ও বাস্তব সম্মত নয়। আসুন আলোচনা করে আগামী নির্বাচনের পরিবেশ গড়ে তুলি।

দলের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, উন্নয়নের ধারাকে যদি অব্যাহত রাখতে চান তাহলে আগামী নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে শেখ হাসিনাকে আবারো প্রধানমন্ত্রী করতে হবে।

দুপুর দেড় টায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ভূমিপ্রতিমন্ত্রী এ্যাডঃ মোস্তাফিজুর রহমান এমপি’র সভাপতিত্বে জনসভার কাজ শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী দুপুর ২টা ৫৫ মিনিটে হেলিকপ্টার যোগে দিনাজপুর বড় ময়দানে অবতরণ করে ৪টা ১৫ মিনিটে ৪২৩ কোটি ৮৬ লক্ষ টাকার ২৮টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ৯টি প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্তর ফলক উন্মোচন করে সভাস্থলের বামপাশে। তিনি ৪টা ৩০ মিনিটে বক্তব্য শুরু করে ৫ টা ৮ মিনিটে বক্তব্য শেষ করেন। প্রধানমন্ত্রী দিনাজপুর সরকারী কলেজ ও সরকারী মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য ২টি করে বাস প্রদানের ঘোষনা দেন।

জনসভায় অন্যান্যদের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন প্রেসিডিয়াম সদস্য বাবু সতীশ চন্দ্র রায়, রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক এমপি, স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক এমপি, এ্যাডঃ ফজলে রাব্বী এমপি, দুযোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রানমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী এমপি, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি, দিনাজপুর সদর আসনের এমপি ইকবালুর রহিম, মনোরঞ্জনশীল গোপাল এমপি, আজিজুল হক চৌধুরী এমপি, পঞ্চগড় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল ইসলাম সুজন এমপি, ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদেক কোরেশী, দিনাজপুরের মহিলা এমপি সুলতানা বুলবুল, জাসদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক নজরুল হক প্রধান। সভা পরিচালনা করেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের প্রশাসক আজিজুল ইমাম চৌধুরী।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top