সকল মেনু

লালন মাজারে ভেঙ্গেছে সাধুর হাট ফিরছে যে যার আপন ঘরে

Lalon.. কাঞ্চন কুমার,কুষ্টিয়া:  বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের ১২৩ তম তিরোধান (মৃত্যুবার্ষিকী) দিবসের ৫ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে আসা সাধুদের রবিবার হাট ভেঙ্গে গেছে। সাধুরা ফিরছে যে যার আপন ঘরে। আখড়া ঘুরে দেখা গেছে, দুর-দূরান্ত থেকে আসা বাউলরা নিজ নিজ আস্তানা ছেড়ে বিছানাপত্র গুছিয়ে রওনা হয়েছে অনেকেই। তবে যাওয়ার আগে আঁখড়া বাড়ির পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। গুরুকে বারবার প্রনাম ও নানা রকম ভক্তি জানিয়ে বিদায় নেন শিষ্যরা।

গুরু ভক্তি আর সাধনায় পরিপূর্ন সিদ্ধ মন নিয়ে বিদায় নেয়ার সময় অনেক বাউল তাদের চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি। আবার দেখা হবে সাঁইজির উদাসী ডাকের টানে। গুরু ইসাহক শাহ জানান, সাঁইয়ের জীবদ্দশায় শুধূমাত্র তার ভক্ত আর শিষ্যদের নিয়ে মুলত আড়াই দিনের উৎসব করতেন। সে নিময় মেনেই বাউলরা ভাটাই আসে উজানে ফিরে যায়,যে যার আপন নিবাসে। প্রকৃত ভেকধারী বাউলরা সরকারি অনুষ্ঠানের ব্যাপারে খোঁজখবরও রাখেনা না। তাদেরকে মঞ্চে ডাকলেও তারা আসন ছেড়ে উঠেন না। রবিবার ভোরে সুর্য্য ওঠার আগেই অহিংস মানবতা প্রতিষ্ঠায় আপন মোকামে গুরুর চরণ ছুয়ে দিক্ষা নিয়ে ভক্তি নিবেদন করে শিষ্যত্ব গ্রহণ করেছে অনেক বাউল। লালন আঁখড়ার আশে পাশে ও একাডেমীর নিচে যারা আসন গাড়ে তারা সাঁইকে ভক্তি আর আরাধনায় নিমগ্ন থাকে কখনো স্থান ত্যাগ করেনা। বিছানাপত্র হাতে নিয়ে কথা বলেন গাজীপুরের বাউল গুরু ইসাহক শাহ। প্রায় একযুগ বাড়িতে ফেরেন না তিনি। সংসার ধর্ম টানে না তাকে। বাড়ির কোন খবর রাখেন না। সারা বছর পথেই কেটে যায় এ ফকিরের। তবে মাঝে মধ্যে আসেন সাঁইজির ধামে। মনের তৃষ্ণা মেটাতে।

পরিপূর্ণ হৃদয় নিয়ে ফিনের ভবের বাজারে। অনেক বাউল, সাধু আঁখড়া ছাড়লেও অনেকে গুরুর বাড়িতে থেকে যাবেন আরও কদিন।বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের ১২৩ তম তিরোধান দিবসের ৫ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের সমাপনী দিনে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ও আওয়ামীলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ। সভাপতিত্ব করেন কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক ও লালন একাডেমির সভাপতি সৈয়দ বেলাল হোসেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী, খোকসা উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সদর উদ্দিন খান, জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি হাজী রবিউল ইসলাম, কুমারখালি উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল মান্নান, লালন একাডেমির সাবেক সাধারণ সম্পাদক তাইজাল আলী খান ও বাংলা লিংকের বাবুল হক। আলোচক হিসেবে বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের জীবন-দর্শন তুলে ধরে আলোচনা করেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড.শাহিনুর রহমান।

স্বাগত বক্তব্য রাখেন লালন একাডেমির সাধারণ সম্পাদক রেজানুর রহমান খান চৌধুরী মুকুল। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন প্রকৌশলী সেলিম উদ্দিন প্রমুখ। প্রধান আলোচক তার বক্তব্যে বলেন, সমাজ-ইতিহাসের ধারায় বিচার করলে বলা যায়, গ্রামবাংলার মানবতাবাদী মুক্তবুদ্ধির আন্দোলনের প্রাণপুরুষ ছিলেন লালন ফকির। সামাজিক ভেদনীতি, শ্রেনী-বৈষম্য, বর্ণ, শোষণ, জাতপাতের কলহ, সামন্ত-নিগ্রহও সা¤প্রদায়িক বিরোধের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন উচ্চকন্ঠ। লালনের নাম আজ দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিশ্বের প্রতিটি দেশে উচ্চারিত হয়। একজন গ্রাম্য নিরক্ষর সাধকের এ অর্জন ও প্রতিষ্ঠা স্বভাবতই বিস্ময় জাগায় মনে। মানুষের প্রতি মানুষের শোষন-বঞ্চনা-অবিচারের চির অবসান কামনা করে সমাজমনস্ক সাধক লালন শ্রেনীহীন শোষনমুক্ত এক মানবসমাজের স্বপ্ন দেখেছেন। আলোচনা শেষে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে দেশের খ্যাতি সম্পন্ন শিল্পী সহ লালন একাডেমির শিল্পীরা সারা রাত সঙ্গীত পরিবেশন করেন। অনুষ্ঠানটি সার্বিক পরিচালনা ও উপস্থাপনা করেন শুকদেব সাহা ও মাহমুুদুর রহমান আল কাদেরী।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top