সকল মেনু

প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব মিশ্র প্রতিক্রিয়া বিশিষ্টজনদের মধ্যে

প্রতিবেদক ঢাকা:

intaligentia-365x220জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া অন্তর্বর্তীকালীন সর্বদলীয় সরকার গঠনের প্রস্তাবকে ইতিবাচক বলে মনে করছেন অধিকাংশ বিশিষ্টজন। শুক্রবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী ওই প্রস্তাব দেওয়ার পর বাংলানিউজের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে তারা এমন অভিমত তুলে ধরেন। তাদের মতে, প্রধানমন্ত্রীর এ প্রস্তাবে চলমান রাজনৈতিক সঙ্কটের ৯৫ শতাংশ সমাধান হয়ে গেছে।
তবে প্রধানমন্ত্রীর এমন প্রস্তাবের সমালোচনাও আছে বিশিষ্টজনদের মধ্যে। এ প্রস্তাব আরো সুনির্দিষ্ট হতে পারতো বলে মনে করছেন অনেক বিশিষ্ট জন। আবার কেবল বিএনপির কাছে অন্তর্বর্তী সরকারের মন্ত্রিপরিষদের জন্য নাম প্রস্তাব না করে সব দলের প্রতি আহবান জানানো উচিত ছিলো বলেও মনে করছেন কেউ কেউ।
প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিকুল হক বলেন, এ প্রস্তাবের মধ্য দিয়ে চলমান রাজনৈতিক সংকটের ৯৫ শতাংশ সমাধান হয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী এও বলেছেন, অক্টোবর থেকে জানুয়ারির মধ্যেই নির্বাচন হবে।
তিনি বলেন, এখন ৫ শতাংশ সমাধান বাকি। সর্বদলীয় সরকারের প্রধান কে হবেন, সেটি নির্ধারণ করতে পারলেই সমস্যার সমাধান।
তবে সর্বদলীয় সরকারের প্রধান হিসেবে কারো নাম প্রস্তাব করেননি এই প্রবীণ রাজনীতিবিদ।

আলোচনা করা বিএনপির কর্তব্য
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আকবর আলি খান বলেন, প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে নির্বাচনকালীন সরকারের যে প্রস্তাব দিয়েছেন তা ধনাত্মক। এখন বিএনপির উচিত তাদের কথা নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করা।
প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব অনুযায়ী সংকট নিরসন সম্ভব কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সংকট নিরসন হবে কিনা এ বিষয়ে নিশ্চয়তা দিতে পারবো না। তবে এ বিষয় নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করা বিএনপির কর্তব্য বলে মনে করি।

প্রধানমন্ত্রী অনেকখানি ছাড় দিয়েছেন
সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদিন মালিক বাংলানিউজকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মন্ত্রিসভা নিয়ে বিরোধী দলের প্রতি যে প্রস্তাব দিয়েছেন তা ইতিবাচক। তিনি অনেকখানি ছাড় দিয়েছেন।
তবে এ প্রস্তাবকে আরো পরিষ্কার করলে সুবিধা হতো উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বিএনপির কাছে মন্ত্রিসভা গঠনের যে আহ্বান জানিয়েছেন সেটা পরিষ্কার হয় নি। মানে বিরোধী দল অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে অংশগ্রহণ করবে, নাকি শুধু বিরোধী দলের নাম লাগানোর জন্য এ প্রস্তাব তা ক্লিয়ার হয়নি।
শাহদিন মালিক বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মন্ত্রিসভায় বিরোধী দলের কয়জন থাকবে, সরকারি দলের কয়জন থাকবে এসব থাকলে আমাদের বুঝতে সুবিধা হতো। প্রস্তাবটি আরো বেশি ফলপ্রসু হতো।

প্রস্তাব ইতিবাচক
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামাল তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, এ প্রস্তাব ইতিবাচক। এর ফলে আলোচনার সুযোগ তৈরি হয়েছে। এখন দুই প্রধান নেত্রী বসে যেসব ক্ষেত্রে নিজেদের নিশ্চয়তা প্রয়োজন, সেগুলো নিয়ে কথা বলতে পারবেন।
অসাংবিধানিক শাসনের পুনারাবৃত্তি হবে না বলে যে ঘোষণা প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন সেটিকেও সাধুবাদ জানিয়েছেন সুলতানা কামাল। তিনি এও বলেন, আমরা কখনোই চাইনা গণতন্ত্রের মাঝে ছেদ পড়ুক।

সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে
টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে বিরোধী দল সাড়া দেবে কিনা এটা তারাই বলতে পারে। তবে, প্রধানমন্ত্রীর এ প্রস্তাব ইতিবাচক। তার এ বক্তব্যের মাধ্যমে সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। এখন এটা দু’দলের উপর নির্ভর করে। এতে সব দলের সাড়া দেয়া উচিত বলে একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমি মনে করি।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এ প্রস্তাবটি আরো স্পষ্ট হলে ভালো হতো। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মন্ত্রিসভায় কতজন থাকছেন? এ সরকারের প্রধান কে হবেন? এব প্রশ্ন থেকেই যায়। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে বিষয়গুলো পরিষ্কার হলে আরো ভালো হত। আমরা বেশি করে স্বাগত জানাতে পারতাম। তবে, উভয়পক্ষ আগ্রহী হলে এর সমাধান করা যাবে। আলোচনার মাধ্যমে এর সমাধান হতে পারে।
তিনি বলেন, বিরোধী দল এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে দুর্ভাগ্যজনক হবে। উৎকণ্ঠা থেকেই যাবে। ২৪ অক্টোবরের পর কি হবে তা নিয়ে ভবিষ্য‍ৎ বাণী করা কঠিন। মানুষের জীবনযাত্রা ব্যহত হবে। অগণতান্ত্রিক শক্তির উত্থান হতে পারে।

প্রস্তাবটি পূর্ণাঙ্গ নয়
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, আমি মনে করি না, এটি ইতিবাচক প্রস্তাব। আধাখেচড়া প্রস্তাব মনে হয়েছে এটিকে। কারণ প্রধানমন্ত্রী বলেননি ইলেকশন কিভাবে হবে। প্রস্তাবটি পূর্ণাঙ্গ নয়। তিনি সর্বদলীয় সরকারের কথা বলেছেন। কিন্তু কোন দল থেকে কতজন বা কবে থেকে বসা যায়, সেটি নিয়ে বলেননি। কয়জন মিলে গঠন হবে সেটিও বলেননি।
তিনি বলেন, এর ফলে নিশ্চয়ই বিরোধীদল এখন দৌড়ে প্রস্তাব মেনে নেবে না। আবার প্রধানমন্ত্রী সংসদে এসে মুলতবি প্রস্তাব দেয়ার জন্যে বলেছেন। ফলে এটি সমাধান দেয়নি।

কোন পথে এগুচ্ছেন পরিষ্কার না
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান খান বলেন, প্রধানমন্ত্রী কোন পথে এগুচ্ছেন তা পরিষ্কার না। আজকের যে বক্তব্য তার অর্ধেকই পুরাতন কথা, যা তিনি আগেও বলেছেন। এর বাইরে নির্বাচনী বক্তব্য এবং বিরোধী দলের উদ্দেশ্যেও তিনি কথা বলেছেন, কিন্তু এর বাইরেও দেশে আরো দল আছে যারা দেশের মানুষের দাবি নিয়ে রাজনীতি করে যাচ্ছে।
এসময় সরকার পক্ষ থেকে সব দল নিয়ে ও দ্বিপক্ষীয়ভাবে আলোচনা করার জন্য প্রস্তাব করেন তিনি।
প্রস্তাব অকার্যকর
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, প্রধানমন্ত্রীর পুরো বক্তব্যই ছিল বিরোধী দলকে কেন্দ্র করে, যা খুবই অকার্যকর। কারণ সরকার পক্ষ থেকে একটি প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে যা বিরোধী দল খারিজ করে দিচ্ছে, আবার বিরোধী দল একটি প্রস্তাব দিচ্ছে যা সরকার পক্ষ খারিজ করে দিচ্ছে। এখানে তৃতীয় কোনো দল মোটেই প্রধান্য পায়নি যে কারণে এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে কোনো বক্তব্য নেই নাগরিক ঐক্যের পক্ষ থেকে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top