সকল মেনু

মৎস বিভাগ উদাসীন : সরকারের উদ্যোগ ভেস্তে যাচ্ছে

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, ১৮ অক্টোবর : সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে কলাপাড়া ও তার আশপাশ সংলগ্ন গভীর বঙ্গোপসাগরে শতাধিক ট্রলার মা ইলিশ শিকারে মত্ত 1279820725Elisরয়েছে। কলাপাড়া উপজেলা মৎস বিভাগের চরম উদাসীনতার কারনে প্রজনন মৌসুমে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে মা ইলিশ রক্ষায় সরকারের মহাপরিকল্পনা ভেস্তে যাচ্ছে। নিষেধাজ্ঞা জারি থেকে প্রতিরাতে কলাপাড়ার মহিপুর, আলীপুর, ঢোস, রামনাবাদ স্পট থেকে ১০ থেকে ১৫টি ট্রলার বরফ বোঝাই করে গভীর সাগরে মা ইলিশ শিকারে মেতে উঠেছে। কেউ কেউ আবার ট্রলার বোঝাই ইলিশ রাতের আধারে আনলোড করে আবার সাগরে ছুটছে। কোস্টগার্ডের নিজামপুর ক্যাম্পের ভুমিকা নিয়ে প্রশ্ন করছে ইলিশ শিকার বন্ধ রাখা জেলেরা। খবর নির্ভরযোগ্য বিভিন্ন সুত্রের।

সরকারি সুত্রমতে ১৩ অক্টোবর থেকে ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত সারা দেশে ইলিশ আহরণ, পরিবহন, মজুদ, বাজারজাতকরণ ও বিক্রি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এটি যারা অমান্য করবে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিভিন্ন উপকূলীয় জনপদে মৎস বিভাগের উদ্যোগে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করার কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। এলক্ষ্যে দেশের অন্যান্য এলাকায় ব্যাপক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। কিন্তু দক্ষিণ জনপদের সবচেয়ে বড় ইলিশের মোকাম কলাপাড়া উপজেলার মহিপুর-আলীপুরসহ রামনাবাদ, ঢোস এলাকা রয়েছে অনেকটা অরক্ষিত। কলাপাড়া উপজেলায় সাগরে ইলিশ শিকারের জন্য অন্তত চার শ’ ফিশিংবোট রয়েছে। ইঞ্জিন চালিত নৌকা রয়েছে অন্তত তিন হাজার এবং খুটাজেলেদের বোট রয়েছে দশ সহ¯্রাধিক। নিয়ম রয়েছে ইলিশ শিকারের এসব যানবাহন নিষোধাজ্ঞাকালীন ঘাটে ভিড়িয়ে রাখার কথা। ইঞ্জিন চালিত ট্রলার এবং খুটা জেলেদের হাজার হাজার নৌকা কিনারে, বালুর চরে তুলে রাখা হয়েছে। কিন্তু হেভি ইঞ্জিন চালিত গভীর সমুদ্রে ইলিশ শিকার কাজে নিয়োজিত ট্রলারগুলোর অধিকাংশ ঘাটে নেই। নামেমাত্র শতাধিক ট্রলার চার/পাঁচটি ঘাটে রয়েছে। বাকি শতাধিক ট্রলার রাতের আধারে বরফ বোঝাই করে গভীর সাগরে মা ইলিশ শিকারে ব্যস্ত রয়েছে।

একাধিক জেলে জানান, এখন বড় সাইজের মা ইলিশ জেলেদের জালে ধরা পড়ছে। যা এক শ্রেণীর চিহ্নিত প্রভাবশালী মালিকরা গভীর সাগরে তাদের ট্রলার মাছ ধরার জন্য পাঠিয়ে দিচ্ছে। জেলেদের দাবি মালিকদের তালিকা করে তাদের ট্রলারগুলো কোথায় রয়েছে তা খোজা শুরু করলেই বের হয়ে যাবে কারা মা ইলিশ শিকার করতে সাগরবক্ষে অবস্থান করছে। ১৫ অক্টোবর রাতে মহিপুর ঘাট থেকে অন্তত ১০টি ট্রলার বরফ বোঝাই করে সাগরে রওয়ানা দেয়। এসময় স্থানীয় লোকজন কোস্টগার্ড নিজামপুর ক্যাম্পে এবং উপজেলা মৎস কর্মকর্তাকে অবহিত করেন। এসময় ধাওয়া করে মাত্র এফবি মা নামের একটি ট্রলার জালসহ আটক করা হয়েছে। কিন্তু কোন জেলেকে আটক কিংবা গ্রেফতার করা যায় নি। এমনকি এঘটনার দুইদিন পরেও ওই জাল পুড়িয়ে দেয়া হয় নি। ৪৮ ঘন্টা পরেও নিজামপুর কোস্টগার্ডের কন্টিজেন্ট কমান্ডার মো. আমিনুল ইসলাম ও উপজেলা মৎস কর্মকর্তা শরীফুল ইসলাম আটক ট্রলার মালিকের নামটি মিডিয়া কর্মীদের জানাতে পারেন নি। এ থেকেই মা ইলিশ রক্ষায় পরিচালিত কর্মকান্ডের বিষয় অনুধাবন করা যায়। উপজেলা মৎস কর্মকর্তা শরীফুলকে স্থানীয় দেশপ্রেমিক জেলে কিংবা সাধারন মানুষ এমনকি জেলে সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বিভিন্ন ধরনের তথ্য দিয়ে সহায়তা করলেও তার সহযোগিতা মেলেনা বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে দক্ষিণ উপকুলে মা ইলিশ রক্ষায় সরকারের উদ্যোগ ভেস্তে যাচ্ছে। একাধিক নির্ভরযোগ্য সুত্রমতে বর্তমানে যেসব ট্রলার গভীর সাগরে ইলিশ শিকারে মত্ত রয়েছে এরা নিষেধাজ্ঞার শেষ রাতে কিংবা পরের দিন ২৪ অক্টোবর আহরিত ইলিশ নিয়ে কিনারে ফিরবে এমন পরিকল্পনা রয়েছে। স্থানীয় জেলেসহ সাধারণ মানুষের দাবি নৌবাহিনীর উদ্যোগে ট্রলার মালিকদের মাধ্যমে তাদের সকল ট্রলার কিনারে রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারলেই মা ইলিশ রক্ষায় সরকারের উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। মহিপুর মৎস বন্দর সমিতির সভাপতি আলহাজ দিদার উদ্দিন আহম্মেদ মাসুম জানান, কলাপাড়া উপজেলায় অন্তত ৩০০ মালিক রয়েছেন, যাদের নিজস্ব ট্রলারসংখ্য প্রায় চার শ’। এছাড়া শুধুমাত্র তাদের সমিতিভুক্ত মহিপুরের ৫২টি আড়তে ইলিশ বেচাকেনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রয়েছে অন্তত ৮০০ ফিশিং বোট। তার দাবি অধিকাংশ ট্রলার মাছ শিকার থেকে বিরত রয়েছে। আলীপুর আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি আনছার মোল্লা জানান, যেসব ট্রলার সাগরে এখনও ইলিশ শিকার করছে তারা সবাই ভোলা, বাগেরহাটসহ বিভিন্ন এলাকার। তাদের সমিতির সদস্যদের কোন বোট ইলিশ শিকারের সঙ্গে জড়িত নয়। উপজেলা মৎস কর্মকর্ত শরীফুল ইসলাম জানান, তারা ১৫, ১৬ ও ১৭ অক্টোবর তিন দিন অভিযান চালিয়ে ইলিশ শিকারের জন্য সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতিকালে চারটি ইঞ্জিন চালিত নৌকা আটক করেছেন। এছাড়া এ কাজে জড়িত দুই জেলেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনিও দাবি করেন ইলিশ শিকার বন্ধ করে অধিকাংশ ট্রলার ঘাটে ভিড়ানো রয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top