সকল মেনু

লোক দেখানো বর্জ্য অপসারণ ডিসিসির !

ঢাকা: কোরবানির ২৪ ঘণ্টা পরও বহু এলাকায় ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্ন কর্মীদের বর্জ্য অপসারণ না করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
1-hajaribag-BG20131017073019 (1)
এমনকি অনেক এলাকায় পরিচ্ছন্ন কর্মী, গাড়ি এমনকি তদারকির দায়িত্বে থাকা দুই সিটি কর্পোরেশনের কোনো কর্মকর্তাদের দেখা যায়নি বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

জানা যায়, ঈদের দিন বুধবার শেষ বিকেলে বৃষ্টির অজুহাতে পরিচ্ছন্ন কর্মীরা অনেক এলাকায় যাননি।

দুই সিটি কর্পোরেশনের বেঁধে দেওয়া ৪৮ ঘণ্টার সময়সীমার ২৪ ঘণ্টা পার হলেও এখনো নগরীর অর্ধেক বর্জ্য অপসারণ করতে পারেননি পরিচ্ছন্ন কর্মীরা।

হাজারীবাগের ইসলামবাগ এলাকার বাসিন্দা ছিদ্দিক মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, কোরবানির পর ঈদের দিন ও ঈদের পরদিন বৃহস্পতিবার দিন শেষ হলেও পরিচ্ছন্ন কর্মীদের দেখা যায়নি।

রাস্তার দুই পাশ, ড্রেন কোরবানির বর্জ্য ও রক্তে সয়লাব। কন্ট্রোল নাম্বারে ফোন দিয়েও বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো পরিচ্ছন্ন কর্মীর দেখা মেলেনি।

পুরান ঢাকার বংশাল এলাকার বাসিন্দা নাঈমা ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, বংশাল রোডের দুই পাশের প্রায় সবগুলো বাসার সামনে পশুর বর্জ্য পড়ে আছে। এতে চারদিকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।

মাত্র ২৪ ঘণ্টায় এই দুর্গন্ধ হলে ৪৮ ঘণ্টার পর তো রাস্তায় বের হওয়াই যাবে না! পরিচ্ছন্ন কর্মী ও ময়লার গাড়ি না আসায় অনেকেই পশুর বর্জ্য ড্রেনে ফেলে দিয়েছে। ডিসিসির এমন উদাসীনতায় আমার মতো অধিকাংশই ক্ষিপ্ত।

লালবাগ এলাকার মুদি ব্যবসায়ী শিশির চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিবছর ডিসিসি সময় দিয়েই খালাস। মূল রাস্তার দুই পাশে সামান্য একুট পরিষ্কার করা আর ব্লিচিং পাউডার ছিটিয়েই ওদের কাজ শেষ। মূল রাস্তা ছাড়া গলির রাস্তায় থাকা বর্জ্য পরিষ্কার করতে পরিচ্ছন্ন কর্মীরা কখনো যায় না।

আক্ষেপ করে তিনি আরও বলেন, ডিসিসির দরকার একটা ঘোষণা দেওয়া। তা তা দিয়েছে। পরে নগর বাসিন্দাদের কী অবস্থা হলো তা তাদের দেখার বিষয় না। বর্জ্য অপসারণ না করায় কাক, কুকুর ও অন্যান্য প্রাণীরা পরিবেশ নষ্ট করছে।

দক্ষিণখান প্রেমবাগান এলাকার তরিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, রাস্তার উপরে পড়ে থাকা বর্জ্য মুখে করে নিয়ে কুকুর ও কাক তা বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে দিচ্ছে। গতকাল থেকে পরিচ্ছন্ন কর্মীদের ফোন দিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না।

উত্তরার ২নং সেক্টরের কামারপাড়া বাসিন্দা রাসেল শাহেদ অভিযোগ করে বলেন, পশু জবাইয়ের ২৪ ঘণ্টা পার হলেও উত্তরার অধিকাংশ সেক্টরেই কোনো পরিচ্ছন্ন কর্মীকে দেখা যায়নি।

কয়েকটি স্থান থেকে পশু বর্জ্য নিয়ে গেলেও পরিচ্ছন্ন কর্মীদের একটি অংশ কোরবানির মাদুর, কাঠ, হাড় সংগ্রহে ব্যস্ত ছিলেন বলে অভিযোগ করেন তিনি। কারণ এসব মাদুর, কাঠ ও হাড় বিক্রি করা যায় বলেও জানান তিনি।

তিনি বলেন, নামমাত্র কিছু পরিষ্কারকর্ম করলেও ব্লিচিং পাউডার ও স্যাভলন দেওয়া হয়নি। ২নং সেক্টরের অনেক গলিতে সন্ধ্যা পর্যন্ত রাস্তার উপর বর্জ্য পড়ে থাকতে দেখেছি। কন্ট্রোল নাম্বারে বারবার ফোন দিয়েও কারো সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি।

এছাড়া যাত্রাবাড়ি, ডেমরা, মোহাম্মদপুর, মিরপুর ও উত্তরার কয়েকটি সেক্টর ছাড়াও দুই সিটির বেশিরভাগ এলাকায় পরিচ্ছন্ন কর্মীরা যাননি বলে অভিযোগ করেছেন বাসিন্দারা।

এদিকে, ঠিকঠাক মতই বর্জ্য অপসারণ হচ্ছে দাবি করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান বজ্য ব্যবস্থাপক  মো. জাবেদ ইকবাল বাংলানিউজকে বলেন, সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় ৭০ শতাংশ কাজ শেষ হয়ে গেছে। আগামীকাল দুপুর নাগাদ বর্জ্য অপসারণ প্রায় শেষ হয়ে যাবে।

বাসিন্দাদের অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, কোনো এলাকায় পরিচ্ছন্ন কর্মীরা দেরিতে পৌঁছতে পারে। কিন্তু সকল বর্জ্য পর্যায়ক্রমে অপসারণ করা হচ্ছে।

তিনি এ সংক্রান্ত প্রয়োজনে কন্ট্রোল রুমে ফোন দিয়ে জ‍ানানোর জন্য নগরবাসির প্রতি অনুরোধ জানান।

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপক বিপন কুমার সাহা বাংলানিউজকে বলেন, ৮৫ শতাংশ বর্জ্য অপসারিত হয়েছে। এখন বিভিন্ন অলি-গলিতে পানি, ব্লিচিং পাউডার ও স্যাভলন দিয়ে পরিষ্কার করার চেষ্টা করছি।

আজ (বৃহস্পতিবার) রাতের মধ্যে বাকি বর্জ্য অপসারণ করতে সক্ষম হবো। এরপরও যদি কেউ অভিযোগ করে, আমরা তাও পরিষ্কার করতে চেষ্টা করবো।

তবে বাসিন্দাদের এমন ঢালাও অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনিও।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top