সকল মেনু

রাজধানীতে বেপরোয়া অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা খপ্পরে পড়েছেন শতাধিক

রাজধানীতে বেপোরোয়া হয়ে উঠেছে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা। এদের হাত থেকে গরুর বেপারিসহ সাধারণ মানুষ এমনকি গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যসহ আইন-শৃঙ্খলা oggan-partiরক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও রেহাই পাচ্ছেন না। খাবারে সঙ্গে চেতনা নাশক বিষাক্ত ওষুধ খাইয়ে অজ্ঞ?ান করে সর্বস্ব কৌশলে কেড়ে নিয়ে যাচ্ছে তারা।

গত চারদিনে অজ্ঞান পার্টির কবলে পরে একজনের মৃত্যুসহ শতাধিক ব্যক্তি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। আক্রান্তদের বেশির ভাগই গরুর বেপারি। আক্রান্তদের এ তালিকায় একজন পুলিশের এসআই ও গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই’র একজন সদস্যও রয়েছেন।
গত বৃহস্পতিবার থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপতালের জরুরি বিভাগে প্রায় শতাধিক রোগী অজ্ঞান পার্টির কবলে পরে চিকিৎসা নিয়েছেন।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার দিকে বাংলাবাজার এলাকায় অজ্ঞান পার্টির কবলে পরেন ব্যবসায়ী ইউনুছ মিয়া (৪৫)। তাকে বাহক তহিদুর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন। এর কিছু সময় পরেই নিউমার্কেট থানার এএসআই অলিয়ার, অজ্ঞাত (৩৫) ব্যক্তিকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন এ হাসপাতালে।
একই সময় এএসআই আবু হানিফ (৪০) নামের এক ব্যক্তিকে নিউমার্কেট থানার অপর এএসআই এমএ রিয়াজ অজ্ঞান অবস্থায় নিয়ে যান।
দুপুরে রাজধানীর নতুন বাজারের আমেরিকান দূতাবাসের সামনে থেকে অটো ব্যবসায়ী সোহেল রানাকে (৩২) উদ্ধার করে নিয়ে আসেন তার ভাই আসাদ। এ ঘটনায় তার কাছে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা ৮০ হাজার টাকা নিয়ে যায়।
ওইদিন রাতে মগবাজার মোড়ে রাস্তার পাশে অচেতন অবস্থায় পরে থাকা অজ্ঞাত (৩০) ব্যক্তিকে রমনা থানা পুলিশের এসআই আব্দুস সাত্তার উদ্ধার করে ঢামেকের জরুরি বিভাগে নিয়ে যান। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তার। পরে দুইদিন অজ্ঞাত লাশ হিসেবে মর্গে থাকার পর তার ভাই শরীফ চৌধুরী এসে লাশটি শনাক্ত করেন।
সুত্র জানায়, মৃত ব্যক্তির নাম রহমান চৌধুরী। দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়ায় তার বাড়ি।
গত শুক্রবার ঢামেক জরুরি বিভাগের তালিকা অনুযায়ী, গাবতলী গরুর হাট থেকে হেকমত আলী (৪৫) নামের এক গরুর বেপারিকে বাহক মনির হোসেন নিয়ে আসেন।
দুপুরের দিকে গুলিস্থান এলাকার সার্জেন্ট আহাদ পুলিশ বঙ্রে সামনে থেকে পল্টন থানার এসআই ওহিদুজ্জামান এক ব্যক্তিকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন। একই সময় সিএনজি চালক মাজেদ গাজীকে (৫০) বাহক সাদ্দাম নিয়ে আসেন।
দুপুরের উত্তরা আব্দুল্লাহপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে সুপ্রভাত বাস থেকে পুলিশের এসআই আব্দুল হামিদকে (৪৫) অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে বাসযাত্রীরা। পরে তাকে উত্তরা পূর্ব থানা পুলিশ উদ্ধার করে রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে ঢামেকে ভর্তি করা হয়।
একইদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় যাত্রাবাড়ী বিসমিল্লাহ হোটেলের সামনে থেকে এনএসআই সদস্য আবুল বাসার বসিরকে (৩৫) আউয়াল নামে একজন উদ্ধার করে ঢামেকে নিয়ে আসেন। এর কিছু সময় পরেই রাত সাড়ে ৮টায় প্রবাসী বকুল মিয়াকে (৩৮) উদ্ধার করে তার শ্বশুর আমিনুল ঢামেকে নিয়ে আসেন। তার কাছে থেকে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা ৮০ হাজার টাকা নিয়ে যায়।
গত শনিবার ভোরে লালবাগ রহমতগঞ্জ হাঁট থেকে গরুর বেপারি রাফি (২২), চাঁনমিয়া (৬০), আমান (২০), হেলাল (৪২) ও রহিমকে (২৮) অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে নিয়ে আসে দেলোয়ার হোসেন নামে একজন।
সকালে মতিঝিল থেকে অজ্ঞাত ব্যক্তিকে (৪৫) বাহক আফসার, খিলগাঁও তালতলা থেকে মোশাররফকে (৫০) বাহক শিপু, একই স্থান থেকে আলী আক্কাসকে (৪২) বাহক সবুজ ঢামেকে নিয়ে আসেন।
একই সময় লালবাগ থেকে আহসান উল্লাহ (৪৩) ও আব্দুল খালেক নামে আরো দুইজনকে বাহক ঈমান আলী অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে নিয়ে আসেন।
দুপুরে গাবতলী হাঁট থেকে অজ্ঞাত ব্যক্তি (৫০) ও অজ্ঞাত (১৮) এক যুবককে উদ্ধার করে দারুস সালাম থানার এসআই হাসান। বিকেলে হাজারীবাগ থেকে পথচারী শহিদুল্লাহ তোতা (৩৫) নামে এক ব্যক্তিকে উদ্ধার করে নিয়ে যান।
ওইদিন রাতে বাড্ডার লিংকরোড থেকে বাড্ডা থানার এসআই মোশাররফ গরুর বেপারি মজিবর রহমান (৩৮) ও হাতিম আলীকে (৪২) অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করেন।
রোববার সকালে গুলশান কমার্স কলেজের প্রভাষক রমজান আলী মেরুল বাড্ডার গরুর হাঁটের সাত গরু বেপারিকে ঢামেক জরুরি বিভাগে ভর্তি করেন ।
এরা হলেন, রাসেল (২৫) রহমান (৩৫) খালেক (৩৬) বিল্লাল (২৬) আসলাম (৪০) শামিম (৩৮) সানোয়ার (২৭)। এরা সবাই পাবনার আতাইকুলা এলাকা থেকে গরু নিয়ে আফতাব নগর গরুর হাঁটে আসেন।
এর কিছুক্ষণ পরে শামছুল আলম (৪০) নামে আরো এক ব্যবসায়ীকে কোকাকোলার সঙ্গে চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে ৪০ হাজার টাকা নিয়ে যায় অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা।
একইদিন দুপুরে মিরপুর রোড থেকে অজ্ঞাত ব্যক্তিকে (৩৫) ধানমন্ডি থানার এএসআই সানোয়ার ঢামেকে নিয়ে আসেন।
বিকেলে মহাখালী থেকে অজ্ঞাত ব্যক্তিকে (৩০) পথচারী কবির উদ্ধার করে নিয়ে যান ঢামেকের জরুরি বিভাগে।
সন্ধায় মিজানুর রহমান (৪৫) নামে একজনকে রুমাল নাকের কাছে দিয়ে অজ্ঞান করে ফার্মগেটে ফেলে রেখে যায়। পরে তার ছেলে জাহাঙ্গীর তাকে উদ্ধার করে ঢামেক জরুরি বিভাগে ভর্তি করে।
জরুরি বিভাগের আবাসিক সার্জন (আরএস) আফসার উদ্দিন খান জানান, অজ্ঞান পার্টির কবলে পরে যারা চিকিৎসা নিতে আসছেন তারা সবাই বিষ ক্রিয়ায় আক্রান্ত। আহতদের অতিমাত্রার ঘুমের ওষুধের সঙ্গে মিশিয়ে বিভিন্নভাবে খাওয়ানো হয়েছে। আর এতে অতিমাত্রায় বিষ ক্রিয়ায় অজ্ঞান হয়ে পড়ছেন তারা।
এ ব্যাপারে পুলিশের জয়েন্ট কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা ঈদসহ বিভিন্ন উৎসবে বেশি তৎপর হয়ে ওঠে। বিশেষ করে বাসস্ট্যান্ড, পশুর হাঁট, মার্কেট, জনসমাবেশ যেখানে বেশি সেসব স্থানে এরা বিভিন্নভাবে অবস্থান করে। এরা সাধারণত একাধিক ব্যক্তিকে টার্গেট করে। পরে পরিস্থিতি বুঝে অজ্ঞান করে টাকা-মোবাইল সেটসহ দামি জিনিসপত্র লুটে নেয়। এদের একাধিক চক্রকে এরইমধ্যে চিহ্নিত করে গ্রেফতার অভিযান চালানো হচ্ছে। শনিবার ১০ জনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top