সকল মেনু

ঈদকে সামনে রেখে হিলি’র ঘাসুড়িয়া সীমান্ত দিয়ে পাচার হয়ে আসছে বিভিন্ন মাদক

দিনাজপুর প্রতিনিধি ১৩ অক্টোবার ২০১৩:

ঈদকে সামনে রেখে দিনাজপুর জেলার হিলি’র (হাকিমপুর) ঘাসুড়িয়া সীমান্তে চোরাচালানিরা তৎপর হয়ে উঠেছে। জেলার হাকিমপুর (হিলি) উপজেলার ঘাসুড়িয়া সীমান্তে চোরচালালানি আর চোরাচালান প্রতিরোধে নিয়োজিত বিজিবি সদস্যরা চোরাচালান মিশনে নেমেছে। সচেতন মহলের অভিযোগ করিডোরের নামে পাচার হয়ে আসছে হাজার হাজার বোতল ফেন্সিডিল, বিভন্ন প্রকার মদ ও ট্যাবলেটসহ ভারতীয় অন্যান্য পণ্য।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ঈদকে সামনে রেখে হিলি’র(হাকিমপুর) হাড়িপুকুর সীমান্ত অনেক দিন বন্ধ থাকার পর আবার ভারতীয় চোরচালানি পণ্য পাচার সহ অবৈধ লোক পারাপারের মহা-উৎসব শুরু হয়েছে। আর হাড়িপুকুর সীমান্ত বন্ধ থাকার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে চোরাচালানি চক্রের হোতারা এবার ঘাসুড়িয়া সীমান্তে চোরাচালানির মহা-উৎসবে মেতে উঠেছে। জয়পুর হাট ৩ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের দিনাজপুর জেলার হাকিমপুর (হিলি) উপজেলার মংলা ক্যাম্পের অধীনস্থ ঘাসুড়িয়া ও নন্দীপুর সীমান্তে চোরচালালানি চক্র আর চোরাচালান প্রতিরোধে নিয়োজিত সীমান্ত রক্ষী বাহিনী “বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ” (বিজিবি) চোরাচারানি মিশনে নেমেছে। দিনে ঘাসুড়িয়া-নন্দীপুর দিয়ে বাই-সাইকেল, জিরো-মসলা ও অন্যান্যে ছোট খাটো ভারতীয় পণ্য পাচার হলেও। ঈদকে সামনে রেখে রাতে গরুর সঙ্গে পাচার হয়ে আসছে হাজার হাজার বোতল ফেন্সিডিল, বিভিন্ন প্রকার মদ,কাপড়, কসমেটিক্স ও সিটিগোল্ডের বড় বড় চালান। রাতে ঘাসুড়িয়া সীমান্তে গরু করিডোরের নামে কোটি কোটি টাকার ভারতীয় শাড়ি কাপড়, থ্রি-পিচ, ইমিটেশন অলঙ্কার, কসমেটিক্স, হেরোইন, গাঁজা,ভায়াগ্রা,প্যাথড্রিন, যুব সমাজ ধ্বংসকারী মরন নেশা ফেন্সিডিলসহ নানা প্রকার মাদক দ্রব্য, ৩’শ থেকে ৪’শ বাই-সাইকেল, বস্তা-বস্তা সুপারি ও ভারতীয় চোরাই পণ্য পাচার হয়ে আসছে।

এদিকে মংলা ক্যাম্পের বিজিবি কমান্ডার নায়েব সুবেদার মো: আঃ হামিদ ও তাঁর সহযোগি হাবিলদার আসলামের লাইনম্যান (প্রতিনিধি) হিসেবে নিয়োজিত হাকিমপুর (হিলি) উপজেলার ১নং খট্রামাধবপাড়া ইউনিয়নের সীমান্ত ঘেঁষা ঘাসুড়িয়া গ্রামের তমেজের পুত্র ইকবাল হোসেন (৩৬) এর নেতৃত্বে ঘাসুড়িয়া গ্রামের তফিজের পুত্র সাইফুল ইসলাম(৩৭), সহোদর দুই ভাই মন্টু মিয়া(৪৫) ও খাটো মাহমুদ(৩৭) এবং সাতকুঁড়ি গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেনসহ ৮/১০ জন লাইনম্যান। পার্সপোর্টের কোন বালাই নেই, ভারতের ভূ-খন্ড আত্তর ঘাসুড়িয়া প্রবেশ করে ফেন্সিডিল, ইয়াবা,গাঁজাসহ অনান্যে মাদক দ্রব্য সেবন করে কিংবা চোরাচালানিরা ভারতীয় মহাজনদের সাথে টাকা-পয়সা লেনদেন করে আনায়াশে আবার বাংলাদেশে ফিরে আসতে কোন বাঁধা নেই। এর জন্য ভারতের মহাজনদের নিকট থেকে বিজিবি’র নামে কমিশন নেয় ঘাসুড়িয়া গ্রামের তমেজের পুত্র ইকবাল হোসেন ও তফিজের পুত্র সাইফুল ইসলাম ।

এছাড়াও চোরাচালান প্রতিরোধে ডাঙ্গাপাড়া কাঁটায় (চেক পোষ্ট) নিয়োজিত ডাঙ্গাপাড়া বিশেষ ক্যাম্পের বিজিবি সদস্যরা ভারতীয় চোরাচালানি পণ্য আটক না করে জিনিস প্রতিটি ২০ থেকে ৩০ টাকা বখরা (উৎকোচ) নিয়ে নিয়ে ছেড়ে দেওয়ার অনেক অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও ডাঙ্গাপাড়া বিশেষ ক্যাম্পের বিজিবি‘র ডাঙ্গাপাড়া কাঁটায় (চেক পোষ্ট) বখরা(উৎকোচ) আদায় ছাড়া তেমন কোন অভিযান চোখে পড়ে না। ডাঙ্গাাপাড় বিশেষ ক্যাম্পের লাইনম্যান (প্রতিনিধি) হিসেবে নিয়োজিত ডাঙ্গাপাড়া (পাউশগাড়া) গ্রামের আলার নেতৃত্বে বখরা (উৎকোচ) উত্তোলন করছে নওদাপাড়া (হাড়িপুকুর) গ্রামের আঃ রশিদ, সাতকুড়ি গ্রামের রেজাউলসহ কয়েক জন লাইনম্যান। তাঁরা ডাঙ্গাপাড়া কাঁটা(চেকপোষ্ট), মংলা বাজারসহ বিভিন্ন পয়েন্টে বখরা উত্তোলন করে থাকে।

ভারতের অভ্যান্তরে অর্থাৎ আত্তর ঘাসুড়িয়ায় ফেন্সিডিল,ইয়াবা, গাঁজাসহ অন্যান্য মদ দামে সস্তা, ক্রয়-বিক্রয়, খাওয়া- দাওয়া ও যাতাযাতে কোন বাধা না থাকায় দিনাজপুর, আমবাড়ী, চিরির বন্দর, ফুলবাড়ী, পার্বতীপুর, নবাবগঞ্জ, বিরামপুর, ঘোড়াঘাট, গাইবান্রধা,গোবিন্দগঞ্জ, পলাশবাড়ী থেকে ফেন্সিডিল, ইয়াবা ও মদ খোরেরা এসে প্রতিনিয়ত ভিড় জমাচ্ছে। ভারত থেকে বাংলাদেশে পণ্য পাচার করে নিয়ে আসার সময় ভারতীয় পণ্য শাড়ী কাপড়, থ্রি-পিচ, প্রতি ২০ থেকে ৩০ টাকা, ফেন্সিডিল প্রতি বোতল ২০ টাকা, জিরা প্রতি প্যাকেট ৮ টাকা থেকে ১০ টাকা, বাই-সাইকেল ২০০ টাকা, সুপারি বস্তা প্রতি ৩০০ টাকা, করিডোর ফাঁকি দেওয়া গরু জোড়া প্রতি ২ হাজার টাকা হারে বিজিবি’র লাইনম্যানরা বখরা (উৎকোচ) উত্তোলন করে।

এছাড়াও প্রতিরাতে ঘাসুড়িয়া সীমান্ত দিয়ে অর্ধ শতাধিক জোড়া গরু পাচার করে আনলেও। নাম মাত্র ২/৪ জোড়া গরু করিডোর দেখিয়ে বাঁকী বেশি ভাগ গরুই বিজিবি লাইনম্যানদের মাধ্যমে করিডোর ফাঁকি দিয়ে রাতে অন্ধকারে বিভিন্ন স্থানে পাচার করে থাকে। আ্র এই করিডোর ফাঁকি গরুর ল্ইাম্যান হিসেবে ঘাসুড়িয়া গ্রামের সহোদর দুই ভাই মন্টু মিয়া ও খাটো মাহমুদ জোড়া প্রতি ২ হাজার টাকা উত্তোলন করছে। এছাড়াও দুই ভাই দিনরাত মংলা ক্যাম্পের বিজিবি’র সেবায় নিয়োজিত। সব সময় ক্যাম্প ও বিজিবি’র লেজ ধরে ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। বিজিবি’র কিছু স্বার্থান্বেষী সীমান্তের প্রতিটি পয়েন্টে অলিখিত ভাবে কিছু লোক নিয়োগ করেছে। এদের ডাকা হয় লাইনম্যান বলে। নিয়োজিত এসব লোক চোরাকারবারিদের নিকট থেকে নিদির্ষ্ট হারে বখরার (উৎকোচ) টাকা আদায় করে। আদায় করা টাকার শতকরা ২০ টাকা লাইনম্যানদের কমিশন দেয়া হয়। বাঁকি টাকা পদ মর্যাদা অনুসারে স্বার্থান্বেষী বিজিবি সদস্যরা ভাগ বাটোয়া করে নেয়।

ঘাসুড়িয়া সীমান্ত দেখে মনে হয়, ভারত-বাংলাদেশের পুরো সীমান্তই যেন ভারতের একটি উন্মুক্ত বাণিজ্য পথ। পার্থক্য শুধু এটুকুই, এসব ভারতীয় পণ্য এ দেশে প্রবেশের জন্য বাংলাদেশ কোনো শুল্ক পায় না। বিজিবি সদস্যরা আই ওয়াশের জন্য মাঝে মধ্যে ২/১টি ছোট খাটো কিছু মালামাল আটক করে ফলাও ভাবে প্রচার করে। কিন্তু বড়-বড় চোরাকারবারীদের পাচার করে আনা বিপুল পরিমাণ কাপড়,কসমেটিক্স, সিটিগোল্ড, ফেন্সিডিল, ইয়াবা, বিভিন্ন প্রকার মাদক দ্রব্য সহ অন্যান্য পণ্যের চালান থেকে যাচ্ছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। চোরাকারবারিরা অভিনব পন্থায় ফেন্সিডিল, ইয়াবা, গাঁজা ও মদ সহ অন্যান্য চোরাচালানি পণ্য দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে বিরামপুর, হাকিমপুর(হিলি),নবাবগঞ্জ ও ঘোড়াঘাট উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্টে মজুদ করে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করছে। এতে করে যেমন এদেশের যুব সমাজ ধ্বংস হচ্ছে তেমনী দেশীয় পণ্য মার খাচ্ছে। তেমনি সরকার রাজস্ব^ হারাচ্ছে কোটি- কোটি টাকা।

নাম প্রকাশে অনচ্ছিুক সীমান্ত এলাকার কয়েক জন জানান, বিজিবি (বিডিআর) ও বিজিবি’র অলিখিত নিয়োগকৃত লাইনম্যান ভয়ে কেউ মুখ খুলে কিছু বলতে পারে না। কারণ এদের বিষয়ে কথা বললে বিজিবি’র দ্বারা মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়।

 

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top