সকল মেনু

গোপন বৈঠকে গুলশান এসেছিলো মোশারফ

rupgonj-mosarof-bg20131011105414 মেহেদি হাসান, হটনিউজ২৪বিডি.কম,ঢাকা:  জমি দখলের পরিকল্পনাতে এক ভূমি ব্যবসায়ীর সঙ্গে গোপন বৈঠক করতে গুলশান এসেছিলো রূপগঞ্জের সন্ত্রাসী মোশারফ বাহিনীর প্রধান ও আশিয়ান সিটি শীতল ছায়া প্রকল্পের পরিচালক মোশারফ ভূঁইয়া ওরফে মোশা। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে এমনই তথ্য দিয়েছে সে।

গুলশান থেকে ফেরার পথে পাঁচ সহযোগী ও অস্ত্রসহ গ্রেফতার করা হয় মোশারফকে। জিজ্ঞাসাবাদে ইতিমধ্যেই সে ওই ব্যবসায়ীর নানা অপকর্মের তথ্য ফাঁস করে দিয়েছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ভাটারা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাজাহারুল আমিন হটনিউজকে জানান, পাঁচ দিনের রিমান্ডে মোশারফের কাছ থেকে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। এখন সেগুলো যাচাই করা হচ্ছে। তবে রিমান্ডের চতুর্থ দিনেও অস্ত্রের সন্ধান বা যোগানদাতা সম্পর্কে সে কোনো তথ্য দেয়নি। গত ৬ অক্টোবর রাতে কুড়িল বিশ্বরোডে রাশ জিপ গাড়িতে একটি শর্টগান, শর্টগানের ১২ রাউন্ড গুলি ও একটি বিদেশি পিস্তলসহ মোশারফকে গ্রেফতার করা হয়। এ গাড়ি ও অস্ত্র কেনার টাকা তাকে দিয়েছিলো বিতর্কিত এক ভূমি ব্যবসায়ী। ওই ব্যবসায়ীর সঙ্গে মোশারফের ঘনিষ্ঠতা দীর্ঘদিনের।

ঈদের আগে ‘কিছু কাজের’ কথা বলে মোশরফকে ডাকা হয়েছিলো গুলশানে। গোপন এ বৈঠকের তথ্য জেনে যায় র‍্যাব। পরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে অস্ত্র ও সহযোগীসহ তাকে গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে মোশারফ রূপগঞ্জসহ আশেপাশের জমি অবৈধ দখলে নিতে মরিয়া ওই ব্যবসায়ীর নাম-পরিচয় প্রকাশ করলেও তদন্তের স্বার্থে পুলিশ কর্মকর্তারা তা জানাতে অপরাগতা প্রকাশ করেন।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মোশারফের সঙ্গে ঢাকা ও ঢাকার বাইরের পেশাদার সন্ত্রাসীদের নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনীর পাশাপাশি ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করেও অনেক হত্যা ও গুমের ঘটনা ঘটিয়েছে সে। মাদক, নারী ব্যবসা এবং অবৈধ উপায়ে জমি দখলকারী একটি সংঘবদ্ধ গোষ্ঠীর হয়েও মোশারফ ও তার বাহিনী কাজ করতো। বিশেষ করে দু’জন ভূমি ব্যবসায়ী নানা কাজে মোশারফ বাহিনীকে ব্যবহার করেছে। তাদের মাধ্যমেই এক সময়ের ছিঁচকে সন্ত্রাসী এখন কোটিপতি মোশারফ মেম্বার। স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই সে এই বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনীর দলনেতা ও অবৈধ অস্ত্রের মালিক হয়েছে বলে জানা গেছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘র‍্যাবের হাতে গ্রেফতার হওয়ায় মোশারফ বাহিনীর সব গোপন পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। ওই রাতে মোশারফের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী মোখলেছুর রহমান জনি, নজরুল ইসলাম, আব্দুল মান্নান সরকার, তানভীর আহমেদ খান ও মোরশেদকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে অস্ত্র ও গুলি পাওয়া যায়। এসব অস্ত্রের কোন বৈধ লাইসেন্স ছিলো না। এদিকে মোশারফ গ্রেফতার হওয়ার পরপরই তার ক্যাডাররা আত্মগোপনে চলে যায়। তবে তাদের গ্রেফতারে অভিযান চালানো হচ্ছে বলে জানা গেছে। ইতিমধ্যেই অনেক মানুষের জমি জোরপূর্বক দখল করে আবাসন কোম্পানির হাতে তুলে দিয়েছে মোশারফ। ‘আশিয়ান সিটির দালাল’ হিসেবে এলাকায় পরিচিত হলেও মোশারফ বাহিনী আরও অনেকের জন্য কাজ করে বলেও তথ্য রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে। এগুলো এখন যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। মোশারফকে গ্রেফতারের ঘটনায় র‍্যাব-১ এর উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল করিম বাদী হয়ে ভাটারা থানায় অস্ত্র আইনে একটি মামলা দায়ের করেছেন। এছাড়াও মোশারফ বাহিনীর বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানা ও রূপগঞ্জে মিলিয়ে প্রায় এক ডজন মামলা রয়েছে।পাশাপাশি গত ১৮ জুন গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই এর এক সদস্যকে মারধর, হত্যার চেষ্টা এবং তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও পরিচয়পত্র ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগে আশিয়ান সিটির চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম, ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুল ইসলামসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় মামলা দায়ের করে ডিজিএফআই। মামলার এজহারে বলা হয়, ডিজিএফআই সদস্য করপোরাল আবু তাহের ও সাইফুল ইসলাম গুলশান এলাকায় দায়িত্ব পালন করার সময় গুলশান নর্থ অ্যাভিনিউয়ের ৯১ নম্বর সড়কের দক্ষিণ পাশে তাদের গতিরোধ করে সরকারি কাজে বাধা দেয় আশিয়ান সিটির শীতল ছায়া প্রকল্পের পরিচালক মোশাররফ মেম্বার, বদি, সেলিম হাওলাদার, আজমত, বাচ্চু হাওলাদার, জাকির হোসেন, আনসার সদস্য ফারুক, শাহীন,রাজ্জাক ও নুর আলম। আশিয়ান সিটির চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুল ইসলামের নির্দেশেই তারা এ কাজ করেছিলো।এ বিষয়ে গুলশান থানায় আহত ডিজিএফআই সদস্য আবু তাহের ৩৪২, ৩৫৩, ৩৩২, ৩৩৩, ৩০৭, ৩৮৯/৩৪ ও ১০৯ ধারায় মামলা দায়ের করেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top