সকল মেনু

ছাত্রাবাসে ডেটিং সাব-লেটিং ঘন্টায় ৫ শ’ টাকা

images (1) বগুড়া অফিসঃ  বগুড়ায় শতাধিক ছাত্রাবাসে চলছে ডেটিং,সাব-লের্টিং। এসব মেসে রুম ভাড়া নিয়ে চলছে ঘন্টার পর ঘন্টা ডেটিং, স্ফূর্তি, অনৈতিক কার্যকলাপ এমনকি ধর্ষনের মত ঘটনা ঘটছে। সম্প্রতি ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে হোটেল মোর্টেলের আস্তানাগুলো তছনছ হওয়ায় ধনীর দুলাল-দুলালীরা ছাত্রাবাসকে নিরাপদ স্থান হিসাবে বেছে নিয়েছে। অভিযোগ উঠেছে চিহ্নিত কিছু মেসে নামধারী ছাত্ররা জুয়া ও মাদক সেবন-বিক্রির সাথে জড়িয়ে পড়ছে। উদ্বিগ্ন শিক্ষক-অভিভাবক। সচেতন মহল এসব ছাত্রাবাস চিহ্নিত করে পুলিশি অভিযান দাবি করেছে। বগুড়ায় ঘটে যাওয়া নানা অনৈতিক কাজ ছাড়াও কিছু ভয়াল চিত্র ফুটে উঠছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, বগুড়া শহর ও শহরতলীতে প্রায় পাঁচ শতাধিক নামে বে- নামে ছাত্রাবাস রয়েছে। এর মধ্যে শতাধিক ছাত্রাবাসে নানা অনৈতিক কার্যকলাপের অভিযোগ রয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন শিক্ষার্থী জানিয়েছে, মাঝে মধ্যে কুখ্যাত অস্ত্রবাজ চিহ্নিত সন্ত্রাসীরাও এসব ছাত্রাবাসে নাম মাত্র টাকা দিয়ে সাব-লের্টিং নাম লিখে রাত্রি যাপন করে থাকে। রাতভর তারা জুয়া আর মদ নিয়ে ব্যস্ত থাকে। দেখার কেউ নেই। নিরীহ ছাত্ররা তাদের কাছে জীম্মি। আবার এস সব ছাত্রাবাসে এক শ্রেনীর ছাত্ররা সাব -লোটিং হিসাবে সিট ভাড়া দিয়ে মাসে ৩/৪ হাজার টাকা আয় করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ছাত্র জানায়, কোন কোন মেসে প্রতি ঘন্টায় ৩ থেকে ৫ শ’ টাকায় সিট বিক্রি হয়ে থাকে। পরিবেশ পরিস্থিতি বুঝে একটু মনোরম পরিবেশে কোথাও কোথাও ৬- থেকে ৭ শ” টাকায় সিটি বিক্রি হয়।আর যারা খদ্দের বা বন্ধু সেজে বান্ধবী নিয়ে আসে,তারাও পুলিশি হয়রানী বা ভ্রাম্যমাণ আদালতের হয়রানী বা সামাজিক মর্যাদা ক্ষুন্ন হওয়ার ভয়ে এসব ছাত্রাবাসকে নিরাপদ মনে করে। বগুড়া এ্যাডভোকেট বার সমিতির একজন সদস্য বলেন, সাব-লেটিং বলতে উপপত্তন বা অধীনস্থ পত্তন বুঝায়। যা একজন রায়ত অপর কোন ব্যক্তিকে ইজারা দিয়ে থাকে,এর বিনিময়ে সে জমির খাজনা গ্রহণ করে। কিন্তু ছাত্রাবাসে এরকম সাব-লেটিং’র নামে যা ঘটে,তা দুঃখ জনক ঘটনা। সামাজিক অবক্ষয়। শিক্ষা জীবনকে বাঁচাতে দ্রুত এগিয়ে আসতে হবে সংশিল্ট সবাইকে। রক্ষ করতে হবে সমাজকে। তিনি বলেন, অভিভাবকদেরকে সচেতন হতে হবে। ছেলে মেয়ে মেসে থেকে কি করছে ? প্রয়োজনে গভীর রাতে উপস্থিত হতে হবে মেসে। সামাজিক মর্যাদা ক্ষুন্ন হওয়ার আশংকায় বা ভয়ংকর সন্ত্রাসীদের হাত থেকে বাঁচতে নাম পরিচয় গোপন রাখার শর্তে কয়েকজন ভুক্তভোগী পরিবার জানান, গ্রাম থেকে আসা শহরের নামি দামি কলেজে পড়–য়া মেয়েদের নানা ভাবে শারিরীক নির্যাতনের শিকার হতে হয়। অনেক সময় জোর করে ছাত্রা বাসগুলোতে নিয়ে যাওয়া হয় কিছু শিক্ষার্থীকে। খুন জখম, আর শিক্ষা জীবন ঝুড়ে পড়ার ভয়ে কেউ মুখ খুলতে শাহস পায় না। কেউ কেউ আবার প্রেমের নামে ডেটিং সাব-লেটিং এ ব্যস্ত থাকে এসব মেসে। গত ৩ অক্টোবর বিকেলে আজিজুল হক কলেজের এক ছাত্রীকে কলেজের পাশে শের এ বাংলা নগর এলাকার একটি ছাত্রাবাসে একটি ধর্ষন ঘটনা ঘটে।পরে তাকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই ঘটনায় এক যুবককে পুলিশ আটক করলেও পরে তাকে অন্য মামলায় কোটে প্রেরণ করা হয়। এ প্রসঙ্গে ওসি সদর সৈয়দ সহীদ আলম বলেন, ধর্ষনের ঘটনায় কেউ মামলা করেনি। মামলা হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বগুড়া উপশহর আবাসিক এলাকায় অবস্থিত একটি বেসরকারি পলিটেকনিক্যাল ইন্সটিটিউট’র ১৫ জন ছাত্র সম্প্রতি রয়্যাল প্যালেসের পশ্চিমে একটি ছাত্রাবাসে এক তরুণীকে নিয়ে স্ফুর্তি করা সময় হাতে নাতে আটক হয় ওই শিক্ষার্থীরা। পরে তাদের উপর হামলাকারী দুই যুবককে পুলিশ আটক করে ভ্রাম্যমাণ আদালতে প্রেরণ করে। উপশহর পুলিশ ফাঁড়ির টিএসআই মিলাদুন্নবী বিষয়টি নিশ্চত করেন। শহরের জামিলনগর, জহরুলনগর,শের এ বাংলা, সেউজগাড়ী, পুরানবগুড়া,ফুলবাড়ী, বৃন্দাবনপাড়া, উপশহর, লতিফপুর কলোনী, ঠনঠনিয়া, কইগাড়ী,সি›দ্ধা আবাসিক এলাকা,মালগ্রাম ছিলিমপুর, নুরানীমোড়ে,চকসুত্রাপুর ও কামারগাড়ীসহ শহর ও শহরতলীর বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৫ শতাধিক ছাত্রবাস রয়েছে। গোয়েন্দা সুত্র মতে,শতাধিক মেসে নামধারী শিক্ষার্থীরা পড়াশুনার নামে জুয়া, বিভিন্ন ধরনের নেশাসহ নানা অনৈতিক কার্যকলাপে জড়িত। বগুড়া তথা সারা দেশে হেরোইন আসক্ত তরুণ যুবক ও বয়স্কদের থানায় সোপর্দ করা অথবা নিজেই পুলিশী হেফাজতে যাবার ঘটনা এখন আর নতুন কিছু নয়। কিন্তু বগুড়ায় হেরোইনে আসক্ত সুরাইয়া রহমান (২১) নামে এক গৃহবধুর নিরাপত্তা হেফাজতে স্বেচ্ছায় যাবার ঘটনার পাশাপাশি বগুড়ার এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কলেজ ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যেই এই প্রতিষ্ঠানের একজন অনার্স শ্রেণীর ছাত্রীকে ক্যাম্পাসের পাশব¦র্তী একটি মেসে যাবার আমন্ত্রনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট অপ্রিতিকর ও লজ্জাজনক ঘটনার মাধ্যমে সামাজিক অধঃপতনের এক ভাল চিত্রের নগ্ন প্রকাশ ঘটেছে।হেরোইনে আসক্ত সুরাইয়ার স্বামী সাজু ও তার পরিবারের এক সদস্য নাম প্রকাশে অনিচ্ছক সাংবাদিকদের জানিয়েছে, বগুড়ার একটি অভিজাত পরিবারের সুন্দরী মেয়ে সুরাইয়ার বিয়ে হয়েছিল সম্প্রতি। কিন্তু বিয়ের আগেই সে কিছু অতি আধুনিক বান্ধবীর পালায় পড়ে ফেন্সিডিল, ইয়াবা ও হেরোইনে আসক্ত হয়ে পড়ে। বিয়ের পর তার জীবন যাত্রা অস্বাভাবিকতা ধরা পড়লে ঘটে যায় বিবাহ বিচ্ছেদ, আর তখনই তার হুঁশ ফিরলে সে ভালো হবার শেষ চেষ্টার অংশ হিসেবে আত্মসমর্পন করে পুলিশের কাছে। আইনগত ঝামেলা এড়াতে পুলিশ তাকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মুখোমুখি করিয়ে ৬ মাসের কারাদন্ডের আদেশ হাসিল করে সুরাইয়াকে পাঠিয়ে দেয় জেল হাজতে। যাবতীয় লিগ্যাল প্রসেস শেষ করে সুরাইয়াকে জেল হাজতে পাঠানো হয়। তবে এই ঘটনার সূত্রধরে বগুড়ায় মাদকের এক ভয়াল বাণিজ্যের দৃশ্যপট উন্মোচিত হয়েছে। বগুড়ায় এখন মাদক নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর,পুলিশ ও অন্যান্যা সংস্থার কতিপয় অসাধু সদস্যদের সহায়তায় মদ, গাঁজা, হেরোইন, ফেন্সিডিল ও ইয়াবার এক রমরমা বাণিজ্য চলছে। মাদকের নেশায় বুঁদ হয়ে ধ্বংস ও অনিশ্চিয়তার পথে ধাবিত হচ্ছে, ছাত্র-ছাত্রী, তরুণ -তরুণীসহ সববয়সী পেশার মানুষ। একই সাথে সংঘঠিত বগুড়ার বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ক্যাম্পাসের ঘটনাটিও চমকে উঠার মত। এই চ্যাঞ্চলকর ঘটনাটির বিবরনে জানা যায়, বগুড়ায় একটি কলেজের অনার্স ২য় বর্ষের ছাত্র মহিদুল ইসলাম (২২) এর বাড়ী নন্দীগ্রাম উপজেলায় হওয়ায় সে আযিযুল হক কলেজের ক্যাম্পসের পাশের সেউজগাড়ীর একটি প্রাইভেট মেসে থেকে লেখাপড়া করে। ঘটনার দিনে সে কলেজের ক্যাম্পাসে কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে তার পূর্ব পরিচিত অনার্স প্রথম বর্ষে পড়া এক মেয়েকে তার ভাড়াটে মেসে যাওয়ার (কু-উদ্দেশ্যে) প্রস্তা দেয়। শুধু তাই নয় এ মেসে যাওয়ার জন্য সে মেয়েটিকে জোরাজুরি এমনকি টানা হেচড়া শুরু করলে অন্যান্য ছাত্র ছাত্রীদের নজরে পড়ে ব্যাপারটি। তারা এই ঘটনায় মহিদুল কে জিজ্ঞাসাবাদ ও এক পর্যায়ে মারপিট করে কলেজ অধ্যক্ষের কাছে নিয়ে যায়। সব শুনে অধ্যক্ষ মহোদয় উলেখিত ঘটনার শিকার মেয়েটির অভিভাবককে কলেজে ডেকে নিয়ে এসে পুলিশের কাছে মামলার পরামর্শ দেন। তবে আরও ঝামেলা ও আইনী জটিলতা এড়াবার জন্যই মেয়েটির অভিভাবক ও পুলিশের কাছে নালীশের ব্যাপারে রাজী হননি। ফলে অধ্যক্ষ ও অন্যান্যরা গ্রাম্য শালীসের (অনেকটা তালেবান কায়দায়) স্টাইলে ছেলেটিকে অবমাননা কর ভাবে নাখে খত দিতে ও মেয়েটির কাছে মাপ চাওয়ার ব্যবস্থা করে অভিযুক্ত ছেলেটিকে ছেড়ে দেয়। বগুড়ায় সব মিলে প্রায় ৫০ হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে। এর অর্ধেকেরও বেশি ছাত্র ছাত্রীর বাড়ী বগুড়ার বাইরে হওয়ায় তাদেরকে প্রাইভেট, বেসরকারী ছাত্র ও ছাত্রীনিবাস বসবাস করতে হয়। এই সব ছাত্র ও ছাত্রী নিবাসগুলোতে বর্তমানে কিভাবে অনাচার ব্যভিচারের ঘটনা ঘটছে মহিদুলের আচরনেই তার কিছুটা উন্মোচিত হয়েছে। তবে এই সব বেসরকারী ছাত্র ও ছাত্রী নিবাসের মালিক এবং এতে কর্মরত কাজের বুয়াদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য জানা গেছে সেখানে সবধরনের অনৈতিকতার মাত্রা এখন সীমা ছাড়িয়ে গেছে। এপ্রসঙ্গে বগুড়া জেলা ছাত্ররীগের সাধারণ সম্পাদক মাশরাফী হিরো বলেন, নৈতিক অবক্ষয় থেকে পরিত্রান পেতে পরিবারের গুরুত্ব, অভিভাবক, প্রশাসনসহ সংিশিল্ট সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।এছাড়াও তথ্যপযুক্তি , পাশ্চাত্য সংস্কৃতি ও কিছুটা প্রভাব ফেলেছে। বগুড়ার সহকারি পুলিশ সুপার(সদর মিডিয়া)মোঃ গাজিউর রহমান বলেন, ছাত্রাবাসে অনৈতিক কার্যকলাপ দুঃখ জনক। তবে ছাত্রা বাসগুলোতে পুলিশি নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। সচেতন মহলের ধারনা,গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধির পাশা পাশি সুনির্দিষ্ট তথ্য মতে মেসগুলোতে সোর্স নিয়োগ করে ম্যাজিষ্ট্রেট’র নেতৃত্বে দ্রুত অভিযান পরিচালনা করা প্রয়োজন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top