সকল মেনু

জাবিতে ছিনতাই, ধর্ষণ ঘটলেও প্রতিকার নেই

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) বোটানিক্যাল গার্ডেন আর সুইমিংপুল ওদের প্রিয় জায়গা। ওই এলাকার ঝোপঝাড়ের আড়ালে ওরা ১০-১২ জন গা ঢাকা দিয়ে থাকে, আর মাঝে মাঝে উঁকি দিয়ে দেখে। অপেক্ষায় থাকে কোনো যুগল আসে কিনা? আগত যুগল যদি বিশ্ববিদ্যালযের শিক্ষার্থী না হয়ে বাইরের হয়, তবেই সর্বনাশ। টাকা-পয়সা, মোবাইল, হাতঘড়ি- যা কিছু আছে সবই তো যাবে, সেই সঙ্গে সম্ভ্রমও যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।

গত কয়েক মাসে এমন ঘটনা ঘটেছে ডজন দুয়েকেরও বেশি। আর বিগত এক বছরের বিভিন্ন ঘটনার মধ্যে কমপক্ষে তিনটি ধর্ষণের প্রমাণ পাওয়া গেছে। ঘটনাগুলো বিভিন্ন মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানালেও তারা ব্যবস্থা নেননি। বরং ‘ঘটনা জানি না’ বা ‘কেউ অভিযোগ করেনি’ ইত্যাদি বলে দায় এড়িয়ে গেছেন।

সর্বশেষ গত ৯ অক্টোবর দুপুরে ঈদুল আজহার ছুটিতে বহিরাগত এক তরুণী বোটানিক্যাল গার্ডেনে গণধর্ষণের শিকার হয় বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

এর আগে ২০১৩ সালের ঈদুল আজহার ছুটির সময় ক্যাম্পাসে বেড়াতে আসা এক বহিরাগত তরুণীকে শহীদ মিনার এলাকা থেকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে ওই তরুণীর সঙ্গে আসা যুবক বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তারক্ষীদের বিষয়টি জানালে তারা দুই ঘণ্টা পুরো ক্যাম্পাসে খোঁজাখুঁজি করেও তরুণীটির হদিশ পায়নি। কারা এ ঘটনায় জড়িত ছিল সেটাও তখন নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ঘটনার সময় উপস্থিত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তির কাছ থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

চলতি বছরের এপ্রিল মাসে অনুষ্ঠিত ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসা এক ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হয়।

ক্যাম্পাসের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ, প্রধান প্রবেশদ্বার ডেইরি গেট, বোটানিক্যাল গার্ডেন, সুইমিংপুল এলাকা, মীর মশাররফ হোসাইন হল গেট ইত্যাদি এলাকায় নিয়মিত ছিনতাই হয়।

গত ৯ অক্টোবরের ধর্ষণের ঘটনাটি ওইদিনই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের উপস্থিতিতে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামকে অবহিত করা হলেও পরবর্তীকালে ‘তাদের কেউ বিষয়টি জানাননি’ বলে তারা অস্বীকার করেন। বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের  কর্মচারী সমিতির এক সভায় আলোচনা হয়।

ঘটনাগুলো কারা ঘটায়- এ ব্যাপারে প্রক্টরসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানলেও সচেতনভাবে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতরাই আবার ক্যাম্পাসে ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক দ্রব্য সরবরাহের সঙ্গে জড়িত।

এসব ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীদের সন্তান বা ছোট ভাইদের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে কেউ কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ছাত্র,  যারা পোষ্য কোটায় ভর্তি হয়েছে এবং এদের অধিকাংশ ছাত্র রাজনীতর সঙ্গে জড়িত।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, গত ৯ অক্টোবরের গণধর্ষণের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের চার ছাত্র জড়িত ছিল। ঘটনার সঙ্গে আরও ৮-১০ জন অংশ নেয়। তবে তাদের পারিচয় জানা যায়নি। সূত্র জানান, ঘটনার শিকার ওই তরুণ-তরুণী বোটানিক্যাল গার্ডেন এলাকায় যাওয়ামাত্র তরুণটিকে কিল-ঘুষি দিয়ে দুইজন বেঁধে ফেলে। বাকিরা তরুণীটিকে পাশে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করে এবং ফেলে রেখে যায়।

ছুটির সময় এই গ্রুপটি চারটি মোটরসাইকেলে করে প্রায়ই ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়িয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শী ও নিরাপত্তা প্রহরী সূত্রে জানা গেছে। যে দিন তরুণীটি ধর্ষিত হয়, ঠিক তার পরের দিন বিকেল ৩টার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আসিফ ইকবাল, রাসেল খন্দকার, সোহেল ঈসরাফিল, শওকত আকবরসহ কয়েকজন বোটানিক্যাল গার্ডেনের সামনের ব্রিজে আশুলিয়া প্রেসক্লাবের সাংগাঠনিক সম্পাদক আশরাফ ও তার ছোট বোনকে আটকিয়ে বিভিন্নভাবে হুমকি-ধামকি দিতে থাকে। এ ঘটনা শুনে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন এক ছাত্র ও সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে তারা চলে যেতে বাধ্য হয়।

ঘটনায় জড়িত রাসেল খন্দকারের বড় ভাই আলমগীরকে বিষয়টি জানানো হলে ‘ওকে নিয়ে আর পারছিনা ভাই, কি যে করি’- বলে মন্তব্য করেন।

একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, এদের প্রায়ই বোটনিক্যাল গার্ডেন ও সুইমিংপুল এলাকায় ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে থাকতে দেখা যায়। ঘটনা ঘটিয়ে বোটানিক্যাল গার্ডেনের পেছনের রাস্তা দিয়ে নির্বিঘ্নে পালিয়ে যায়।

এ বিষয়ে প্রহরীরা জানান, ‘মামা, আমরা এখানে চাকরি করি। যেখানে আমাদের কর্তারা ছাত্রদের সঙ্গে লাগতে যান না, সেখানে আমরা কিভাবে এগুলো বলবো। দেখেও চুপ থাকি। নাহলে তো চাকরিই থাকবে না।’

উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আবুল হোসেন বলেন, ‘তুমি বলার পর আমি বিষয়টি উপাচার্য মহোদয় এবং প্রক্টর স্যারকে জিজ্ঞেস করেছি। কই তারা তো বিষয়টি জানেন না।’

ঘটনার ব্যাপারে কী ব্যবস্থা নেবেন সে ব্যাপারটি এড়িয়ে তিনি বলেন, ‘আসলে বোটানিক্যাল গার্ডেন এলাকাটিতে একা যেতে আমারও ভয় লাগে। সেখানে বাইরে থেকে কেউ ওখানে যাওয়াটা তো নিরাপদই নয়।’

এ বিষয়ে জানতে প্রক্টর তপন কুমার সাহাকে ফোন করা হলে তিনি লাইন কেটে দিয়ে মিটিংয়ে আছেন বলে ক্ষুদে বার্তা পাঠান। পরে ফোন করা হলে তিনি তা রিসিভ করেননি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top