সকল মেনু

পাকিস্তানে চরমে সরকারবিরোধী আন্দোলন

  আন্তর্জাতিক ডেস্ক : পাকিস্তানের সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার সরকারবিরোধী আন্দোলন চরম অবস্থায় পৌঁছেছে। গত ৪৮ ঘণ্টায় পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) এবং পাকিস্তান আওয়ামী তেহরিক (পিএটি) দলের বিক্ষোভকারীরা রাজধানী ইসলামাবাদের রেড জোনে ঢুকে পড়েছে। সোমবার ইসলামাবাদে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত তিনজন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে শতাধিক। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের বাসভবনসহ গুরুত্বপূর্ণ সরকারি স্থাপনা ঘেরাও করে রেখেছে বিক্ষোভকারীরা।

সোমবার সকালে রাজধানী ইসলামাবাদে পিটিভি কার্যালয় অবরোধ করে এর ভেতরে ঢুকে পড়ে শত শত বিক্ষোভকারী। এ সময় বন্ধ হয়ে যায় সম্প্রচার। তবে কিছুক্ষণের মধ্যে তাদের হটিয়ে দিয়ে পিটিভি ভবনের নিয়ন্ত্রণ নেয় করে সেনা ও আধাসামরিক বাহিনীর সদস্যরা। পরে দুপুরের পর থেকে ফের সম্প্রচার শুরু হয়।

এ অবস্থার মধ্যে সোমবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নেওয়াজ শরীফ এবং সেনাপ্রধান রাহিল শরীফের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এরআগে রোববার সন্ধ্যায় জেনারেলদের সঙ্গে বৈঠক করেন সেনাপ্রধান রাহিল শরীফ।

বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নেওয়াজ শরীফ সেনাপ্রধানের সঙ্গে আলোচনা করে আন্দোলন নিরসনে একটা পরিকল্পনা তৈরি করেছেন বলে জানা গেছে। রোববার প্রধানমন্ত্রী তার দলের সিনিয়র নেতা এবং সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।

পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর ‘গণতন্ত্রের দৃঢ় সমর্থন’ জানানোর একদিন পর সেনাপ্রধানের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠককে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। ক্ষমতা নেওয়ার ‘সম্ভবনা’ উড়িয়ে দিয়ে সেনাবাহিনী সরকার, পিটিআই এবং পিএটি-কে সমস্যার সমাধান করতে বলেছে।

পাকিস্তানে গত দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে। আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন পার্লামেন্টের অন্যতম বিরোধীদল তেহরিক ই-ইনসাফ দলের প্রধান ইমরান খান এবং সম্প্রতি স্বেচ্ছা নির্বাসন থেকে দেশে ফিরে আসা ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব তাহির উল কাদির।

২০১৩-এর সাধারণ নির্বাচনে কারচুপির মাধ্যমে নেওয়াজ শরীফ ক্ষমতায় এসেছেন বলে অভিযোগ করেছে দল দুটি। নৈতিক কারণে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় থাকার অধিকার নেই দারি করে তার পদত্যাগ দারি করছে তারা।

দল দুটির দুই সপ্তাহ ধরে চলা সরকার বিরোধী আন্দোলন সত্ত্বেও পদত্যাগ করবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নেওয়াজ শরীফ।

রোববার সকালে নিজ সমর্থকদের উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ইমরান খান আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, দেশব্যাপী তার কর্মীদের ত্যাগ বৃথা যেতে পারে না।

আন্দোলকারীদের থামাতে পুলিশ কাঁদুনে গ্যাস ও রবার বুলেট ব্যবহার করতে বাধ্য হয়েছে বলে দাবি করেছেন ইসলামাবাদের পুলিশ প্রধান খালিদ খাত্তাক। পুলিশ নিয়মতান্ত্রিকভাবে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল জানিয়ে তিনি বলেন, বিক্ষোভকারীরা কুড়াল, তার কাটার কেচি এবং হাতুড়ি নিয়ে পুলিশের ওপর চড়াও হয়।

সংঘর্ষে আহতদের ইসলামাবাদের দুটি প্রধান হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ইসলামাবাদের পাকিস্তান ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্স হাসপাতাল থেকে জানানো হয়েছে, এখানে ভর্তি হওয়া আহতদের প্রায় সবাই রবার বুলেট বিদ্ধ হয়েছেন। এদের মধ্যে ৩৫ জন নারী বলে জানিয়েছেন তারা।

এদিকে, পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় শহর করাচিতে এবং পূর্বাঞ্চলীয় গুরুত্বপূর্ণ শহর লাহোরেও সরকার বিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়েছে।

১৫ আগস্ট থেকে ইসলামাবাদে পার্লামেন্ট ভবনের কাছে শিবির করে অবস্থান নিয়েছে পিটিআই ও পিএটি’র হাজার হাজার কর্মী। প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ না করা পর্যন্ত তারা ঘরে ফিরে যাবেন না বলে জানিয়েছেন।

রাজধানীতে টানা এই সরকার বিরোধী অবস্থান ধর্মঘট ও বিক্ষোভে পাকিস্তানে রাজনৈতিক অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। সরকারের অনুরোধে সঙ্কট সমাধানে মধ্যস্থতা করার চেষ্টা করেছিল পাকিস্তানের রাজনীতিতে প্রভাবশালী পক্ষ সেনাবাহিনী।

এতে পরিস্থিতি ব্যবহার বেসামরিক সরকারের উপর সেনাবাহিনীর প্রভাব বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। তবে বিশ্লেষকদের ধারণা, সেনাবাহিনীর সঙ্গে গোপন সমঝোতার ভিত্তিতেই সরকারবিরোধী এই আন্দোলন শুরু হয়েছে।

সূত্র: ডন, রয়টারস।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top