ডেস্ক রিপোর্ট : আমাদের দেশের বেশির ভাগ মায়েদেরই ধারণা যে, শিশু ছোট অবস্থায় কোনো শক্ত বা আধা শক্ত খাবার খেতে পারে না। সেজন্য তাদের প্রায় এক বছর পর্যন্ত এ ধরনের খাবার দেওয়া যায় না। কিন্তু এ কথা মায়েদের জানতে হবে যে, শুধু বুকের দুধে এ বয়সী শিশুর চাহিদা মেটে না। কারণ, শিশু বাড়ছে এবং সেই সঙ্গে তার প্রয়োজনও বাড়ছে। শিশুর শরীরের প্রয়োজন অনুযায়ী যতটুকু দুধের দরকার ততটুকূ মায়ের শরীরে তৈরিও হয় না। তাই শিশুর জন্মের ছয় মাস পর তাকে মায়ের দুধের পাশাপাশি বাড়তি খাবার দিতে হবে।
মায়ের দুধে ভিটামিন সি ও লৌহের পরিমান কম থাকে। গরুর দুধেও লৌহের পরিমাণ বেশ কম থাকে। তাই ছয় মাস পূর্ণ হলেই আপনার শিশুকে বাড়তি খাবার দিন। হঠাৎ নতুন খাবার তারা অপছন্দ করতে পারে, তাই ধীরে ধীরে অভ্যাস গড়ে তুলুন। এভাবে দুধ ছাড়া শরীরের পুষ্টির জন্য শিশুকে যে অন্য খাবার দেওয়া হয় সেটিই পরিপূরক খাবার।
শিশুর পরিপূরক খাবার তৈরি করার উপাদান ও নিয়মাবলী
শিশুকে বুকের দুধের পাশাপাশি পরিপূরক খাবার দেওয়ার সময় দ্বৈতমিশ্র খাবার দিয়ে শুরু করতে হবে। এই দ্বৈতমিশ্র পরিপূরক খাবারে কেবল দুইটি উপাদান থাকবে। যেমন : যথাক্রমে শস্য জাতীয় খাদ্যের সঙ্গে ডাল অথবা প্রাণীজ আমিষ কিংবা গাঢ় সবুজ শাক-সব্জি মিশিয়ে তৈরি করা যায়।
শস্য এবং ডাল জাতীয় খাদ্যের মিশ্রণ ৩:১ অনুপাতে প্রস্তুত করা যেতে পারে। তারপর আস্তে আস্তে বাচ্চাকে অধিমিশ্র খাবারে অভ্যস্ত করতে হবে। শিশুর বয়স দুই বছর পূর্ণ হলে সে বড়দের জন্য তৈরি সব রকম খাবারই খেতে পারবে। নিম্নলিখিত দ্বৈতমিশ্র খাবার দিয়ে শিশুর পরিপূরক খাবারের চাহিদা মেটানো যায়।
১. কম তেল এবং মসলা সহযোগে চাল, ডালের খিচুড়ি (সাথে মৌসুমি শাক-সব্জি দেওয়া যেতে পারে)।
২. দুধ দিয়ে রান্না করা সুজি অথবা সাগু।
৩. ভাতের সঙ্গে সিদ্ধ বা আধা সিদ্ধ ডিম।
৪. সিদ্ধ আলুর সঙ্গে ডাল চটকানো।
৫. তাজা ফল ও ফলের রস, যেমন- কলা, কমলা, আম, আনারস, জাম্বুরা ইত্যাদি।
৬. শিম, মটরশুটি, বরবটি, ফুলকপি ও অন্যান্য শাক-সব্জি সিদ্ধ করে চটকানো।
৭. ভাত ও খুব কুচি করে কাটা কম মশলায় রান্না মাংস।
৮. ডাল বা দুধে ভেজানো আটার রুটি।
৯. কাঁটা ছাড়া মাছ, মুরগির কলিজা সেদ্ধ করে চটকিয়ে।
শিশুর পরিপূরক খাবারে অভ্যাস করানোর পদ্ধতি
১. একটি খাবার একবারে অভ্যাস করাতে হবে।
২. এক চামচ পরিমাণ দিয়ে শুরু করুন। ধীরে ধীরে পরিমাণ বাড়ান।
৩. প্রথম অবস্থায় খাবারটি বেশি নরম ও সম্ভব হলে তরল করে দিন।
৪. খাবার অবশ্যই টাটকা ও তাজা হতে হবে।
৫. অতিরিক্ত মসলা ও ঝাল বর্জিত হতে হবে।
৬. সম্ভব হলে আকর্ষণীয় পাত্রে উপস্থাপন করুন।
৭. জোর করা ঠিক হবে না। শিশুর আগ্রহ সৃষ্টি করতে হবে।
৮. শিশুর বাটি, থালা, চামচ পরিষ্কার রাখতে হবে। যিনি খাওয়াবেন, তিনি অবশ্যই হাত ধুয়ে নিবেন।
একথা বলাই বাহুল্য যে শিশুকে যখন নতুন খাবার দেওয়া হবে তখন খুব স্বাভাবিক ভাবেই নতুন খাবারটি সে পছন্দ করবে না। কিন্তু মায়েদের ধৈয্য হারালে চলবে না। অল্প অল্প করে প্রতিদিন চেষ্টা করতে হবে। প্রয়োজনে খেলনা বা অন্য জনের সহায়তা নিন। না খেলে বা অল্প খেলে বাকি খাবারটি রেখে দিয়ে তাকে দুধ দিন।
মনে রাখবেন, শিশু যতই পরিপূরক খাবার খাক তাতে বুকের দুধের চাহিদা মেটে না। তাই দুই বছর পর্যন্ত তাকে মায়ের বুকের দুধ খেতে দিন। আপনার শিশু সুস্থ ও স্বাস্থ্যবান হয়ে বেড়ে উঠুক, এটাই কামনা।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।