সকল মেনু

চা আমদানি হচ্ছে লাইসেন্স বিহীন;সরকার হারাচ্ছে কোটি টাকার রাজস্ব

 এম শাহজাহান আহমদ, মৌলভীবাজার: চা আমদানির ক্ষেত্রে চা বোর্ড থেকে লাইসেন্স গ্রহণ বাধ্যতামুলক হলেও বছরেরর পর বছর ধরে লাইসেন্স ছাড়াই চা আমদানি করে চলছেন আমদানিকারকরা। এতে একদিকে যেমন সরকার বঞ্চিত হচ্ছে বিরাট অংকের রাজস্ব আয় থেকে তেমনি অপরদিকে বিরুপ প্রভাব পড়ছে নিলাম বাজারেও। বাংলাদেশ চা বোর্ডর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সালে বাংলাদেশে চা আমদানি হয়েছে ১ কোটি কেজি। যা ২০১২ সালের আমদানির দ্বিগুণ। প্রতি বছরই এভাবে দেশে চা আমদানির পরিমাণ বাড়ছে। এই চায়ের আমদানিকারকরা হলেন ইস্পাহানি, আবুল খায়েরসহ দেশের বড় কয়েকটি শিল্প প্রতিষ্ঠান। চা অধ্যাদেশ ১৯৭৭-এর ৭ (ঝ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, চা আমদানি করতে আমদানিকারদের চা বোর্ড থেকে লাইসেন্স গ্রহণ বাধ্যতামুলক। কিন্তু প্রয়োজনীয় লাইসেন্স ছাড়াই দীর্ঘদিন ধরে এসব চা আমদানি করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। মূলতঃ লাইসেন্স প্রদান ও গ্রহনের এই বিষয়টি তদারকির মূল দায়িত্ব হলো চা বোর্ডের। কিন্তু চা বোর্ড আমদানিকারকদের লাইসেন্স প্রদানের  বিষয়ে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। ফলে চা আমদানি বিষয়ে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। এতে বিরূপ প্রভাব পড়ছে চা নিলামে। তাছাড়া লাইসেন্স থাকলে আমদানিকারকরা মান যাচাই-বাছাই করে চা আমদানি করতে বাধ্য হতেন। গত অকশনে (৪৩তম নিলামে) গড় চায়ের দাম ছিল কেজি প্রতি ১১৪ টাকা। গত বছরের একই নিলামে এ দাম ছিল ১৯৬ টাকা।জানা যায়, এক সময় চা রফতানিকারক দেশ হিসেবে বিশ্বে পঞ্চম স্থান দখল করে থাকা বাংলাদেশ এখন আমদানিকারক দেশে পরিণত হয়েছে। আশির দশকে বাংলাদেশ প্রতি বছর প্রায় ৩ কোটি কেজি চা বিভিন্ন দেশে রফতানি করত। তবে অভ্যন্তরীণ চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দিন দিন রফতানি কমছে। এমনকি দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে গত দুই বছরে ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম,শ্রীলংকা ও ভারত থেকে প্রায় দেড় কোটি কেজি চা আমদানি করা হয়েছে।বাংলাদেশ চা বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, দেশে এখন ১৬৬টি চা-বাগান এবং ২৫৭ জন ক্ষুদ্র চাষী চা উৎপাদন করছেন। এর মধ্যে মৌলভীবাজারে ৯০টি, হবিগঞ্জে ২৩টি, চট্রগ্রামে  ২২টি, সিলেটে ২০টি, পঞ্চগড়ে ৯টি ও রাঙ্গামাটি এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একটি করে চা বাগান রয়েছে। দেশের চা বাগানগুলোর মোট আয়তন ১ লাখ ১৬ হাজার হেক্টর হলেও বর্তমানে চা চাষ হয় মাত্র ৫৭ হাজার হেক্টর জমিতে। ৫৯ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে বর্তমানে চা চাষ হয় না।এ বিষয়ে চা বোর্ডের গণসংযোগ কর্মকর্তা মদহুল কবীর চৌধুরী মোঠফোনে বলেন, দেশে প্রতি বছর চায়ের যে পরিমাণ চাহিদা বাড়ছে সে পরিমাণ উৎপাদন বাড়ছে না। ফলে রফতানি কমে যাচ্ছে। ২০০৩ সালে দেশে উৎপাদিত চায়ের পরিমাণ ছিল ৫ কোটি ৮৩ লাখ কেজি। ২০১৩ সালে দেশের চা বাগানগুলোয় ৬ কোটি ৫০ লাখ কেজি চা উৎপাদন হয়েছে। অর্থাৎ ১০ বছরে দেশে চা উৎপাদন বেড়েছে মাত্র ৬৭ লাখ কেজি। ২০০৪ সালে চা উৎপাদন হয়েছে ৫ কোটি ৬০ লাখ কেজি, ভোগের পরিমাণ ৪ কোটি ৩৩ লাখ কেজি আর রফতানি হয় ১ কোটি ৩০ লাখ কেজি চা।২০০৮ সালে দেশে উৎপাদিত চায়ের পরিমাণ ছিল ৫ কোটি ৮৬ লাখ কেজি। ওই বছর ভোগের পরিমাণ ৫ কোটি ২১ লাখ কেজি। আর রফতানি হয়েছে ৮০ লাখ কেজি। ২০১৩ সালে দেশের চা বাগানগুলোয় ৬ কোটি ৫০ লাখ কেজি চা উৎপাদন হয়েছে। ওই বছর অভ্যন্তরীণ ভোগের পরিমাণ ছিল ৬ কোটি ২০ লাখ কেজি। আর রফতানি হয়েছে প্রায় ৫ লাখ কেজি। অর্থাৎ গত ৮ বছরে রফতানির পরিমান কমেছে ১ কোটি ২৫ লাখ কেজি। যা এই শিল্পের জন্য একটি ভয়াবহ দুঃসংবাদ।এ বিষয়ে চা বোর্ডের উপপরিচালক (বাণিজ্য) নবী হোসেন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, চা আমদানিতে আমদানিকারদের বোর্ডের কাাছ থেকে লাইসেন্স নেয়া প্রয়োজন। এ বিষয়ে বিভিন্ন সময় বোর্ডের সভায় আলোচনা হয়েছে। কিন্তু আমদানিকারকদের অসহযোগিতার কারণে তা কার্যকর করা যাচ্ছে না। তাই দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী এ শিল্পের বিপর্যয় রোধে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top