সকল মেনু

চাঁদপুর সরকারি শিশু পল্লীতে এতিমদের নিয়ে বাণিজ্য করে কোটিপতি হচ্ছে ঠিকাদাররা

  শাহ মোহাম্মদ মাকসুদুল আলম, চাঁদপুর: চাঁদপুরে বাবুরহাট সরকারি শিশু পরিবার। যাকে সহজ ভাষায় বলা হয় এতিম খানা। এই প্রতিষ্ঠানটি চাঁদপুরের ঐতিহ্যবাহী একটি প্রতিষ্ঠান। একসময় এই প্রতিষ্ঠানে ছেলে এবং মেয়ে উভয়ের বসবাস ছিলো। বিগত সরকার আমলে ছেলেদেরকে স্থানান্তর করা হয় পাশ্ববর্তী জেলা লক্ষ্মীপুরে।  আর মেয়েদের বাস্স্থান হয় এখানে। সাধারণত যে সকল ছেলে এবং মেয়ের বাবা-মা উভয়ই মৃত  তাদের পড়ালেখা ও দু মুঠো খাবারের ব্যবস্থা নেই এমন শিশুদের স্থান হয় এখানে। আবার যে সকল শিশুদের বাবা নেই। পৃথিবীতে তাদের ভরণ-পোষনের ব্যবস্থা নেই। তাদেরও স্থান হয় এই প্রতিষ্ঠানে। অর্থাৎ এক কথায় মা-বাবার আদর স্নেহ, ভালোবাসা বিহীন শিশু এবং যাদের দু’ মুঠো খাবার যোগানের ব্যবস্থা নেই তারাই নিরুপায় হয়ে এই প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নেয়। এটি সরকারি একটি প্রতিষ্ঠান। আগে এর নাম ছিলো এতিম খানা। নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে সরকারি শিশু পরিবার। দেশের বহু জেলা রয়েছে যেখানে এমন প্রতিষ্ঠান নেই। অথচ সেক্ষেত্রে সৌভাগ্যবান এ চাঁদপুরবাসী। বর্তমানে বাবুরহাট সরকারি এ শিশু পরিবারে ১৭৫ জন নারী শিশু রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। এ জন্য রয়েছে দু’টি ভবন। ভবনটির একটির নাম ডরমেটরী ভবন-১,এটি ৫ তলা বিশিষ্ট।  ১০০ জন নারী শিশুর থাকার ব্যবস্থা আছে। অপরটিতে ৭৫ জন থাকার ব্যবস্থা রয়েছে।যে কোনো নারী শিশু ১৮ বছর পর্যন্ত এখানে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী থাকতে পারে। সরকারের নিয়ম-নীতি অনুযায়ী ৬ষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠানে শিশুদের পড়ালেখা করানো হয়। ৭ম শ্রেনি থেকে ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত শিক্ষার গন্ডি নারী শিশুটি যতটুকু পার করতে চায় ততটুকু পাশ্ববর্তী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরকারি বরাদ্দ অনুযায়ী করতে হয়।প্রতিটি মানুষের বেঁচে থাকার জন্য কমপেক্ষ তিনবেলা খাবারের প্রয়োজন রয়েছে। সেই মোতাবেক সরকারও তাদের তিনবেলা খাবারের ব্যবস্থা করেছে। যদিও বর্তমানে চলমান ব্যবস্থায় এই বরাদ্দ একেবারেই নগন্য। তারপরেও চলতে হয় তা দিয়েই। তাদের এই বরাদ্দ মাথাপিছু ১ হাজার ৫ শ’ টাকা। এটি শুধুমাত্র খাবারের জন্য। আবার বরাদ্দকৃত টাকার খাবারও সংগ্রহ করতে হয় ঠিকাদারের মাধ্যমে। যাদের প্রায় সবাই এতিমদের ঠকিয়ে কোটি পতি বনে যাচ্ছে। এমনই একজন হচ্ছে আঃ রহমান পাটওয়ারী। তিনি সরকারি শিশু পরিবারের পার্শ্বে স্থানীয় বাসিন্দা। চলতি অর্থ বছরে মেসার্স সেলিম খান এন্টারপ্রাইজের নামে তিনি এ প্রতিষ্ঠানের এতিমদের খাদ্য সরবরাহের কাজটি পান। গত ১৭ এপ্রিল দুপুর আড়াইটায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠান কর্তৃক খাদ্য মেনু তালিকায় রয়েছে মাছ, সবজি আর পারিজা চালের ভাত। কিন্তু ঠিকাদার সরবরাহ করেছেন ডাল, আলু আর কচুর লতি। মোটা লাল চালের ভাত। বাবুর্চি দিয়ে রান্না করার কথা থাকলেও ছাত্রীরা নিজেরাই ভাত রান্না করেছে। বেলা যখন তিনটা বাজে তখনও তরকারি রান্না করার ব্যবস্থা হয় নাই। অর্থাৎ এতিম এই শিশুরা বিকেল ৪টায়ও খাবার খেতে পারবে কিনা তাতেও সন্দেহ রয়েছে।পরে খাদ্য তালিকানুযায়ী গোপনে শিশুদের সাথে কথা বলে জানা যায়, খাদ্য তালিকায় যে সকল ফল-ফলাদি, দুধ, ডিম, মাছ মাংসের কথা উল্লেখ রয়েছে তা মাসে একবার বা দুইবার পাওয়াটাই খুবই দুষ্কর। অথচ এই প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আঃ লতিফ নামে যে ব্যক্তি এগুলো সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার থেকে বুঝে নেন তিনি সহজেই বললেন, তালিকা অনুযায়ী সবকিছু বরাদ্দ পাওয়া যায়।গোপন একটি সূত্র জানায়, গ্র্যাজুয়েট শিক্ষক আঃ লতিফ সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের সাথে গোপনে আঁতাত করে এতিমদের খাদ্য ও শিক্ষা উপকরণসহ বিভিন্ন বরাদ্দের একটি পার্সেন্টিজ তিনি ঠিকাদার থেকে নেন। আর এরই একটি অংশ তিনি তার অধিদপ্তরের উর্ধ্বতন কর্তপক্ষকেও দেন।এ বিষয়ে ঠিকাদার বলেন, সকলকে ম্যানেজ করেই এখানে আমি কাজ করি। অনিয়ম বিষয়ে শিক্ষক আঃ লতিফ গর্ব করে বলেন আমি দীর্ঘদিন এখানে কর্মরত আছি। কোনো অনিয়ম হলে একা আমি করিনা। সকলকে ম্যানেজ করেই করি।এ প্রতিষ্ঠানের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা জেলা সমাজ সেবা অধিদপ্তরের রেজিস্ট্রেশন অফিসার বেগম ফেরদৌসী আক্তার বলেন, এখনো খাওয়া রান্না হয়নি এটি দুঃখজনক। আর তালিকা অনুযায়ী খাদ্য সরবরাহের কথা। ভাই মানুষ আমি একজন। কয়টি দায়িত্ব পালন করবো। দয়া করে সহযোগিতা করুন। বিষয়টি আমি দেখছি।জেলা প্রশাসক মোঃ ইসমাইল হোসেনের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, এতিমদের বিষয়ে কোনো অন্যায় সহ্য করা হবে না। এটি আমি দেখবো।উল্লেখ্য, এই প্রতিষ্ঠানের তদারকির জন্য একটি কমিটিও রয়েছে। যেখানে জেলা প্রশাসক প্রধান। সর্বোপরি এতিমদের মুখের খাবার নিয়ে যারা ছিনিমিনি করছে তাদের বিষয়ে কর্তৃপক্ষ কী ব্যবস্থা গ্রহণ করেন এটি এখন দেখার বিষয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top