সকল মেনু

যুদ্ধাপরাধের ‘রাজনৈতিক’ রায় মানব না: বিএনপি

22_BNP_Protest_031013 জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, হটনিউজ২৪বিডি.কম:  সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর রায় ‘ফাঁস’ হওয়ায় যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিএনপি বলেছে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কোনো দণ্ড মেনে নেয়া হবে না। একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের রায় নিয়ে নীরবতা ভেঙে বৃহস্পতিবার প্রথম সমাবেশে এই হুঁশিয়ারি দেন বিরোধী দলেরে নেতারা। একাত্তরে গণহত্যার জন্য মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদেরকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করে। আইন মন্ত্রণালয়ে ‘তৈরি’ ওই রায় ‘ফাঁস’ হয়ে আগেই ইন্টারনেটে পাওয়া যাচ্ছিল বলে অভিযোগ তোলে সালাউদ্দিনের পরিবার। পরে ট্রাইব্যুনালও রায়ের খসড়া ফাঁসের কথা স্বীকার করে। যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে জোটসঙ্গী জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের বিরুদ্ধে রায়ে কোনো প্রতিক্রিয়া না জানালেও দলের নেতার মৃত্যুদণ্ডের একদিন পর প্রতিক্রিয়া জানিয়ে সারাদেশে বিক্ষোভের কর্মসূচি দেয় বিএনপি। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কেন্দ্রীয়ভাবে আয়োজিত সমাবেশে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “আদালতে ঘোষণার আগেই সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর রায় অনলাইনে চলে এসেছে। অভিযোগ উঠেছে এটি আইন মন্ত্রণালয় থেকে এসেছে। “শুধু রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কোনো ব্যক্তি কিংবা গোষ্ঠিকে দণ্ড প্রদান দেশের জনগণ কখনো মেনে নেবে না।” “রায় প্রকাশের ঘটনার আগে স্কাইপ কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেছে। আন্তর্জাতিক মহলও এই ট্রাইব্যুনালের বিচার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এদেশে মানুষের কাছেও আজ প্রশ্ন উঠেছে – আসলে সেখানে কী হচ্ছে?” সালাউদ্দিন কাদেরের রায়ের পর ‘বিচারের নামে প্রতিপক্ষকে নির্মূল ও সব গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংসে সরকারের ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে’ এই সমাবেশ করে বিএনপি। সমাবেশে দণ্ডিতের স্ত্রী ফারহাত কাদের চৌধুরীও বক্তব্য রাখেন। সালাউদ্দিন কাদেরের বড় প্রতিকৃতি এবং তার মুক্তির দাবি সম্বলিত ব্যানার ছিল সমাবেশে। আওয়ামী লীগ নেতারা বলে আসছেন, বিএনপি যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা করতে চায় বলে এই বিচারের বিরোধিতা করছে। দলের অবস্থান ব্যাখ্যা করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, “আমরা বার বার বলে আসছি, এই বিচারের বিরুদ্ধে বিএনপি নয়। আমরা চাই, ওই বিচার যেন স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও আন্তর্জাতিক মানের হয়। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে যেন বিচার করা না হয়।” বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে ‘সুবিচার’ পাননি বলেও মন্তব্য করেন তিনি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের উদ্যোগ নেয়া আওয়ামী লীগের উদ্দেশে বিএনপি নেতা বলেন, “আমরা প্রশ্ন রাখতে চাই, একাত্তর সালে যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত ১৯৫ জন পাকিস্তানি সৈন্যকে কারা ছেড়ে দিয়েছিল?” নির্দলীয় সরকারের দাবিতে চলমান আন্দোলনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “নির্দলীয় সরকার প্রতিষ্ঠা করলেই কেবল দেশে আইনের শাসন ফিরে আসবে। তখন সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী সুবিচার পাবেন। অন্যায়ভাবে যারা কারাগারে বন্দি হয়ে আছেন, তারা মুক্তি পাবেন।” সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস বক্তব্য রাখেন। মওদুদ বলেন, “সাড়ে চার বছরে সরকার অনেক অপকর্ম করেছে। এর মধ্যে বড় চমক হচ্ছে- আদালতে ঘোষণার আগে রায় গণমাধ্যমে বেরিয়ে আসা।” রায় ‘ফাঁস’, সালাউদ্দিন কাদেরের পক্ষে সাক্ষীদের সাক্ষ্য দিতে ‘বাধা’র ঘটনার উল্লেখ করে জমিরউদ্দিন সরকার বলেন, “উপরন্তু একাত্তর সালের যে সময়ে ঘটনার জন্য তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, ওই সময়ে তিনি দেশেই ছিলেন না। এসব কারণে ট্রাইব্যুনালের রায়টি আমরা ত্রুটিপূর্ণ বলে মনে করি।”এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের সুযোগ থাকার উল্লেখ করে তিনি বলেন, “তখন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারকরা এই ত্রুটিপূর্ণ রায় দেখে চোখ বন্ধ করে রাখবেন না। তাই এই রায় নিয়ে ঘাবড়ানোর কিছু নেই।” দলীয় সহকর্মীর বিষয়ে জমিরউদ্দিন বলেন, “সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বড় দোষ, তিনি স্পষ্টবাদী, আইনের শাসন ও গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন। জাতীয়তাবাদী দর্শনের এই ব্যক্তিটি অকপটে অনেক কথা বলে ফেলেন বলে অনেকে তাকে পছন্দ করে না।” রফিকুল ইসলাম বলেন, “আইন মন্ত্রণালয় সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে ফাঁসি দিয়েছে। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার আন্তর্জাতিক মানের না হলে সেখানে কাউকে ফাঁসির দণ্ড দেয়ার সুযোগ নেই।” মির্জা আব্বাস বলেন, “একটি মদের দোকানের নাম ইসলামী মদের দোকান রাখা হলে, সেই মদ কি হালাল হবে? নিশ্চয়ই না। “আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, অথচ তা আন্তর্জাতিক মানের নয়। তাহলে সেখানে কি সঠিক ও নিরপেক্ষভাবে বিচার হতে পারে? নিশ্চয়ই না।” তিনি দাবি করেন, সালাহউদ্দিন কাদের সব সময় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সংসদের ভেতরে-বাইরে সবচেয়ে বেশি ‘সোচ্চার’ ছিলেন বলেই তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ও ঢাকা মহানগর সভাপতি সাদেক হোসেন খোকার সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সালাহউদ্দিন আহমেদ, আবদুস সালাম, শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হাবিব-উন নবী খান সোহেল, হাবিবুর রহমান হাবিব, আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল প্রমুখ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top