সকল মেনু

কুষ্টিয়ার ২১টি বালু মহাল প্রভাবশালীদের দখলে

kst balu-1 কাঞ্চন কুমার,কুষ্টিয়া:  কুষ্টিয়া জেলার পদ্মা ও গড়াই নদীর ২১টি বালু মহাল ইজারা না হওয়ায় সরকার প্রতি বছর কোটি কোটি রাজস্ব হারাচ্ছে। বিআইডাব্লুটিএ কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় স্থানীয় প্রভাবশালীরা গত ৫ বছর ধরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে বিক্রি অব্যহত রেখেছে। সরকারি এসব বালু মহালের নিয়ন্ত্রক এখন সন্ত্রাসী চরমপন্থিরা। উচ্চ আদালতে পাল্টাপাল্টি রীটের কারণে বালু মহালগুলো দরপত্র আহবান করতে পারছে না জেলা প্রশাসন। আর এ সুযোগে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ ঘন ফুট বালু উত্তোলন করে বিক্রি করে দেয়া হচ্ছে। জেলা প্রশাসক সৈয়দ বেলাল হোসেন আইন ও ভূমি সচিব বরাবর একাধিক চিঠি দিয়ে রীট মামলাগুলো দ্রুত নিস্পত্তির অনুরোধ জানিয়েছেন। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ২১টি বালু মহালের মধ্যে রয়েছে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বাহাদুরখালী, মহানগর, চকুয়াদামা ও শুকদেবপুর, জুগিয়া, মৌজার বালু মহাল। ভেড়ামারা উপজেলার পশ্চিম চরদাদাপুর, চরগোলাগনগর-আরাজীসাড়া ও রূপপুর বালু মহাল। মিরপুর উপজেলার ঘোড়ামারা-রানাখড়িয়া, চরমাদিয়া, পশ্চিম দাদাপুর, মিনাপাড়া ও চর তালবাড়িয়া বালু মহাল। কুমারখালী উপজেলার লাহিনীপাড়া, জয়নাবাদ-ছেঁউড়িয়া, সেরকান্দি-আগ্রাকুন্ডা-তেবাড়ীয়া-বরুরিয়া, পাথরবাড়ীয়া-উত্তর হিজলাকর-এনায়েতপুর, গোবিন্দপুর, ভাড়রা-এলঙ্গী বালু মহাল। খোকসা উপজেলার চাঁদট-ভবানীপুর-গনেশপুর-কোমরভোগ এবং ওসমানপুর বালু মহাল। ২০০৮ সালে স্থানীয় জেলা প্রশাসন থেকে সর্বশেষ বালু মহালগুলোর ইজারা ডাকা হয়। এরপর থেকে আর কোন ইজারা দেয়া সম্ভব হয়নি। ভেড়ামারা উপজেলায় বাড়ি মুক্তার হোসেন মুক্তি ও কুষ্টিয়া পৌর এলাকার বাসিন্দা বিএনপি নেতা আনোয়ারুল হক মাসুম নামের দুই ব্যক্তি হাইকোর্টে পাল্টাপাল্টি রীট পিটিশন মামলা করেন। কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলা প্রশাসনের একটি সূত্র জানায়, এলাকার কতিপয় প্রভাবশালী বিআইডাব্লুটিএ থেকে নাব্যতা রক্ষার জন্যে নদী খননের অনুমতি নিয়ে অবৈধভাবে ভেড়ামারা বালু মহাল থেকে বালু উত্তোলন শুরু করে। এরপর আমরা ২০০৯ সালে এ বিষয়ে দরপত্র আহবান করতে গেলে ওই প্রভাবশালীরা হাইকোর্টে রিট করে। বিআইডাব্লুটিএ তাদেরকে যে ৩০ লক্ষ ঘনফুট বালু উত্তোলনের অনুমতি দিয়েছিল তা পুরণ না হওয়ায় তাদেরকে আরো সময় দেয়া প্রয়োজন বলে হাইকোর্ট থেকে আদেশ দেয়া হয়। এরপর এসব চক্র ভোগদখল করছে বালু মহাল। তবে গত ৪ বছরেও ৩০ লক্ষ ঘনফুট বালু তোলা শেষ হয়নি বলে দাবী করছে রিটকারি ব্যক্তিরা। সে সময় হাইকোর্ট বেশ কয়েকটি শর্ত সাপেক্ষে তাদের বালু উত্তোলনের অনুমতি দেয়। শর্তের মধ্যে অন্যতম ছিল পানি ও স্রোত যেখানে আছে সেখান থেকে বালু উত্তোলন। এছাড়া সেতুর পাশ থেকে কোন বালু উত্তোলন করা যাবে না। তবে এসব শর্তের একটিও মানছেন না মুক্তি ও মাসুমের লোকজন। ২০০৮ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত কোন জেলা প্রশাসকই বালু মহালগুলো মুক্ত করতে আইনী পদক্ষেপ গ্রহণ করনেনি। যার ফলে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তবে বর্তমান জেলা প্রশাসক সৈয়দ বেলাল হোসেন বালু মহাল সংক্রান্ত মামলাগুলো দ্রুত নিস্পত্তির জন্য আইন ও ভূমি সচিবকে একাধিক চিঠি দিয়ে সলিসিটর উইং এর মাধ্যমে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহনের অনুরোধ জানান। সর্বশেষ গত মাসের ১৩ আগষ্ট আইন সচিবকে আরেক দফা চিঠি প্রেরণ করেন তিনি। এদিকে জেলা প্রশাসক সৈয়দ বেলাল হোসেন বালুমহালগুলো মুক্ত করার উদ্যোগ নেয়ায় তাকেও প্রতিনিয়ত হুমকি দিচ্ছে সন্ত্রাসী ও প্রভাবশালী চক্র। জানা গেছে, গত সপ্তাহ খানেক আগে রীট পিটিশন মামলা দুটি খারিজ করে দেয়ার পাশাপাশি স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনকে বালুমহালগুলো বুঝে নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয় হাইকোর্ট থেকে। এরপর পুনরায় উচ্চ আদালতে আপিল করেন ওই দুই ব্যক্তি। এদিকে যারা রীট করেছেন তারাও বালু মহালের দখল নিজেদের অনুকুলে রাখতে পারেছেন না। সব কটি বালু মহাল স্থানীয় সন্ত্রাসী ও প্রভাবশালীদের দখলে চলে গেছে। প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ ঘনফুট বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছে প্রভাবশালী মহল। প্রতি ট্রাক বালু ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। গড়াই নদীর খনন করে যেসব বালু রাখা হয়েছে তাও ট্রাক ভরে নিয়ে যাচ্ছে এই চক্রটি। কুষ্টিয়ার বালু মহালের বৈধ ইজারাদার দাবিদার আনোয়ারুল হক মাসুম জানান, আমিই একমাত্র ব্যক্তি বিআইডাব্লুটিএ থেকে বৈধভাবে ৩০ লাখ ঘনফুট বালু উত্তোলনের অনুমোদন নিয়েছি। ৩০ লক্ষ ঘনফুট বালু উত্তোলন করতে কত বছর লাগবে জানতে চাইলে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজী হননি। সন্ত্রাসী ও প্রভাবশালীরা বালু মহাল দখল করে নিয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। জেলা প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা বলেন, মাসুম এক সময় বিআইডাব্লুটিএ থেকে বৈধভাবে বালু উত্তোলনের অনুমোদন এনেছিলেন। কিন্তু ২০১১ সাল থেকে তার বৈধতা শেষ হয়ে গেছে। বালু মহালগুলো ইজারা না হওয়ায় বৈধ বালু ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করতে পারছে না। বালু মহালের বৈধ মালিকানা স্থানীয় জেলা প্রশাসন হলেও বিআইডাব্লুটিএ এর কিছু অসাধু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে বালু উত্তোলনের অনুমতি অসাধু লোকজন। কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক সৈয়দ বেলাল হোসেন জানান, বালু মহাল ইজারা না হওয়ায় সরকার প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। এ বিষয়টি আইন ও ভূমি সচিবকে একাধিক বার অবহিত করেছি। আশা করছি যে সব রীট উচ্চ আদালতে আছে তা দ্রুত নিস্পত্তি হয়ে যাওয়ার পর বালু মহালগুলো বৈধভাবে ইজারা দেয়া সম্ভব হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top