সকল মেনু

সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে নিউ ইয়র্কে ,প্রধানমন্ত্রী

1380457449 নিউ ইয়র্ক প্রতিনিধি:  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধী দলকে আশ্বাস দিয়ে বলেছেন, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচন অবাঁধ ও সুষ্ঠু হবে এটুকু গ্যারান্টি দিতে পারি। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে কখনোই অবাঁধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব হয়নি। আমরা একটি অবাঁধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চাই। তিনি আরো বলেন,আলোচনার মাধ্যমে সুষ্ঠু সমাধানের আহবান জানানোর জবাবে বিরোধী দলীয় নেতা ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে বলেছিলেন, শেখ হাসিনা পালাবারও পথ পাবে না। শুধু তাই নয়, বেগম খালেদা জিয়া যুদ্ধাপরাধী জামায়াত আর হোফাজতে ইসলামকে সাথে নিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করতে ষড়যন্ত্র করেছেন। জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিয়ে ছয় দিন যেসব কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিলেন তা জানাতে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে অংশগ্রহণ এবং এর মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্জনগুলো সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে শনিবার বিকেলে এ সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সাংবাদিক সম্মেলনের আগে প্রধানমন্ত্রী শনিবার সকালে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজেকের সঙ্গে দুপুরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে এবং বিকেলে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনের সঙ্গে বৈঠক করেন। জাতিসংঘ মহাসচিবকে বাংলাদেশে অবাঁধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দেখতে পর্যবেক্ষক পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছেন বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলোতে দেখেছি প্রত্যেক সিটি মেয়রের জনপ্রিয়তায় কমতি ছিল না, তারা অনেক ভালো কাজ করেছেন, কিন্তু তারপরেও তারা নির্বাচনে হেরেছেন। জনগণ কেন ভোট দেয়নি সে কথা জনগণের কাছেই জানতে চাই। সাম্প্রতিক সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হারার পেছনে প্রধানমন্ত্রী মিডিয়াকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, এ জন্য মিডিয়ারও ভূমিকা রয়েছে। সংবাদমাধ্যমগুলো নেতিবাচক খবরকেই বেশি প্রাধান্য দেয়, সরকারের অর্জনগুলোকে কখনোই গুরুত্ব দেয় না। আর সে কারণেই সরকারের ভাবমূর্তি খারাপ হয়। সুশীলদের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, যারা টেলিভিশনে কথা বলেন তারাও একসময় বিভিন্ন দায়িত্বশীল পদে কাজ করেছেন এত বড় বড় কথা বলেন অথচ নিজেরা তাদের দায়িত্ব পালনকালে কতটুকু কি করতে পেরেছেন তা সাংবাদিকরা খুঁজে দেখতে পারেন। স্ব-স্ব কর্মস্থলে যারা ব্যর্থ তারাই এখন দেশে বড় বড় কথা বলছেন। বিরোধী নেত্রী তার অবস্থান থেকে কিছুটা সরে এলে আপনিও কি কিছুটা নমনীয় হয়ে এগিয়ে যাবেন? এমন এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের স্বার্থে জনগণের স্বার্থে নমনীয় হতে যেকোনো সময় প্রস্তুত রয়েছি। বিরোধী দলীয় নেতারা সঙ্গে চা খেতেও আপত্তি নেই। আমি তো চা খেতে পছন্দই করি।

শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়া যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গ ছেড়ে সংসদে এসে তার কী চাওয়া তা জানাতে পারেন। তিনি যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর চেষ্টা বন্ধ করলেই দেশের রাজনৈতিক সংকট কেটে যাবে। রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের বিরুদ্ধে লংমার্চ চলছে এই প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই বিদ্যুৎকেন্দ্রে সুন্দরবনের পরিবেশের কোনো ক্ষতি হবে না। যারা বিরোধিতা করে লংমার্চ করছেন তাদের প্রতি যেখানে কেন্দ্রটি হচ্ছে সেখানে গিয়ে ঘুরে দেখতে বলেন। তিনি বলেন, সেখানে গেলেই বুঝতে পারবেন এটি কোনোই ক্ষতির কারণ হতে পারে না। সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি দারিদ্রের বিরুদ্ধে সংগ্রামের জন্য সাউথ সাউথ অ্যাওয়ার্ড অর্জন, এমডিজি অর্জনে সবচেয়ে অগ্রসর দেশ হিসেবে জাতিসংঘের বিভিন্ন ফোরামে প্রশংসিত হওয়া ও বাংলাদেশকে গুরুত্বপূর্ণ দেশ হিসেবে উপস্থাপনের সুযোগ মিলেছে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, জঙ্গিবাদ, হত্যা,গুম, গণধর্ষণ, বোমাবাজির হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে হলে আগামীতেও মহাজোটকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় আনুন। তিনি চট্রগ্রামের খুন হওয়া বিএনপিনেতা জামালউদ্দীনের উদাহরণ টেনে বলেন, বিএনপি নিজের দলের লোককেও হত্যা করতে ছাড়ে না। বোরখা পরে কোরান শরিফ হাতে নিয়ে মা বোনদেরকে যারা বিভ্রান্ত করেছিল তাদের মিথ্যাচারের প্রমাণ তুলে ধরতে হবে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা বিভ্রান্তিতে ভুগেছেন, তাদের উচিত ঐসব মিথ্যাবাদিদের কাছে মিথ্যাচারের জবাব চাওয়া এবং ভোটের মাধ্যমে সমুচিত শিক্ষা দেয়া। শেখ হাসিনা প্রবাসীদের দীর্ঘদিনের দাবি নিউইয়র্ক রুটে বিমান চালু করার বিষয়ে বলেন, আগামী ফেব্র“য়ারি-মার্চ নাগাদ বোয়িং-এর উড়োজাহাজ দুটো পাওয়ামাত্রই বিমান চালু হবে।এসময় প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘে বিশ্ব নেতাদের কাছে যুদ্ধাপরাধের বিচারে তাদের সহযোগিতা চাওয়ার বিষয়টি জানান। তিনি বলেন, সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সবচেয়ে এগিয়ে থাকার কারণে এবারের অধিবেশনে বাংলাদেশ বারবার প্রশংসিত হয়েছে। বার বার উচ্চারিত হয়েছে বাংলাদেশের নাম। জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘ মহাসচিবকে বাংলাদেশে অবাঁধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দেখার জন্য পর্যবেক্ষক দল পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছি। জাতিসংঘের শান্তি মিশনে বাংলাদেশ থেকে আরও সেনা পাঠানোর বিষয়ে মহাসচিবের সম্মতি পাওয়া গেছে। মিশনের উচ্চ পদগুলোতেও বাংলাদেশের অংশগ্রহণ যাতে থাকে সে লক্ষেও কথা হয়েছে। নাগরিক সংবর্ধনায় আরো বক্তৃতা রাখেন আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন আমু, তোফোয়েল আহমেদ, ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন, জাতীয় পার্র্টির আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও জাসদের মঈনুদ্দিন খান বাদল প্রমুখ।আমির হোসেন আমু বলেন, বেগম খালেদা জিয়া যুদ্ধাপরাধী ও পাকিস্তানের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করছেন। প্রবাসে জামায়াত-বিএনপি জোটের বিক্ষোভের কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, দেশ স্বাধীন না হলে এদের কেউই এদেশে আসতে পারতেন না। পাকিস্তান আমলে তাদের পূর্বপুরুষদের কেউই আসতে পারে নি। আর তাই তাদেরকে নেহায়েত আহাম্মক ছাড়া আর কিছুই বলার নেই। মহাজোট আবারো নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন আমীর হোসেন আমু।

তোফায়েল আহমেদ তার বক্তৃতায় অল্লাহর কসম দিয়ে বলেন, আগামী নির্বাচন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সংবিধান অনুযায়ীই হবে। তিন তার এবারের জাতিসংঘ সফরের কথা বলতে গিয়ে ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধুর সাথে তার জাতিসংঘ সফরের স্মৃতিচারণ করে অশ্র“সিক্ত হয়ে পড়েন। কান্নায় ভারী হয়ে আসা কন্ঠে তিনি বলেন,বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার সাথে জাতিসংঘে এসে তার বিশ্ব পর্যায়ের নেতৃত্ব দেখে তিনি অভিভূত।

রাশেদ খান মেনন আগামীতেও নির্বাচনে মহাজোটকে নির্বাচিত করার উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, তা নাহলে পুরো দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া রাজনৈতিকভাবে অস্থিতিশীল হয়ে পড়বে। তিনি সরকারের বিভিন্ন সাফল্যের কথাও তুলে ধরেন।

আনিসুল ইসলাম মাহমুদ সরকারের নানা সাফল্য তুলে ধরে বলেন দেশকে এগিয়ে নিতে মহাজোটের কোন বিকল্প নেই।

মঈনুদ্দিন খান বাদল বলেন, ড. কামাল হোসেনরা তত্ত্বাবধায়ক সরকার সম্পর্কে আদালতের রায় নিয়ে অসত্য বলছেন। এটা নেহায়েত রাজনীতির দ্বন্দ্ব নয়, এটা দেশের অস্তিত্বের সংগ্রাম।

যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানের সভাপতিত্বে নিউইয়র্ক বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি কামাল আহমেদ, জালালাবাদ এসোসিয়েশনের সভাপতি বদরুল খান এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা নজমূল ইসলাম, আব্দুর রহিম বাদশা, আব্দুল হাসিব মামুন, আব্দুস সামাদ আযাদ, মোহাম্মদ আলী, মহিউদ্দীন দেওয়ান, মুজিবুর রহমান মিয়া, শাহীন আজমল, এমদাদূর রহমান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনটি বড় পর্দায় মহাজোট সরকারের সাফল্যের পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াত জোটের বোমাবাজি, নাশকতা ও মিথ্যাচারের নানান তথ্যাদি সম্বলিত তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। হোটেল শেরাটনের গ্রান্ড বলরুমে অনুষ্ঠিত এ নাগরিক সংবর্ধনায় প্রায় ৩ হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি অংশ নেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top