সকল মেনু

আন্তর্জাতিক অঙ্গনের উচিৎ ইতিবাচক সাড়া দেয়া- শেখ হাসিনা

HAsina-002620130925203839  হটনিউজ ডেস্ক রিপোর্ট, ঢাকা, ২৬ সেপ্টেম্বর:  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এমডিজি-৭ বাংলাদেশের জন্য একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ। তবে বাংলাদেশ ২০১৫ পরবর্তী উন্নয়ন এজেন্ডা অর্জনে আন্তঃসরকার আলোচনার জন্য রাজনৈতিক পটভূমি তৈরিতে বৈশ্বিক প্রচেষ্টার অগ্রভাগে থাকবে।বুধবার প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ সদর দফতরে ‘স্পেশাল ইভেন্ট টু ফলোআপ অ্যাফোর্টস মেড টুওয়ার্ডস এচিভিং দ্য এমডিজি’ শীর্ষক অধিবেশনে ভাষণে এ কথা বলেন। শেখ হাসিনা আয়ারল্যান্ডের উপ-প্রধানমন্ত্রী ইয়ামন গিলমোরের সঙ্গে এই অধিবেশনে কো-চেয়ারম্যান ছিলেন। শেখ হাসিনা বলেন, এমডিজি-৭ বাংলাদেশের জন্য একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ। তবে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে এমডিজি-১, এমডিজি-২, এমডিজি-৩, এমডিজি-৪, এমডিজি-৫ এবং এমডিজি-৬ পূরণ করেছে অথবা পূরণ করার পথে রয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ একটি নিম্নাঞ্চলের উপকূলীয় রাষ্ট্র। এ দেশ প্রতিনিয়ত প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে লড়াই করে আসছে। তাই বাংলাদেশের পক্ষে এমডিজি-৭ অর্জন খুবই কঠিন। প্রশমন ও অভিযোজন নীতির আলোকে আমাদের সরকার ১৩৪ দফা কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত তাদের অঙ্গন থেকে আমাদের প্রতি ইতিবাচক সাড়া দেয়া। ২০০০ সালের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘে ঐতিহাসিক সহস্রাব্দ ঘোষণার সঙ্গে তার যুক্ত থাকার কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে সে সময় আমি এখানে উপস্থিত ছিলাম। আমি একটি উন্নয়ন রূপকল্প দেই এবং ২০১৫ সালের মধ্যে দারিদ্র্য, ক্ষুধা ও অসমতা দূরীকরণের লক্ষ্য নির্ধারণ করি।’ তিনি বলেন, ‘২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে আমি আবারও এখানে আসি এবং বিশ্বকে ক্ষুধা ও অনুন্নয়ন থেকে মুক্ত করতে সহস্রাব্দ ঘোষণাকে ম্যাগনা কার্টা হিসাবে উল্লেখ করি। আমাদের এমডিজি অর্জনের অভিজ্ঞতা এবং ২০১৫-পরবর্তী এজেন্ডা নিয়ে মতবিনিময়ে এখন আমি এখানে এই বিশেষ ইভেন্টে উপস্থিত হয়েছি।’ শেখ হাসিনা বলেন, ২০০০ সালে সহস্রাব্দ শীর্ষ সম্মেলন থেকে ফিরে গিয়ে এমডিজিকে বাংলাদেশের উন্নয়ন এজেন্ডা ও দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলের মূল ধারায় অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেই। সে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সরকার এমডিজিকে বার্ষিক, মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনায় সংযুক্ত করে। আমাদের এই কর্মকাণ্ডে সাফল্য লাভ করেছে এবং ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। আমাদের এই প্রচেষ্টার ফলে ২০১০ সালে আমরা এমডিজি অ্যাওয়ার্ড, ২০১২ সালে ক্ষুধা মুক্তির জন্য আমরা সাউথ-সাউথ এ্যাওয়ার্ড ও এফএও ডিপ্লোমা অ্যাওয়ার্ড লাভ করি।

তিনি বলেন, বৈশ্বিক মন্দা সত্ত্বেও সরকারের নীতির কারণে দেশে গড় জিডিপি স্থিতিশীল থাকে। আমাদের প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৬ দশমিক ৪ শতাংশের কাছাকাছি। মাত্র দুই দশকের মধ্যে দারিদ্র্যের হার ৫৬ দশমিক ৬ শতাংশ থেকে ২৬ শতাংশে নেমে আসে। শেখ হাসিনা বলেন, বিভিন্ন সরকারি নীতির ফলে বৈশ্বি মন্দার সময়েও দেশে গড় জিডিপি প্রবৃদ্ধি হার বজায় রাখা সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রবৃদ্ধি হার প্রায় ৬.৪ শতাংশ এবং মাত্র ২ দশকে দারিদ্র্য হার ৫৬.৬ শতাংশ শতাংশ থেকে ২৬ শতাংশে হ্রাস পেয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার মাধ্যমে বাংলাদেশ এমডিজি-১ অর্জন করছে। তিনি বলেন, সুষম শিক্ষা লাভের সুযোগ সম্প্রসারণের ফলে এমডিজি-২ অর্জনে ভাল অগ্রগতি হয়েছে। শিক্ষার্থী ভর্তির হার ৯৯.৪৭ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হচ্ছে, শিক্ষার্থীদের জন্য স্কুলফিডিং কর্মসূচি চালু করা হয়েছে এবং ই-লার্নিং ঝরে পড়া কমিয়ে এনেছে।
এমডিজি-৩ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ২০০৯ সালে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা ক্ষেত্রে ছেলে ও মেয়েদের মধ্যে সমতা অর্জন করেছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের ছাত্র-ছাত্রী সমতাভিত্তিক শিক্ষানীতি, বৃত্তি এবং কলেজ পর্যায় পর্যন্ত মেয়েদের জন্য অবৈতনিক শিক্ষা বেশ সহায়ক হয়েছে।’
তিনি বলেন, সম্প্রতি সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থী বিশেষ করে মেয়েদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট ফান্ড চালু করাও এ ক্ষেত্রে সহায়ক হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ‘নারীর অগ্রযাত্রা সংক্রান্ত জাতীয় নীতিমালা-২০১১ প্রণয়ন করার ফলে তা জাতীয় উন্নয়ন এবং সর্বস্তরে নারীদের ব্যাপক অংশগ্রহন নিশ্চিত করতে অবদান রাখছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এমডিজি-৪ অনুযায়ী, বাংলাদেশ ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের মৃত্যু হার হ্রাসে সাফল্য অর্জন করেছে। আমরা এমডিজি-৫ অনুযায়ী মাতৃমৃত্যু হার হ্রাস করার ক্ষেত্রেও অগ্রগতি লাভ করেছি।
তিনি বলেন, জাতীয় স্বাস্থ্য নীতি ২০১১ ও জাতীয় জনসংখ্যা নীতি ২০১২ প্রণয়ন এবং সাড়ে ১৫ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও কল্যাণ কেন্দ্র চালু করা আমাদের এসব লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, এমডিজি-৬ অনুযায়ী, বাংলাদেশ এইচআইভি/এইডস সংক্রমন ০.১ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনা, যক্ষ্মা প্রতিরোধ, ম্যালেরিয়া জনিত মৃত্যু হার হ্রাস, শিশুদের টিকাদান, ৮৮ দশমিক ২ শতাংশ জনগণের জন্য নিরাপদ পানি সরবরাহ ও ৯১ শতাংশ জনগণের জন্য স্যানিটেশন নিশ্চিত করেছে।
এমডিজি-৮ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব প্রতিশ্রুত সম্পদের যোগান দিতে পারেনি। তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের এএমডিজি অর্জনের প্রয়াসে আমরা আমাদের উন্নয়ন অংশীদারদের প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।’
২০১৫ পরবর্তী এজেন্ডা-‘জনগণ, ধরিত্রী ও অর্থনীতি’ সংক্রান্ত কয়েকটি জাতীয় ও আন্ত-জাতীয় পরামর্শ কর্মসূচির উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসব পরামর্শ কর্মসূচি ২০১৬-২০৩০ সালের মেয়াদের জন্য ১১টি বৈশ্বিক লক্ষ্য, ৫৮টি লক্ষ্যমাত্রা এবং ২৪১টি সূচক নির্ধারণ করেছে।
শেখ হাসিনা আশা প্রকাশ করেন, ২০১১ সালের জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে তার উত্থাপিত ‘জনগণের ক্ষমতায়ন ও উন্নয়ন’ শীর্ষক মডেলটি ২০১৫ পরবর্তী উন্নয়ন এজেন্ডা প্রণয়নকালে পর্যালোচনা করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ অভিন্ন ভবিষ্যতের লক্ষ্যে ঐকমত্য গড়ে তোলার জন্য সর্বাত্মক প্রয়াস চালিয়ে যাবে এবং আমরা আমাদের জনগণের ক্ষমতায়নের মাধ্যমে কল্যাণ নিশ্চিত করার জন্য আমাদের অঙ্গীকার পূরণ করবো।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top