সকল মেনু

বাবার অপমানের প্রতিশোধ নিতে গিয়ে খুন হন আখাউড়ার ব্যবসায়ী মহসীন!

হটনিউজ ডেস্ক:

বাবাকে চরমভাবে অপমানের বিষয়টি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছিলেন না মহসীন সরকার। সালিশে বিষয়টি মীমাংসা হলেও অপমানকারী আরিফকে শায়েস্তা করার ফন্দি আঁটেন মহসীন। তবে শেষ পর্যন্ত মহসীনকেই হত্যাকাণ্ডের শিকার হতে হল। পাল্টা আক্রমণে আরিফের হাতে খুন হন মহসীন। ঘাতক আরিফ আদালতে দেওয়া ১৬৪ ধারার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এ তথ্য জানিয়েছেন বলে একাধিক বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে। এছাড়া আরিফ পুলিশের কাছেও একই কথা তুলে ধরেছেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া আখাউড়া উপজেলার খলাপাড়ার বাসিন্দা মো. মহসীন সরকার (৩৫) গত সোমবার সন্ধ্যায় খুন হন। মো. মহসীন উপজেলার মোগড়া ইউনিয়নের খলাপাড়া গ্রামের শহিদুল ইসলাম ছেলে। তিনি বিডি ফুডসসহ একাধিক কোম্পানির ডিস্ট্রিবিউটর ছিলেন। পৌর এলাকার রাধানগরে রাজীব কটেজে তার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ছিল।

পুলিশ জানায়, আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে আরিফ কী বলেছে সেটা জানার পর তার কথা যাচাই-বাছাই করা হবে। তবে আরিফ তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে বলে পুলিশ স্বীকার করলেও তদন্তের স্বার্থে এ বিষয়ে মুখ খুলতে চাইছেন না। পুলিশ কিছু বিষয় মাথায় রেখে ঘটনার তদন্ত চালাচ্ছে। আরিফের শরীরে থাকা আঘাতও পুলিশের মনে সন্দেহের দানা বাধে।
মহসীন হত্যার পর তার বাবা শহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে আখাউড়া থানায় মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনার আরিফের বাবা আউয়াল মিয়াকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনদিনের চেষ্টায় একাধিক জেলায় অভিযান চালিয়ে ৬ মে আরিফকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করে আখাউড়া থানা পুলিশ। শনিবার বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট স্বাগত সৌম্য এর আদালতে আরিফ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।

জবানবন্দিতে আরিফ জানায়, প্রবাসে থাকা অবস্থায় তার স্ত্রীকে নিয়ে কুৎসা রটায় মহসীনের পরিবার। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মহসীনের বাবাকে অপমানিত করেন আরিফ। এ নিয়ে হওয়া সালিশ বৈঠকে বিষয়টি মীমাংসা হলেও মেনে নিতে পারছিলেন না মহসীন। এরই জের ধরে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে আরিফের উপর আক্রমণ চালায় মহসীনসহ কয়েকজন। আরিফ তখন ফলসহ বিভিন্ন জিনিস নিয়ে মোটর সাইকেলে করে বাড়ি ফিরছিলেন। স্ত্রীর দেওয়া তালিকা অনুযায়ী একটি ছুরিও কিনেন তিনি। হামলার সময় ওই ছুরিতেই তিনি এলোপাতারি আক্রমণ করেন বলে স্বীকারোক্তিতে উল্লেখ করেন। কিছুদিনের মধ্যেই আরিফ আবার প্রবাসে চলে যাওয়ার কথা।

তবে মহসীনের সাথে থাকা মো. শফিউল আলম নামে এক ব্যক্তি তাৎক্ষণিকভাবে সাংবাদিকদেরকে জানিয়েছিলেন যে, সন্ধ্যার দিকে মোটর সাইকেলে করে তারা রাধানগর থেকে খলাপাড়া যাচ্ছিলেন। মোটর সাইকেল চালাচ্ছিলেন মহসীন। এ সময় পাঁচ-ছয়জন এসে মহসীনের উপর অতর্কিত হামলা চালান। তাকে ছুরি দিয়ে আঘাত করা হয়। হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

পরিবারের লোকজন জানান, কিছুদিন আগে মহসীনের বাবাকে অপদস্থ করেন একই এলাকার আউয়াল মিয়ার ছেলে মো. আরিফ। বিষয়টি সামাজিকভাবে মীমাংসা হয়। এরই জের ধরে তাকে হত্যা করা হয়। হাসপাতালে থাকা মহসীনের বাবা শহিদুল ইসলাম গায়ে লেগে থাকা রক্ত দেখিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এ ঘটনার জন্য তিনি আরিফকে দায়ী করেন।

আখাউড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সঞ্জয় সরকার জানান, কৌশল অবলম্বন করে আরিফকে ধরা হয়। পরে তার দেওয়া স্বীকারোক্তি মতে নিজ বাড়ি থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরিটি উদ্ধার করা হয়। আখাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মিজানুর রহমান জানান, আরিফ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলেও কি বলেছেন সেটা জানা নেই। জানার পর তার কথা যাচাই করা হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top