সাতক্ষীরা প্রতিনিধি, ২৪ সেপ্টেম্বর: ভারতে বন্যাজনিত কারণে মূল্যবৃদ্ধি ও আমদানিকৃত পণ্য ছাড় করতে ইচ্ছামত উৎকোচ গ্রহণের ফলে ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি হুমকির মুখে পড়েছে।
চলতি সপ্তাহের যে কোন সময়ে এ বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের সদস্য ‘মা’ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী জিএম আমীর হামজা, মেসার্স মহিউদ্দিন এ-সন্স এর স্বত্বাধিকারী মশিউর রহমান ও মেসার্স জাকির ট্রেডিং ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী জাকির হোসেন জানান, গত ১৪ আগস্ট পেঁয়াজের রপ্তানি মূল্য ৬৫০ ডলার বেধে দিয়েছিল ভারত সরকার।
দেড় মাসেরও কম সময়ে গত বৃহস্পতিবার থেকে ভারত সরকার দ্বিতীয় দফায় পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি করে ৯০০ ডলারে উন্নীত করেছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের আমদানিকৃত পেঁয়াজের অর্ধেকের বেশি অংশ ঢোকে ভোমরা বন্দর দিয়ে। এক সপ্তাহ আগে এ বন্দর দিয়ে গড় প্রতি দৈনিক ৯০টি ট্রাকে এক হাজার ৪০০ টন পেঁয়াজ ভারত থেকে আমদানি করা হতো।
সম্প্রতি ভারতের উত্তরাখসহ কয়েকটি এলাকায় বন্যার ফলে পেঁয়াজের ক্ষেত নষ্ট হয়ে যায়। ফলে দেশের আভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে পেঁয়াজ বিদেশে পাঠানো দুষ্কর পড়ে তাদের পক্ষে।
এমতাবস্থায় ভারত সরকার পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা না করে টনপ্রতি মূল্য ৯০০ আমেরিকান ডলারে বাড়িয়ে দিয়েছে। এ ব্যবসা অলাভজনক হওয়ায় ভারতীয় ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েছে।
ব্যবসায়ীরা আরো জানান, বর্তমানে প্রতিদিন ৭৫ থেকে ৮০ টন পেঁয়াজ ভোমরা বন্দর দিয়ে দেশে ঢুকছে। ফলে বর্তমানে খোলা বাজারে কিলো প্রতি পেঁয়াজ ৮৫ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশী পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকায়।
হিলি বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি ইতিমধ্যেই বন্ধ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় চলতি সপ্তাহের যে কোন দিন এ বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে তাদের আশঙ্কা। সেক্ষেত্রে বিকল্প ব্যবস্থা না হলে পেঁয়াজ চলে যাবে সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে।
পেঁয়াজের চাহিদা পূরণে এ দেশ ভারতের উপর নির্ভরশীল উল্লেখ করে তারা বলেন, ভারতে পেঁয়াজের দাম না কমলে এদেশে দাম কমবে না।
ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও মেসার্স সাব্বির এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী শাহীনুর হোসেন জানান, রপ্তানিকৃত ভারতীয় পেঁয়াজের দাম ৯০০ ডলারে উন্নীত হওয়ার পর রোববার আমদানিকারক রাজশাহীর আহম্মেদ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মনিরুল ইসলাম ও ভোমরার সাইফুল এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী সাইফুল ইসলাম মিলন নতুন এলসি খুলেছেন। তাদের পণ্য মঙ্গলবার আমদানি হতে পারে।
ভোমরা বন্দর কেন্দ্রিক আমদানিকারক তোজাম্মেল হক ও মোবারেক হোসেনের অভিযোগ, ৬৫০ ডলারে কেনা পেঁয়াজবাহী ট্রাক শুক্রবার এ বন্দর দিয়ে ঢুকতে গেলে বাধা দেয় ভারতীয় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। কারণ রপ্তানি মূল্য বাড়ানোয় আগের মূল্যের পরিবর্তে বর্তমান মূল্যে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি হবে। বৃহস্পতিবার ১৯ ট্রাক, শনিবার ১৮ ট্রাক ও রোববার ৩৪ ট্রাক পেঁয়াজ এ বন্দর দিয়ে আমদানি হয়েছে। যা টন প্রতি ৬৫০ ডলারে আমদানি হওয়া।
এ ব্যাপারে ভোমরা বন্দরের এন্ট্রি সেকশনের দায়িত্বে থাকা সহকারি রাজস্ব কর্মকর্তা (পরীক্ষায়ন ও শুল্কায়ন) সাইফুল ইসলাম পেঁয়াজের ট্রাক এন্ট্রি করার সময় উৎকোচ গ্রহণের বিষয়টি স্বীকার বলেন, এখানে কাস্টমস সুপার সাহেবের নির্দেশ মেনেই সব কিছু করা হয়।
সাতক্ষীরার ভোমরা বন্দরের কাস্টমস সুপারিনটেনডেন্ট আক্তার হোসেন পেঁয়াজ আমদানিতে কোন প্রকার উৎকোচ (স্পিড মানি) গ্রহণের কথা তার জানা নেই উল্লেখ করে বলেন, তার নাম করে কেউ টাকা আদায় করে থাকলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমদানি সংকটের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ বন্দর দিয়ে যে কোনো সময় পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হয়ে যেতে পারে।