সকল মেনু

অভাবের দিন ধৈর্য ধারণে মহানবীর সুসংবাদ

হটনিউজ ডেস্ক:

দারিদ্র্যকে অনেকে আজন্ম পাপ মনে করে। অভাব-অনটন, অবহেলা-অনাদরে অতিষ্ঠ হয়ে অনেকেই বলে বসে, পৃথিবীর বুকে দরিদ্র হয়ে জন্ম নেওয়াই একটি বড় ধরনের পাপ।

কিন্তু বাস্তবতা হলো, যদি কোনো দরিদ্র ব্যক্তি মহান আল্লাহর বিধান মোতাবেক জীবন পরিচালনা করে, ধৈর্য ধারণ করে, সৎভাবে জীবন যাপন করে, তবে এই দারিদ্র্যই তাকে আলোকিত করবে। আবদুল্লাহ বিন আমর (রা.) বলেন, একদিন আমি মসজিদে বসে ছিলাম।

দরিদ্র মুহাজিরদের একটি দলও মসজিদে বসা ছিল। এমন সময় রাসুল (সা.) এসে তাঁদের কাছে বসে বলেন, ‘দরিদ্র মুহাজিররা সুসংবাদ গ্রহণ করুন। তাদের চেহারা উজ্জ্বল হোক। কারণ তারা ধনীদের ৪০ বছর আগে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আমি দেখলাম, তাদের রং পরিবর্তন হয়ে উজ্জ্বল হয়ে গেল। আমারও আশা জাগল, আমি যদি তাদের মাঝে হতাম!’ (দারেমি, হাদিস : ২৭২১)
দারিদ্র্য যদি পাপই হতো তাহলে মহানবী (সা.) দরিদ্ররূপে মৃত্যু ও দরিদ্ররূপে হাশরের ময়দানে উত্থিত হওয়ার দোয়া করতেন না। আবু সাঈদ আল-খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, তোমরা মিসকিনদের মহব্বত করবে। কেননা আমি রাসুল (সা.)-কে তাঁর দোয়ায় বলতে শুনেছি, ‘হে আল্লাহ! তুমি আমাকে মিসকিনরূপে জীবিত রাখো, মিসকিনরূপে মৃত্যুদান করো এবং মিসকিনদের দলভুক্ত করে হাশরের ময়দানে উত্থিত করো। ’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪১২৬)

অভাব-অনটন ও দারিদ্র্য যখন আমাদের টুঁটি চেপে ধরে, তখন আমাদের অনেকের কাছে মনে হয়, আল্লাহ মনে হয় আমাদের ওপর সন্তুষ্ট নন। নাউজুবিল্লাহ। এমনটা ধারণা করা ঠিক নয়। সর্বদা আল্লাহর ওপর সুধারণা করতে হবে, আল্লাহর রহমতের আশা করতে হবে। যেকোনো পরিস্থিতিতে আল্লাহর ওপর ভরসা করতে হবে, ইনশাআল্লাহ মহান আল্লাহ এই কষ্টগুলোর প্রতিদান বহুগুণ বাড়িয়ে দেবেন। দারিদ্র্যের সময় ধৈর্যধারণের পুরস্কার জান্নাত। ইমরান ইবনে হুসাইন (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, ‘আমি জান্নাতের অধিবাসী সম্পর্কে জ্ঞাত হয়েছি। আমি জানতে পারলাম, জান্নাতের বেশির ভাগ অধিবাসী হবে দরিদ্র। জাহান্নামিদের সম্পর্কে জ্ঞাত হয়েছি, আমি জানতে পারলাম, এর বেশির ভাগ অধিবাসী নারী। ’ (বুখারি, হাদিস : ৩২৪১)

শুধু তা-ই নয়, মহানবী (সা.)-এর ভাষ্য মতে, দরিদ্র (খাঁটি) ঈমানদার ব্যক্তি মহান আল্লাহর কাছে পৃথিবীর সব (অবিশ্বাসী কিংবা দুর্বল ঈমানের অধিকারী) ধনীদের চেয়ে বেশি মর্যাদার অধিকারী।

সাহল (রা.) বলেন, এক ব্যক্তি রাসুল (সা.)-এর কাছ দিয়ে অতিক্রম করছিল। তখন তিনি (সাহাবিদের) বলেন, তোমাদের এর সম্পর্কে কী ধারণা? তাঁরা উত্তর দিলেন, ‘যদি কোথাও কোনো মহিলার প্রতি এ লোকটি বিয়ের প্রস্তাব দেয়, তার সঙ্গে বিয়ে দেওয়া যায়। যদি সে সুপারিশ করে, তাহলে সুপারিশ গ্রহণ করা হয়, যদি কথা বলে, তবে তা শোনা হয়। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর মহানবী (সা.) চুপ করে থাকলেন। এরপর সেখান দিয়ে একজন গরিব মুসলিম অতিক্রম করতেই রাসুল (সা.) তাদের জিজ্ঞেস করেন, এ ব্যক্তি সম্পর্কে তোমাদের কী ধারণা? তারা জবাব দিলেন, যদি এ ব্যক্তি কোথাও বিয়ের প্রস্তাব করে, তার সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয় না। যদি কারো জন্য সুপারিশ করে, তবে তা গ্রহণ করা হয় না। যদি কোনো কথা বলে, তবে তা শোনা হয় না। তখন রাসুল (সা.) বলেন, দুনিয়াভর্তি ওই ধনীদের চেয়ে এ দরিদ্র লোকটি উত্তম। ’ (বুখারি, হাদিস : ৫০৯১)

তাই অভাব-অনটনের দিনে হতাশ না হয়ে ধৈর্যধারণ করা উচিত। এবং মহান আল্লাহর দরবারে এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তির জন্য বেশি বেশি দোয়া করা উচিত। ইনশাআল্লাহ এর বিনিময়ে মহান আল্লাহর সাহায্যও আসবে এবং সাময়িক কষ্টের প্রতিদানও পাওয়া যাবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top