সকল মেনু

নবীজি (সা.) নিয়মিত সুরমা ব্যবহার করতেন

হটনিউজ ডেস্ক:

শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের যত্ন নেওয়া মহানবী (সা.)-এর সুন্নত। মহানবী (সা.) নিজেও তাঁর বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের যত্ন নিতেন। তার মধ্যে চোখ অন্যতম। এটি মহান আল্লাহর দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ একটি নিয়ামত।

কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে এটিকে হিদায়াত, ঈমান গ্রহণ, উপদেশ ও শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যম হিসেবে প্রচার করা হয়েছে। সুরা বালাদের ৮ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি কি তোমাদের চক্ষু দিইনি?’
চোখ আল্লাহর সূক্ষ্ম কারিগরির একটি নিদর্শন। কোনো বস্তু দেখার জন্য মুহূর্তের মধ্যে আমাদের চোখ ও মস্তিষ্কে কত কিছু ঘটে যায়, সেটা অনুমানের অতীত। আমাদের চোখ ঠিকভাবে কাজ করার জন্য তাতে ব্যবহার করা হয়েছে প্রায় ২০ লাখ ক্ষুদ্র পার্টস।

আমাদের চোখের গঠন এতটাই জটিল যে সেটা মাঝেমধ্যে কল্পনাকে হার মানায়। চোখের কার্যপদ্ধতি অনেকটা ক্যামেরার পদ্ধতির মতোই। বলা যায় চোখই পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ ক্যামেরা। আধুনিক যুগের ক্যামেরার সঙ্গে চোখের তুলনা করতে গেলে দেখা যায়, মানুষের চোখ ৫৭৬ মেগাপিক্সেল। এর ফলে আমরা চোখ দিয়ে প্রায় এক কোটি রং আলাদাভাবে দেখতে পাই। চোখের পাতা কাজ করে ক্যামেরার শাটারের মতো। চোখের ভেতরে আছে স্থিতিস্থাপক লেন্স, যা দর্শনীয় বস্তুকে ফোকাস করে এবং তারপর প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে একসময় তা আমরা দেখতে পাই। এই প্রক্রিয়াকরণ চলে কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই।

মহান আল্লাহর এই অমূল্য নিয়ামতের পরিচর্যা করা সবার দায়িত্ব। মহানবী (সা.) তাঁর চোখের যত্ন নিতেন। তিনি নিয়মিত চোখে সুরমা ব্যবহার করতেন।

উল্লেখ্য, অনেকের ধারণা সুরমা তুর পাহাড়ে পাওয়া যায়। হজরত মুসা (আ.) যখন তুর পাহাড়ে আল্লাহকে স্বচক্ষে দেখতে চেয়েছিলেন তখন আল্লাহর তাজাল্লিতে পাহাড় ভস্ম হয়ে গিয়েছিল। সেই ভস্মীভূত পাহাড় থেকেই সুরমার উৎপত্তি ও ব্যবহার—এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা।

সুরমা একটি খণিজ দ্রব্য। এর সঙ্গে তুর পাহাড়ের কোনো সম্পর্ক নেই। বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা হয়, অ্যান্টিমনি। অ্যান্টিমনি হলো একটি মৌলিক পদার্থ। এটি একটি চকচকে ধূসর ধাতুকল্প, এটি প্রকৃতিতে মূলত সালফাইড খনিজ স্টিবনেট হিসেবে পাওয়া যায়। অ্যান্টিমনি যৌগগুলো প্রাচীনকাল থেকেই পরিচিত ছিল এবং গুঁড়া করে চিকিৎসাক্ষেত্রে ও প্রসাধনীতে ব্যবহার করা হতো। এটিকে প্রায়ই আরবি কাজল নামে ডাকা হতো।

ইবনে আব্বাস (রা.) আরো বলেন, ‘রাসুল (সা.)-এর একটি সুরমাদানি ছিল। প্রত্যেক রাতে (ঘুমানোর আগে) ডান চোখে তিনবার এবং বাম চোখে তিনবার সুরমা লাগাতেন। ’ (সুনানুল কুবর লিল ইমাম বাইহাকী , হাদিস : ৮৫১৬)

চোখের যত্নে তিনি সুরমাকে এতটাই গুরুত্ব দিতেন যে সাহাবায়ে কেরামকে তিনি এটি লাগানোর ব্যাপারে উৎসাহ দিতেন। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা সাদা কাপড় পরিধান করো এবং তা দিয়ে তোমাদের মৃতদের কাফন পরাও। কেননা তা তোমাদের উত্তম পোশাক। আর তোমাদের জন্য উত্তম সুরমা হলো ‘ইসমিদ’ সুরমা। কারণ তা দৃষ্টিশক্তি বাড়ায় এবং চোখের পাপড়ি গজায়। ’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৮৭৮)

চোখের পাপড়ি মানুষের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। শুধু সৌন্দর্যবর্ধনই করে না, ধুলা-দূষণ ও বাতাস থেকে আমাদের চোখের সুরক্ষায় ঢাল হিসেবেও কাজ করে। অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ ও মানুষের মুখভঙ্গি বুঝতেও চোখের পাপড়ির প্রভাব রয়েছে। জার্নাল দ্য রয়াল সোসাইটি ইন্টারফেস সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদন মতে, বাতাসে মিশে থাকা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণা, সংক্রামক জীবাণু, অণুজীব ছাঁকার কাজ করে চোখের পাপড়ি। এরপর ছাঁকনকৃত বাতাস চোখের ভেতর প্রবাহিত হতে সাহায্য করে। এ ছাড়া অক্ষিগোলকে মিউকাস, তেল ও পানির সংমিশ্রণে যে তরল প্রলেপ থাকে, সেটা শুকিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করে চোখের পাপড়ি। ফলে চোখ শুকিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা পায়।

তাই আমাদের উচিত চোখের যত্নে মহানবী (সা.)-এর এই সুন্নতটি পালন করা। এতে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টিও পাওয়া যায় এবং চোখের সুরক্ষাও পাওয়া যাবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top