সকল মেনু

সরকারের সাফল্য অনেক, প্রচার নেই -প্রধানমন্ত্রী

image_741 স্টাফ করেসপন্ডেন্ট,হটনিউজ২৪বিডি.কম,ঢাকা:  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।  বর্তমান সরকারের সময়ে শিক্ষা, বিদ্যুৎ, বৈদেশিক কর্মসংস্থান, সামজিক নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন হলেও তা প্রচারে তেমন তোড়জোড় নেই। এই সাফল্য প্রচারে তাগাদা দিয়েছে মন্ত্রিসভা। সোমবার সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে ২০১২-১৩ অর্থ বছরের কার্যাবলী সম্পর্কিত বার্ষিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইঞা জানান, যেভাবে উন্নয়ন হয়েছে সেভাবে তা প্রচার হয়নি, অর্জিত সাফল্য প্রচারে উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, গত অর্থ বছরের তুলনায় ২০১২-১৩ অর্থ বছরে মাথাপিছু আয়, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স, আমদানি-রপ্তানি এবং রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রার পরিমাণও বৃদ্ধি পেয়েছে।

গত বছরের জুলাই থেকে এ বছরের জুন পর্যন্ত বিভিন্ন উন্নয়নসূচির ফিরিস্তিও তুলে ধরেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। তিনি জানান, ২০১২-১৩ অর্থবছরে রপ্তানি আয় ২৭০২৭ দশমিক ৩৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়, যা আগের অর্থবছরের রপ্তানি আয়ের তুলনায় ২৭২৫ দশমিক ৪৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বেশি। ‘পণ্যের বহুমুখীকরণ, সরকারের বাস্তবমুখী পদক্ষেপ ও প্রণোদনা প্যাকেজ প্রদান এবং রপ্তানিকারকদের নিরলস প্রচেষ্টার ফলে’ এ সাফল্য বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। ২০১২-১৩ অর্থবছরে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের পরিমাণ ছিল ১৪৪৬০ দশমিক ৫২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। গত অর্থবছরের তুলনায় প্রবাসী আয় ১২ দশমিক ৫৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৪৪ লাখ ১ হাজার ৩০১ জন বাংলাদেশির বিদেশে কর্মসংস্থান হয়েছে। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে ২ হাজার জনের বেশি ‍বিদেশগামী কর্মীকে প্রায় ২০ কোটি টাকা অভিবাবসন ‍ঋণ প্রদান করা হয় এবং বিদেশ ফেরত ৫০ জন কর্মীকে ৮৬ লাখ টাকা ঋণ প্রদানের মাধ্যমে আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১৫৩১৫ দশমিক ২৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়, যা আগের বছরের তুলনায় ৪৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ বেশি। প্রতিবেদন মতে গত অর্থবছরে সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগের পরিমাণ ২৭৪ দশমিক ৫৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১২-১৩ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে মূল উন্নয়ন বরাদ্দ মোট ৫২ হাজার ৩৬৬ কোটি টাকার মধ্যে ব্যয় হয়েছে ৫০ হাজার ৩০ কোটি টাকা, যা সংশোধিত বরাদ্দের ৯৬ শতাংশ। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগের আওতায় সমাপ্তিযোগ্য ২৭৫টি প্রকল্পের মধ্যে ১৯৫টি প্রকল্প সমাপ্ত হয়েছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি দারিদ্র বিমোচন ও সামাজিক উন্নয়নে সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ২০১২-১৩ অর্থবছরে বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী খাতে ২৫,৩৭১.৩৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়, যা জাতীয় বাজেটের ১১ দশমিক ৪০ শতাংশ এবং জিডিপির ২.১৩ শতাংশ। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, কৃষিখাতে ভর্তুকি, কৃষি গবেষণা ও কৃষি পুনর্বাসন সহায়তা প্রদান এবং সর্বোপরি প্রান্তিক ও প্রাকৃতিক রোগে ক্ষতিগ্রস্ত, বিশেষত জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিপূর্ণ উপকূলীয় এলাকায় কৃষকদের দেওয়া বিভিন্ন প্রকার সহায়তা প্রদানের ফলে কৃষি ও খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিবেদনাধীন অর্থবছরে কৃষিপণ্যের প্রকৃত উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় এবং ২০১১-১৩ অর্থবছরের তুলনায়ও বৃদ্ধি পেয়েছে।  ‘রুপকল্প ২০২১’ তথা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শুরু করে সকল স্তরের মানুষের কাছে বিভিন্ন ই-সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগ/সংস্থা তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে জনগণকে সেবা প্রদানের প্রচেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এরই অংশ হিসাবে ‘বেসিক আইসিটি স্কিল ট্রান্সফার আপ টু উপজেলা লেভেল’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় এক হাজার ২৬০ জন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষক এবং প্রায় ৭০ হাজার শিক্ষার্থীকে সিলেবাস অনুযায়ী প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, সারাদেশে প্রথম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত তিন কোটি ৬৮ লাখ শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে ২৬ কোটি ১৭ লাখ ৭৪ হাজার বই বিতরণ করা হয়েছে। ২০১২-১৩ অর্থবছরে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে স্নাতক পর্যায়ে মোট ৪৩ দশমিক ৭৮ লাখ শিক্ষার্থীকে ৬৭৫ কোটি টাকা উপবৃত্তি ও অন্যান্য সুবিধা দেয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ সঙ্কট মোকাবিলায় ২০১২-১৩ অর্থবছরে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ছয় হাজার ৮০০ মেগাওয়াট। বিপরীতে সর্বোচ্চ উৎপাদন ছিল ছয় হাজার ৪৩৪ মেগাওয়াট, যা আগের অর্থবছরের সর্বোচ্চ উৎপাদনের (ছয় হাজার ৬০০ মেগাওয়াট)এর তুলনায় ২০০ মেগাওয়াট বেশি। সরকারি খাতে ২০১২-১৩ অর্থবছরে প্রায় দুই হাজার ২৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ১৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণের জন্য চুক্তি সই হয়েছে। এর মধ্যে ৪৯০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ছয়টি বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু করা হয়। ২০১২-১৩ অর্থবছরে বাংলাদেশে আগত পর্যটকের সংখ্যা ছিল দুই লাখ চার হাজার ৫৩১ জন। বিগত বছরে এ সংখ্যা ছিল দুই লাখ দুই হাজার ১২৫ জন। বাণিজ্যিকভিত্তিতে পরিচালিত প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে ৬৭টি প্রতিষ্ঠান থেকে মোট লাভের পরিমাণ ১০,৭৩৮.২১ কোটি টাকা। সর্বোচ্চ লাভজনক প্রতিষ্ঠান অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড। লাভের পরিমাণ ১২১২.০২ কোটি টাকা। ২০১২-১৩ অর্থবছরে জনসংখ্যা বৃদ্ধির শতকরা হার ১ দশমিক ৩৬, যা আগের তুলনায় (০.০১ ভাগ) কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। ১২-১৩ অর্থ বছরে ২৫টি মন্ত্রণালয়ে জেন্ডার সংবেদনশীল বাজেট প্রণয়ন করা হয় বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। image_741আগে এই প্রতিবেদন গোপন থাকলেও বর্তমানে তা প্রকাশ করা হচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব সরকারের উন্নয়নচিত্র প্রচারে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। ছবি: পিআইডি

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top