সকল মেনু

মহানবী (সা.)-এর আনন্দঘন মুহূর্ত যেমন ছিল

হটনিউজ ডেস্ক:

হাসি-কান্না মানুষের স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য। সুখের দিনে বা কারো সাক্ষাতে হাসতে ইসলামে বারণ নেই। মহানবী (সা.)-ও মাঝেমধ্যে হাসতেন; তবে অট্টহাসি ও অধিক হাসি ইসলামের দৃষ্টিতে নিন্দনীয়। আবদুল্লাহ ইবনুল হারিস ইবনু জাজয়ি (রা.) বলেন, রাসুল (সা.)-এর চেয়ে বেশি মুচকি হাসি দিতে আমি আর কাউকে দেখিনি। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৬৪১)

আজকে আমরা প্রিয় নবী (সা.)-এর হাসি সম্পর্কিত কয়েকটি ঘটনা তুলে ধরার চেষ্টা করব, ইনশাআল্লাহ।

সুরা কাউসার অবতীর্ণ হলে : আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন, ‘একবার আমরা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মজলিসে উপস্থিত ছিলাম। হঠাৎ তাঁর ওপর অচৈতন্য ভাব চেপে বসল। অতঃপর তিনি মুচকি হেসে মাথা তুললেন। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, আপনার হাসির কারণ কী? তিনি বলেন, এ মাত্র আমার ওপর একটি সুরা অবতীর্ণ হয়েছে।’ (মুসলিম, হাদিস : ৭৮০) এবং তিনি সুরা কাউসার পাঠ করেন।

সাহাবায়ে কেরামের সঙ্গে রাসুলের হাসি : প্রিয় নবী (সা.) সাহাবায়ে কেরামের সঙ্গে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করতেন। আবদুল্লাহ ইবনে কাব (রহ.) বলেন, আমি আমার পিতা কাব ইবনে মালিক (রা.)-কে তার তাবুক যুদ্ধে না যাওয়ার ঘটনা বর্ণনা করতে শুনেছি। তিনি বলেন, আমি নবী (সা.)-কে সালাম করলাম, খুশি ও আনন্দে তাঁর চেহারা ঝলমল করে উঠল। তাঁর চেহারা এমনিই আনন্দে টগবগ করত। মনে হতো যেন চাঁদের একটি টুকরা। তাঁর মুখমণ্ডলের এ অবস্থা হতে আমরা তা বুঝতে পারতাম।’ (বুখারি, হাদিস : ৩৫৫৬)

মুসলমানদের বিজয়ের সুসংবাদ পেয়ে : আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) একদিন তার ঘরে গেলে তাঁকে খাবার খাওয়ালেন। এরপর রাসুল (সা.) সেখানেই ঘুমালেন। কিছুক্ষণ পর তিনি সজাগ হয়ে হাসতে লাগলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল (সা.), আপনাকে কিসে হাসাচ্ছে? তিনি বলেন, স্বপ্নে আমাকে আমার উম্মতের আল্লাহর পথে জিহাদকারী কিছুসংখ্যক মুজাহিদ দেখানো হয়েছে, যারা এই বিস্তীর্ণ সমুদ্রের মধ্যে বাদশাহদের মতো সিংহাসনে আসীন। (বুখারি, হাদিস : ৬২৮২)

এক ইহুদির কথা শুনে : আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, কিয়ামতের দিন সারা জগৎ একটি রুটি হয়ে যাবে। আর আল্লাহ জান্নাতিদের মেহমানদারির জন্য তাকে হাতের মধ্যে নিয়ে এমনভাবে উল্টাপাল্টা করবেন। যেমন তোমাদের মধ্যে কেউ সফরের সময় তাড়াহুড়া করে এ হাতে সে হাতে নিয়ে রুটি প্রস্তুত করে। এমন সময় এক ইহুদি এসে বলল, হে আবুল কাসিম, দয়াময় আপনার ওপর বরকত প্রদান করুন। কিয়ামতের দিন জান্নাতবাসীদের মেহমানদারি সম্পর্কে আপনাকে কি জানাব না? তিনি বলেন, হ্যাঁ। লোকটি বলল, (সে দিন) দুনিয়াটা একটি রুটি হয়ে যাবে। যেমন নবী (সা.) বলেছিলেন (লোকটিও তেমনি বলল)। তখন নবী (সা.) আমাদের দিকে তাকালেন এবং হাসলেন। এমনকি তাঁর চোয়ালের দাঁত গুলো প্রকাশিত হলো।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৫২০)

সাহাবির সরলতা দেখে : আবদুল্লাহ ইবনে মুগাফফাল (রা.) বলেন, ‘আমি খাইবার যুদ্ধের সময় চর্বিভর্তি একটি চামড়ার থলে পেলাম। আমি তা তুলে নিলাম এবং বললাম, এর থেকে আমি কাউকে কিছু দেব না। তিনি বলেন, আমি হঠাৎ পেছন ফিরে রাসুল (সা.)-কে দেখতে পেলাম, (আমার কথা শুনে) তিনি মৃদু হাসছেন।’ (মুসলিম, হাদিস : ৪৪৯৬)

শিশু খাদেমের সঙ্গে : আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে আছে, রাসুল (সা.) একবার তাঁকে কোনো এক কাজে পাঠিয়েছিলেন; কিন্তু তিনি পথে বাজারে খেলাধুলারত বালকদের সঙ্গে খেলায় লিপ্ত হয়ে যান। হঠাৎ পেছন দিক থেকে রাসুল (সা.) এসে তাঁর ঘাড়ে হাত রাখেন। পেছন দিকে ফিরে তিনি দেখতেন পান, রাসুল (সা.) হাসছেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৭৭৩)

স্ত্রীর সঙ্গে রাসুলের হাসিমাখা মুহূর্ত : আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) তাবুক অথবা খায়বারের যুদ্ধ থেকে প্রত্যাবর্তন করলেন। ঘরের তাকের ওপর পর্দা ঝোলানো ছিল। বায়ু প্রবাহের ফলে তার এক পাশ সরে যায়, যাতে তার খেলার পুতুলগুলো দৃশ্যমান হয়ে পড়ে। তিনি (সা.) পুতুলগুলো দেখে বলেন, হে আয়েশা, এগুলো কী? জবাবে তিনি বলেন, এগুলো আমার মেয়ে। আর তিনি এগুলোর মধ্যে কাপড়ের তৈরি দুই ডানাবিশিষ্ট একটি ঘোড়াও দেখতে পেলেন। তিনি প্রশ্ন করলেন, এগুলোর মধ্যে ওটা কী দেখতে পাচ্ছি? তিনি বলেন, ঘোড়া। তিনি (সা.) বলেন, তার ওপর আবার ওটা কী? তিনি বলেন, দুটি পাখা। তিনি বলেন, এ আবার কেমন ঘোড়া, যার পাখা আছে! আমি বললাম, আপনি কি শুনেননি যে সুলাইমান (আ)-এর ঘোড়ার কয়েকটি পাখা ছিল! আয়েশা (রা.) বলেন, এ কথা শুনে রাসুল (সা.) হেসে দিলেন, যাতে আমি তাঁর সামনের সারির দাঁত দেখতে পেলাম।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯৩২)

ইন্তেকালের দিন রাসুল (সা.)-এর হাসি : আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, মুসলমানরা সোমবার [রাসুল (সা.)-এর ওফাতের দিন] ফজরের নামাজে ছিলেন, আবু বকর (রা.) তাঁদের নিয়ে সালাত আদায় করছিলেন। নবী (সা.) আয়েশা (রা.)-এর হুজরার পর্দা সরিয়ে তাঁদের দিকে তাকালেন। তখন তাঁরা সারিবদ্ধ ছিলেন। তা দেখে তিনি মৃদু হাসলেন।’ (বুখারি, হাদিস : ১২০৫) হাদিসের শেষাংশে আছে, ওই দিনই নবীজির ইন্তেকাল হয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top